শুক্রবার, ২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

নোমেনসল্যান্ডের লেবু বাজারে আসায় কমে গেছে স্থানীয় চাষিদের লেবুর দাম, চাষিরা হতাশ

নোমেনসল্যান্ডের লেবু বাজারে আসায় কমে গেছে স্থানীয় চাষিদের লেবুর দাম, চাষিরা হতাশ

এম.মুসলিম চৌধুরী, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে এ মৌসুমে লেবুর দর একেবারে তলানির কোঠায় নেমে আসায় হতাশায় ভোগছেন লেবু চাষিরা। লেবু চাষে সারসহ অন্যান্য খরচ বেড়ে গেলেও কাঙ্খিত মুল্য পাচ্ছেনা লেবু চাষিরা। এতে লেবু চাষে আগ্রহ হারানোর সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

ঢাকার বাজারে এক হালি লেবু ৩০/৪০ টাকা বিক্রি হলেও শ্রীমঙ্গলের আড়তে পাইকারী ৭০ পয়সা থেকে ১টাকা পিস দর পাচ্ছেন চাষিরা। এই সময়ে লেবুর দাম কম থাকার কারণ জানতে গিয়ে জানা যায়, শ্রীমঙ্গলে ভারতীয় সীমান্তের নোম্যানসলেন্ডে ব্যাপক হারে লেবু চাষ হচ্ছে। নোম্যানসল্যান্ডের লেবু বাজারে আসায় স্থানীয় লেবু চাষিদের উৎপাদিত লেবুর চাহিদা কমে গেছে। নোম্যানসলেন্ডের লেবু স্থানীয় লেবুর থেকে সাইজে একটু বড় হয়ে থাকে। এজন্য  স্থানীয় লেবু থেকে নোম্যানসল্যান্ডের লেবুর চাহিদা বেশি।

লেবু ব্যবসায়ী আবু তাহের জানান, মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের লেবুর বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ছয় থেকে সাত লাখ লেবু রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় যেত। হঠাৎ করে সেই চাঙ্গা বাজার পড়ে গেছে। বর্তমানে তা নেমে এসেছে প্রায় ৫০ হাজার থেকে এক লাখের মধ্যে। প্রতি পিস লেবুর দাম আগে ছিল দুই টাকা থেকে পাঁচ টাকা। কিন্তু চলতি মৌসুমে এই সময়ে লেবুর দাম নেমে এসেছে প্রতি পিস ৫০ পয়সা থেকে দেড় টাকায়। ফলে ক্ষতির মুখে পড়েছেন লেবু চাষিরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মৌলভীবাজার জেলার মাটি ও আবহাওয়া লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এ জেলায় ১৭১৯ হেক্টর জমিতে লেবু চাষ হয়ে আসছে। জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জসহ সাত উপজেলার পাহাড়-টিলার মাটি ও আবহাওয়ার কারণে লেবু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি মৌসুমে বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপকহারে কাগজি, চায়না, জারা, পাতি ও কাটা লেবুর উৎপাদন হয়। তবে সবচেয়ে বেশি লেবু উৎপন্ন হয় শ্রীমঙ্গলের পাহাড়ি ও সমতল এলাকায়। লেবু চাষিরা জানান, রোজা মাসে প্রথম দিকে লেবুর ভালো দাম পাওয়া গেলেও শেষ সময় থেকে লেবুর দর নামতে থাকে। এখন লেবু পানির দরে বিক্রি হচ্ছে।

লেবু চাষি ফারুক মিয়া জানান, গাছ থেকে এক গাড়ি (২ হাজার পিস) লেবু সংগ্রহে মজুরি দিতে হয় ৭৫০ টাকা, বাজারে নিয়ে যেতে গাড়িভাড়া এক হাজার টাকা। আমার একগাড়ি লেবু বাজারে তুলতে মোট খরচ হয় এক হাজার ৭৫০ টাকা। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। সিলেট থেকে লেবু কিনতে আসা ব্যবসায়ী রহিম মোল্লা বলেন, গত বছরের পর এবার হঠাৎ লেবুর বাজারে এই পরিবর্তন এসেছে। মূলত দেশের বিভিন্ন জায়গায় লেবুর চাষ বেড়েছে। আগে যেভাবে সারা দেশের লেবুর চাহিদা পূরণ করত শ্রীমঙ্গল। এখন আর সেভাবে নেই। দেশের চাহিদা পূরণ হয়ে যায় অন্যান্য এলাকার লেবু থেকেই। তাই স্থানীয় বাজারে দাম পড়ে গেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ডিডি) সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, আড়তদাররা বেশি লাভের জন্য এখন আর লেবু কিনছে না। ঢাকায় তো ঠিকই লেবুর দাম বেশি। আড়তদারদের হাতেই অনেক কিছু নির্ভরশীল। বাজারদর ওঠানামা করা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তবে চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে ব্যাপারে তারা খেয়াল রেখে সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন