দিনাজপুরে রঙিন ফুলকপি – বাঁধাকপিতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চান মারুফা-ছামিদুল দম্পতি


দিনাজপুর প্রতিনিধিঃকাইল সকালে বাজারত আইসেন। খালি পাঁচ মিনিট দাঁড়ায় থাকিবেন। কাস্টমারের(ক্রেতার) মুখে মালের দাম শুনিয়া মাথাটা ঘুরি যাবে। পাইকার দাম কহেছে তিন টাকা পিচ, দুই টাকা পিচ। মন মেজাজ ভালো নাই ভাই। সকালে মাল নিয়া বাজারত গেইলে মাথাটা হ্যাং হই যাছে। ভাগ্য ভালো চার হাজার পিস রঙিন ফুলকপির চারা লাগাইছিলাম। এখন দেখি সেটা দিয়ে যদি লোকসান কিছুটা কমানো যায়। কথাগুলো বলছিলেন দিনাজপুর সদর উপজেলার পার দিঘন গ্রামের ছামিদুল ইসলাম(৪৫)। বাড়ির অদূরে গর্ভেশ্বরী নদীর বাঁধের পাড়ে দুই বিঘা জমিতে এবার সবজি চাষ করেছেন তিনি। যাতে হোয়াইট স্টোন(সাদা রং), ভ্যালেন্টিনা(গোলাপি রং), প্যারোট(সবুজ রং), ক্যারোটিনাসহ(হলুদ রং) মোট চার প্রকারের ফুলকপি এবং ব্রোকলি, চাইনিজ ক্যাবেজ, রেড ক্যাবেজ ও সাধারণ বাঁধাকপিসহ মোট ১৪ হাজার চারা লাগিয়েছন। একই সময়ে বাজারজাত করার উপযোগী হয়েছে ছামিদুলের উৎপাদিত সবজি। প্রায় প্রতিদিন সকালে দিনাজপুর শহরের বাহাদুর বাজারে সবজি বিক্রি করতে আসেন তিনি। কিন্তু বাজারে পণ্যের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় ছামিদুলের কণ্ঠে এখন আফসোসের আভাস।
ছামিদুল জানান, দুই বিঘা জমি এক বছরের জন্য বর্গা নিয়েছি ৬০ হাজার টাকায়। জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলকপি, বাঁধাকপি, আলু, রসুন, টমোটো লাগিয়েছি। ১৪ হাজার পিচ কপির চারা লাগিয়েছি। এরমধ্যে ৪ হাজার পিচ রঙিন ফুলকপি-বাঁধাকপির চারা স্থানীয় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মহিলা বহুমুখী শিক্ষা কেন্দ্র (এম বি এস কে) থেকে বিনামূল্যে পেয়েছেন। অবশিষ্ট চারাগুলো। প্রতি পিচ কিনতে হয়েছে ১টাকা ৮০পয়সা দরে মোট ১৮হাজার টাকায়। এরপর জমি প্রস্তুত, সার, কীটনাশক, শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। প্রতি পিচ কপি যদি ১০টাকাও দাম পেতাম অন্তত আসলটা উঠে আসতো। কিন্তু বাজারে এখন প্রতি পিছ দেশি কপি বিক্রি করছি ৫-৬ টাকায়। তবে রঙিন ফুলকপিটার দাম ১৫-২০টাকা পেয়েছি। সেটা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।’রঙিন ফুলকপিটা না লাগালে মাঠে মারা যেতাম।বৃহস্পতিবার দুপুরে পারদিঘন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় ছামিদুল-মারুফা দম্পতির খেত থেকে বিক্রির জন্য কপি তুলছেন ছামিদুলের স্ত্রী মারুফা আক্তার(৩৯)। শুক্রবার ভোরে সেই কপি নিয়ে বাহাদুর বাজার আড়তে বিক্রি করবেন ছামিদুল। ছেলেমেয়ের দেখাশুনা, ঘর গৃহস্থালীর কাজকর্মের পাশাপাশি স্বামীর সাথে দিনের অধিকাংশ সময় খেতে কাজ করেন মারুফা। উৎপাদিত পণ্যের ভালো দাম না পেলেও মুখে হাসি নিয়ে মারুফা বলেন, ’বিয়ের পর থেকে স্বামীর সাথে কৃষিকাজ সহযোগিতা করে আসছি। গেলবার একেকটি রঙিন ফুলকপি প্রতিপিচ ৫০টাকা পর্যন্ত দাম পাইছি। এইবার শুরু থেকেই সবজির দাম কম। লোকসান হবে। তবে রঙিন ফুলকপি আর টমেটোর যত্ন নিচ্ছি। সেগুলো দিয়ে যদি ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়।’শহরের বাহাদুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, রাস্তার উপরে উৎপাদিত পণ্য বিক্রির জন্য আনছেন কৃষকরা। আলাপকালে সদর উপজেলার কৃষাণবাজার এলাকার কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, ‘৬০পিচ ফুলকপি আর ৪০পিচ বাঁধাকপি আনছি। ফুলকপির দাম পেলাম প্রতি পিচ ৫টাকা আর বাঁধাকপি দাম পাইছি ৬টাকা। ৩০০মিটার দূরত্বেই খুচরা বাজারে প্রতিপিচ ফুলকপি(দেশী) বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫টাকা, রঙিন ফুলকপি প্রতিপিচ ৩৫-৪০টাকা এবং বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা দরে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলায় এবার বাঁধাকপির চাষ হয়েছে ২ হাজার ৯৯ হেক্টর জমিতে এবং ফুলকপির চাষ হয়েছে ২ হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমিতে।