নির্দেশনা না মানলে পদ্মা সেতুতে ফের মোটরসাইকেল বন্ধ: সেতুমন্ত্রী
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : নিয়ম বহির্ভূতভাবে চলাচলের কারণে অচলাবস্থা তৈরি হলে আবারও পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
বৃহস্পতিবার (২০ এপ্রিল) ঈদযাত্রাকে কেন্দ্র করে পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা পরিদর্শন করে এ কথা বলেন তিনি।
মোটরসাইকেল চালকদের উদ্দেশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আশা করি সবাই নিয়ম মেনে চলাচল করবেন। যদি নিয়ম বহির্ভূতভাবে মোটরসাইকেলে চলাচলের কারণে অন্যান্য যানবাহনের অসুবিধা হয় তাহলে আবারও পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল বন্ধ করা হবে।’
পদ্মা সেতুতে নিয়ম মেনে চলাচল করলে সব সময়েই মোটরসাইকেল চলাচল খোলা থাকবে বলেও জানান তিনি।
সেতুমন্ত্রী বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঈদ উপহার। নিয়ম মেনে চলাচল করলে সবসময়ই পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল খোলা থাকবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু জাতির সম্পদ। এই সম্পদ সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার করা প্রত্যেক নাগরিকের অবশ্যই করণীয় কর্তব্য। যদি পদ্মা সেতুতে চলাচলে অন্যান্য যানবাহন চলাচলের সংকট হয়, কোনো কারণে অচলাবস্থা হয়- কারও অপব্যবহারের জন্য অথবা কারও নিয়ম-নীতি না মেনে চলার জন্য, পদ্মা সেতু আবারও বাইক চলাচলের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
আজ থেকে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল শুরুর প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, সকাল থেকে যে শৃঙ্খলাবোধের পরিচয় আমাদের বাইকাররা দিচ্ছেন, তাতে আমরা সবাই খুশি। আমি আশা করি, এই ধারা অব্যাহত থাকবে।
এদিকে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে সকাল ৬টা থেকে সার্ভিস লেনে মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে। সকালে জাজিরা টোল প্লাজার ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন বলেন, ছয় শর্তে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। পদ্মা সেতুর নির্ধারিত সার্ভিস লেন দিয়ে এসব মোটরসাইকেল চলাচল করছে। সকাল থেকেই মোটরসাইকেল চালকরা পদ্মা সেতুতে আসা শুরু করে। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মোটরসাইকেলের লাইন দীর্ঘ হতে থাকে। এটির চলাচল সুবিধার জন্য সেতুর উভয় প্রান্তের টোল প্লাজায় আরও তিনটি লেন বাড়ানো হয়েছে।
এর আগে, মঙ্গলবার (১৮ এপ্রিল) আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। এজন্য চালকদের কিছু শর্ত বেঁধে দেয়া হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্ধারিত টোল দিয়ে মোটরসাইকেল সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হতে পারবে। এর জন্য নির্ধারিত টোলবুথ ও নির্ধারিত লেন ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই নির্ধারিত লেন পরিবর্তন করা যাবে না। ওভারটেকও করা যাবে না। চালক ও আরোহীকে হেলমেটসহ প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা সামগ্রী ব্যবহার করতে হবে। কোনো অবস্থাতেই সেতুর ওপর দাঁড়ানো বা ছবি তোলা যাবে না। চালকসহ সর্বোচ্চ দুজন মোটরসাইকেলে চড়তে পারবেন।
বর্ণিত শর্তসমূহ প্রতিপালন করে পদ্মা সেতু ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে। শৃংখলা না মানলে মোটরসাইকেল চলাচলের এ সুযোগ বাতিল করা হবে বলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
গত বছরের ২৫ জুন উদ্বোধন করা হয় স্বপ্নের পদ্মা সেতু। পরদিন ২৬ জুন যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। তারপর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
পরদিন এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২৭ জুন সকাল ৬টা থেকে পুনরায় আদেশ না দেয়া পর্যন্ত পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরে এ গণবিজ্ঞপ্তি নিয়ে রিট করা হয়। পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ কেন বেআইনী হবে না, সে বিষয়ে রুল চাওয়া হয় রিটে। রুল হলে বিচারাধীন অবস্থায় এ বিষয়ে অনুসন্ধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রিটে নির্দেশনাও চাওয়া হয়।
পরে এবছর ১৫ জানুয়ারিতে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের বিরুদ্ধে করা ওই রিটের শুনানি আট সপ্তাহের জন্য মুলতবি করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে রিট আবেদনটি ২৯ মার্চ আবার কার্যতালিকায় এলে আরও চার সপ্তাহের জন্য সেটি মুলতবি করা হয়।