ঘোড়াঘাটে মেয়ের লেখাপড়া নিয়ে চিন্তিত নরসুন্দর বাবা
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ থাকেন ছোট কাকার নির্মাণ করা বাড়িতে। চারিদিকে দারিদ্রতার স্পষ্ট ছাপ। দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট পৌরশহরের বড়গলি এলাকার নরসুন্দর রতন শীলের বড় মেয়ে অন্তরা। স্থানীয় ঘোড়াঘাট কে.সি.পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এবারের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অন্তরা মানবিক বিভাগ থেকে জিপিএ- ৩.৬৭ পেয়েছে। একমাত্র ছোট ভাই অংকুশ ১ম শ্রেণীতে পড়ালেখা করছে। মা নিয়তি রাণী একজন গৃহিণী।
আনুমানিক ১৫ বছর পূর্বে বাবার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। শুরু হয় জীবনের সাথে যুদ্ধ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তাদের বাবা। তিনি প্রতিদিন যা রোজগার করেন তাতে তার ঔষধ কেনার পর পরিবারের চার সদস্যের তিনবেলা ঠিকমতো খাবার জোগানোই কঠিন। তারপর চালাতে হয় তার লেখাপড়ার খরচ। এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর তার পক্ষে নতুন করে মেয়ের খরচ চালানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
অন্তরা বলেন, অন্যের কাছ থেকে বই চেয়ে নিয়ে এবং শিক্ষকদের সহায়তায় খুব কষ্ট করে এপর্যন্ত এসেছি। বাবা নিজেই অসুস্থ। সেলুনে কাজ করে কোন রকম চলছে আমাদের জীবন। তাই বাবার কাছে কোন কিছু আবদার করতাম না। দিতে পারবে না জানি। আর দিতে না পারার কারণে বাবা কষ্ট পাবে। তাই তার কাছে কোন কিছু চাইতাম না। আমার ইচ্ছা, আমি লেখাপড়া করে একটা সরকারি চাকুরি করবো। সে পর্যন্ত যেতে আমাকে অনেক পড়তে হবে। কিন্তু বাবার পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।
বাবা নরসুন্দর রতন শীল বলেন, এবার আমার মেয়ে পাশ করেছে। গরীব মানুষ আমি। ইচ্ছা ছিল মেয়েকে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনার করার। কিন্তু আমি নিজেই অসুস্থ। সারা দিন দোকানে কাজ করে যা আয় করি তা আমার ঔষধ কেনার পেছনে চলে যায়। এখন মেয়ের খরচ কীভাবে চালাবেন সেটা ভেবেই দিশেহারা। শুধু টাকার অভাবে মেয়ের এখন লেখাপড়া বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রতিদিন তিনবেলা তাদের খাবারই জোটবো, নাকি নিজের চিকিৎসা খরচ চালাবো। সমাজের হৃদয়বান ও বিত্তবানরা তাদের পাশে দাঁড়ালে একদিন হয়ত তার মেয়েও সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।
প্রতিবেশী রতন চক্রবর্তী বলেন, মেয়েটি মেধাবী।পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তার বাবা। কিন্তু তার বাবা দীর্ঘদিন মানসিক ও শারীরিক ভাবে অসুস্থ। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে খুব অর্থ কষ্টে দিন কাটছে। মেয়েটি এবার উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে। ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার ইচ্ছা থাকলেও তার বাবার পক্ষে তা সম্ভব নয়। যদি সরকারি কোন সহায়তা পেত তাহলে হয়ত তার পড়াশোনাটা চালিয়ে যেতে পাড়তো।
ঘোড়াঘাট কে.সি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম জানান, অন্তরা এই আমাদের কলেজ থেকে এবার এইচএসসি পাশ করেছে। সে অত্যান্ত বিনয়ী এবং ভালো ছাত্রী ছিল। প্রতিষ্ঠানে অধ্যায়নের সময় সকল নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলেছে ।যেহুতু তার আর্থিক সমস্যা রয়েছে , তাই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে আমরা তাকে সুযোগ সুবিধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ভবিষ্যতে সে যদি আরও অন্য কোন প্রতিষ্ঠান থেকে আর্থিক সহযোগিতা পায় তাহলে সে আরও অনেক ভাল করতে পারবে সুন্দর ভাবে সে তার জীবনটাকে গড়তে পারবে বলে আমরা আশাবাদী।
অন্তরার উচ্চ শিক্ষা নিয়ে ভয় কাঁটালেন ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, অন্তরাকে দেওয়া হবে শিক্ষা সংক্রান্ত সব সহায়তা । তিনি বলেন, আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, তিনি যদি তার পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিব এবং তার খরচ যোগাতে প্রস্তুত আছি।