বাল্যবিবাহ ঠেকানোয় কিশোরীর আত্মহত্যা
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : চুয়াডাঙ্গা দামুড়হুদায় ডুগডুগি গ্রামে উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়ে বাল্যবিবাহ বন্ধের দুই দিন পর কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। শনিবার (৪ মে) বিষপান করে অঞ্জনা খাতুন সুইটি (১৪) নামের ওই কিশোরী আত্মহত্যা করে। সুইটি দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগি গ্রামের আমির হোসেনের মেয়ে ও লোকনাথপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। চার ভাই-বোনের মধ্যে অঞ্জনা ছিল সবার ছোট। আর ছেলে সৌমিক (১৭) মোটর গ্যারেজ কর্মচারী । জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার (২ মে) ডুগডুগি গ্রামে কিশোরীর বাবা আমির হোসেনের বাড়ি গিয়ে বাল্যবিবাহের আয়োজন বন্ধ করে দেন উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় আমির হোসেনের থেকে ৮ হাজার টাকা জরিমানাসহ কনের বয়স না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেওয়া যাবে না মর্মে মুচলিকা নেওয়া হয়। এ ঘটনার দুই দিন পর শনিবার (৪ মে) কিশোরীর পরিবারের পক্ষ থেকে আবারো বিয়ের আয়োজন করা হয়। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা কিশোরীর মেজো বোনের বাড়িতে প্রশাসনকে আড়াল করে আবার বিয়ের আয়োজন করা হয়। ওই দিন সকালে হঠাৎ করে ছেলে পক্ষকে বিয়ের আয়োজনের বিয়য়টি জানায় কিশোরীর পরিবার। ছেলের বাবা বাড়িতে না থাকায় তারা তাৎক্ষণিক কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এই বিষয়টি নিয়ে মোবাইলে ফোনে ছেলে-মেয়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপরই ওই কিশোরী বিষপান করে। দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা যায়। রোববার (৫ মে) সকালে সরজমিনে দুই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই কিশোর-কিশোরীর মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি দুজনের পরিবার জানাজানি হলে গত বৃহস্পতিবার পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ের আয়োজন করা হয়। দুজনই অপ্রাপ্তবয়স্ক, এমন খবর পেয়ে দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সজল কুমার দাশ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। কনের বাবাকে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং একই সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবে না মর্মে মুচলেকা নেওয়া হয়। কিশোরী অঞ্জনার মা ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুজনের মধ্যে সম্পর্ক ছিল। ছেলে পক্ষ বিয়ে নিয়ে তালবাহানা করত। আমরা গত বৃহস্পতিবার মেয়ের বিয়ের আয়োজন করি। প্রশাসন বিয়ে বন্ধ করে দেয়। পরের দিন শুক্রবার সন্ধ্যায় ছেলে নিজে আমার বাড়িতে এসেছিল। আমরা বলেছিলাম তোমরা অন্য কোথাও থেকে বিয়ে করে আস, এতে যা যা লাগে আমরা দেব। পরদিন শনিবার সকালে ছেলে ফোন করে জিজ্ঞাসাও করল কোথায় যেতে হবে। আমার মেজো মেয়ের বাড়ি আলমডাঙ্গাতে বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে বলে তাকে জানানো হয়। কিন্তু ছেলের বোন বলে, ‘এখন এ বিয়ে হবে না। আপনাদের এতো তাড়াহুড়ো কেন? অন্য জায়গায় বিয়ে দেন। আমার ভাইয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।’ এরপরই ওই ছেলের সঙ্গে কথা বলার পর মোবাইল ফেলে দেয় আমার মেয়ে। তাদের মধ্যে কি কথা হয়েছে আমি শুনিনি। তবে মোবাইল ফেলে আমাকে শুধু- ‘তোরা অন্য জায়গায় আমার বিয়ে দিবিনে, অন্য জায়গায় যদি বিয়ে দিস’ বলে বলে ঘরে চলে যায়। এরপর আমার মেয়ে কখন বিষপান করেছে আমি জানি না। কথা বলার মতো অবস্থায় না থাকায় অঞ্জনার বাবার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। অঞ্জনার ভাই টুটুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার বিয়ের আয়োজন করলে পুলিশ এসে বন্ধ করে দেয়। পরের দিন শুক্রবার পুনরায় বিয়ের কথা ছিল, তাও হয়নি। শনিবার আলমডাঙ্গায় আমার বোনের বাড়িতে বিয়ের আয়োজন করা হয়। কিন্তু দুপুরে ছেলে আমার বোনের কাছে ফোন করে বলে সে আর বিয়ে করবে না। এ কথা শুনে আমার বোন ফোন ফেলে দিয়ে ঘরের মধ্যে দরজা আটকিয়ে দেয়। ঘরের মধ্যে উকুন মারা বিষ পান করবে তা ভাবতেও পারিনি। বিষয়টি বুঝতে পেরে বোনকে দ্রুত চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর আমার বোনটা মারা যায়। সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত শেষে রোববার (৪ মে) দুপুর ১২টার দিকে কিশোরীর মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ফারহানা পলাশ। চুয়াডাঙ্গা সদর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক নীতিশ বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, মেয়েটি বকাঝকার কারণে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছেন। এ বিষয়ে পাত্র সৌমিকের মা জহুরা বেগম বলেন, বিয়ে ভেঙে দেওয়ার পর ওই মেয়ের পরিবার থেকে আবারো বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকে। গত শনিবার তারা আমার ছেলেকে বিয়ের জন্য ওই মেয়ের বোনের বাড়ি আলমডাঙ্গায় যেতে বলেন। আমার ছেলে বলে, তার বাবা বাড়ি নেই, বাবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব। এ নিয়ে ওই মেয়ের সঙ্গে আমার ছেলের ফোনে কথা কাটাকাটি হয়। পরে শুনছি ওই মেয়ে বিষ পান করেছে।