চিরিরবন্দরে ভোটের যুদ্ধে বিরামহীন প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে লড়াই জমজমাট হয়ে উঠছে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তৃতীয় ধাপে আগামী ২৯ মে অনুষ্ঠিত হবে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। ভোটারদের পক্ষে টানার প্রাণান্তকর চেষ্টায় ব্যস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। তিনটি পদের প্রার্থীরাই প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে সমানতালে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে বিএনপি প্রথম থেকেই মাঠে নেই। ফাঁকা মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরাই একে অন্যের প্রতিদ্বন্দ্বী। নির্বাচন বিশ্লেষকদের মতে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিষয়টি অনুধাবন করে এবার দলীয় প্রতীক না দিয়ে তৃণমূলের জন্য উপজেলা নির্বাচন উন্মুক্ত করা হয়েছে যাতে প্রার্থীর আধিক্যে উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আসন্ন নির্বাচন ঘিরে সাধারণ ভোটারদের আগ্রহে ভাটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। দলীয় প্রতীক না থাকায় প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজেই বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার ক্ষেত্রে ভোটারদের দিকে নজর রাখছেন প্রার্থীরা। চায়ের দোকান থেকে পথঘাট, বাসাবাড়ি, পাড়া-মহল্লা ও অফিসপাড়ায় চলছে নির্বাচনী আলাপ-আলোচনা। কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান, কে ভাইস চেয়ারম্যান, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে কেই-বা এগিয়ে আছেন তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও ভোটের হিসাব-নিকাশ। ভোটাররা বলছেন, এবারের নির্বাচন বিষয়ে আগাম মন্তব্য করা খুব কঠিন। উপজেলায় চেয়ারম্যান পদের নির্বাচনে কোনো প্রার্থীই সুস্পষ্টভাবে এগিয়ে নেই। অল্প ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হতে পারে। তবে চলমান থাকা বোরো মৌসুম ও বিরোধীদলের অংশগ্রহণ না থাকায় নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে নানা মত রয়েছে। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুনীল কুমার সাহা (দোয়াত-কলম), উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিনাজপুর জেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক মুকুল (হেলিকপ্টার), উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান জ্যোতিষ চন্দ্র রায় (মোটরসাইকেল), উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক জেলা পরিষদের সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার (ঘোড়া), সাঁইতাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য (সদ্য বহিষ্কৃত) মো. মোকারম হোসেন শাহ্ (আনারস)। প্রতিদ্বন্দ্বী এসব প্রার্থীর মধ্যে সুনীল কুমার সাহা, অধ্যক্ষ মো. আহসানুল হক মুকুল, জ্যোতিষ চন্দ্র রায় ও মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। নির্বাচনী লড়াইয়ে এই চারজনের কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। এ উপজেলায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি সুমন চন্দ্র দাস (বৈদ্যুতিক বাল্ব), সাংবাদিক মো. জামাল উদ্দিন মুহুরী (তালা), উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন (মাইক)। এছাড়া সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলেন-উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমান চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. লায়লা বানু (প্রজাপতি), উপজেলা আওয়ামী মহিলা লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান তরু বালা রায় (কলস), মোছা. ওয়াজিদা খাতুন বেবি (ফুটবল) এবং পূর্ণিমা মহন্ত ছবি (পদ্মফুল) প্রতীক নিয়ে লড়াই করছেন। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর পোস্টার-লিফলেট হাতে গ্রামে গ্রামে ছুঁটছেন সমর্থকরা। উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লায় চলছে উঠান বৈঠক। মসজিদে নামাজে আসা মুসল্লীদের নিকটও সুযোগ করে দেয়ার সঙ্গে ভোট চাচ্ছেন অনেকে। ভোটারদের মনযোগ আকর্ষণ করতে বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত বিরামহীনভাবে চলছে মাইকিংসহ প্রার্থীদের নিয়ে গান বাজছে মাইকে। সরেজমিন অনুসন্ধানে প্রার্থীদের সমর্থক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ৩ পদে ১২ জন প্রার্থীর কেউ বসে নেই। বসে নেই প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরাও। প্রতীক বরাদ্দের পর থেকেই নির্বাচনী এলাকায় ব্যানার, ফেস্টুন, মাইকিং, পোস্টার, লিফলেট বিতরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, পথসভা, উঠান বৈঠকে ভোটারদের নিকট নিজ নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করছেন প্রার্থীরা। ভোট প্রার্থনায় দৌঁড়াচ্ছেন প্রার্থীদের আতœীয়-স্বজনরাও। একেক গ্রুপের নেতা নির্ধারণ করে ৫-৭ জনের করে দল সাজিয়েছেন। এভাবে প্রত্যেক ইউনিয়নে দিনরাত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুঁটছেন তারা। কারও হাতে পোস্টার, কারো হাতে লিফলেট। ভোটার দেখামাত্র সালাম-আদাব বিনিময় করতে কাছে যাচ্ছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে মতবিনিময় করছেন। অনেককে আবার বুকে জড়িয়ে ধরে দোয়া ও ভোট চাইছেন। নিজের প্রার্থীর গুণকীর্তন আর প্রশংসায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন সকলকে। শেষে আবেগাপ্লুত হয়ে নিজের প্রার্থীর প্রতীকটা দেখিয়ে বলছেন, আপনারা উপজেলার সকল মানুষের সুখ-শান্তির জন্য দয়া করে এই প্রতীকে ভোট দেবেন। ভোটের জন্য সকলেই পছন্দের প্রার্থীর ভালো দিকগুলো মানুষের নিকট তুলে ধরছেন। নিজ প্রার্থীকে উর্ধ্বে তুলতে অনেক সময় একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছেন বাকযুদ্ধে। প্রত্যেক প্রার্থী ও সমর্থকরা ভবিষ্যৎ উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে দেখা মিলছে একাধিক প্রার্থীর কর্মী বাহিনীর। বর্তমানে উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে বইছে নির্বাচনী উত্তাপ। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার বলেন, দলীয় প্রতীক না থাকায় বিএনপি বিহীন নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারাই প্রার্থী। তাই তৃণমূলের নেতারা এই নির্বাচনে চরম বেকায়দায় পড়েছেন। কারণ এক নেতার পক্ষে কাজ করলে আরেক নেতা ক্ষুদ্ধ হন। তাই অনেক নেতাকর্মী নিজেকে নির্বাচনী মাঠ থেকে গোপন রেখেছেন। অনেক আওয়ামী লীগ সমর্থক ও নেতৃবৃন্দ সকল প্রার্থীর মন জয় করে চলেছেন। জয়লাভের বিষয়ে সব প্রার্থীই দৃঢ় আশাবাদী। নির্বাচনী লড়াইয়ে জয় পেতে নারী প্রার্থীরাও পুরুষ প্রার্থীদের মতো মরিয়া হয়ে সমানতালে সক্রিয় প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন। চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা এ এস এম সাইফুর রহমান বলেন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। উপজেলায় ১২টি ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৫৮ হাজার ৩৮৯। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৩০ হাজার ১২৬ জন ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ২৮ হাজার ২৬২ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ১ জন। ৯৫টি কেন্দ্রে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে।