বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ভারত-পাকিস্তানের

শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়াই স্বাধীনতা দিবস উদযাপন ভারত-পাকিস্তানের

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মাত্রই নিজেদের স্বাধীনতা দিবস পালন করেছে ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে মুক্ত হওয়া পাকিস্তানে ১৪ আগস্ট, আর এর পরদিন ভারতে ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হয়। তবে এবার স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বিনিময় না করেই এই দিবস উদযাপন করেছে দক্ষিণ এশিয়ার পরমাণু শক্তিধর এই দেশ দু’টি। উভয় দেশের মধ্যে শান্তি বিরাজকালীন সময়ে এই ঘটনা ঘটল প্রথমবারের মতো। বুধবার (১৬ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শান্তিকালীন সময়ে এই প্রথমবারের মতো ভারত ও পাকিস্তান তাদের নিজ নিজ স্বাধীনতা দিবসে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বিনিময় করেনি। গত সোমবার পাকিস্তানের ৭৬তম স্বাধীনতা দিবস থাকলেও এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছ থেকে কোনও ধরনের অভিনন্দন বার্তা পায়নি শেহবাজ শরিফের সরকার। মূলত গত সোমবারই ছিল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শেহবাজ শরিফের শেষ দিন। একই দিনে পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন আনোয়ারুল হক কাকার। আর মঙ্গলবার ছিল ভারতের স্বাধীনতা দিবস। তবে আগেরদিন ভারত শুভেচ্ছা না জানানোয় এদিন কাকারও স্বাধীনতার বিষয়ে ভারতকে কোনও ধরনের অভিনন্দন বার্তা না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন। দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, পাকিস্তানকে স্বাধীনতা দিবসের আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা না জানানোর পাশাপাশি ভারত আরও একটি ঘটনায় কূটনৈতিক সৌজন্য এড়িয়ে গেছে। আর তা হচ্ছে- পাকিস্তানের নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আনোয়ারুল হক কাকার দায়িত্ব নিলেও কূটনৈতিক রীতি মেনে তাকে শুভেচ্ছা জানায়নি নরেন্দ্র মোদির সরকার। এমনকি কাকারের সরকারে তার দ্বিতীয় দিন কেটে গেলেও নয়াদিল্লি থেকে কোনও বার্তা আসেনি। যদিও নতুন যেকোনও সরকারপ্রধানকে অভিনন্দন বার্তা দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোকে সাধারণ কূটনৈতিক সৌজন্য হিসেবে দেখা হয়। এদিকে পরমাণু শক্তিধর এই দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের নতুন এই ‘প্রবণতা’ সম্পর্কে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দপ্তর কোনও মন্তব্য করেনি। এছাড়া ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র দপ্তর অবশ্য নিশ্চিত করেছে, পাকিস্তান ও ভারত তাদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে কোনও শুভেচ্ছা বিনিময় করেনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক কেবলই তিক্ত হয়েছে। আরও স্পষ্ট করে বললে, নয় বছর আগে বিজেপির নরেন্দ্র মোদি ভারতের ক্ষমতায় আসার পর থেকে উভয় দেশের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। পাকিস্তানের দাবি, ২০১৬ সালের নভেম্বরে পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া সার্কের শীর্ষ সম্মেলন বাতিল করে দিতে মোদি ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়া পাকিস্তানের মাটিতে ভারত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে বলেও ইসলামাবাদ বহুদিন ধরেই অভিযোগ করে আসছে। নিজেদের এই অভিযোগের পক্ষে ভারতীয় গুপ্তচর ও সন্ত্রাসী কূলভূষণ যাদবের কথা বলে থাকে পাকিস্তান। ইসলামাবাদের দাবি, কূলভূষণ যাদব ভারতীয় গুপ্তচর হিসেবে পাকিস্তানে হাতেনাতে ধরা পড়েছিলেন। ২০১৯ সালের আগস্টে জম্মু-কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করে এটিকে ভারতীয় ইউনিয়নে একীভূত করে নয়াদিল্লি। মূলত পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিতর্কিত এই অঞ্চলকে নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে বিরোধটি এখনো ঝুলে আছে। এর আগে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পাকিস্তানি ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় যুদ্ধবিমানগুলোকে গুলি করে ভূপাতিত করার পাশাপাশি ভারতীয় পাইলট অভিনন্দন বর্তমানকে বন্দি করে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনী। ২০১৯ সালের সেই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান ভারতের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক কমিয়ে আনে এবং ইসলামাবাদ ও নয়াদিল্লিতে একে অপরের দূতদের বহিষ্কারের পর উভয় দেশের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স তাদের নিজ নিজ মিশনের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এছাড়া দূতাবাসে কূটনৈতিক কর্মীর সংখ্যাও কমিয়ে দেয় দুই দেশ। দ্য নিউজ ইন্টারন্যাশনাল বলছে, ইসলামাবাদে অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন মঙ্গলবার সকালে তাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কিন্তু সেখানে কোনও পাকিস্তানি অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। অন্যদিকে গত সোমবার নয়াদিল্লিতে অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশনও স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। কিন্তু ভারত সরকার কাশ্মিরি নেতাদের সেই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাধা দেয়। কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আগামী বছর ভারতে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে এবং সেই নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি পাকিস্তান-বিরোধী এজেন্ডা নিয়ে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। আর তাই এই পরিস্থিতিতে – অন্তত ভারতে নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত – উভয় দেশের সম্পর্কের উন্নতির সুযোগ আপাতত খুবই কম।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন