শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

তজুমদ্দিন হাসপাতালে ৪৯ বছর পরে নতুন তিন সেবা ইউনিট চালু। 

তজুমদ্দিন হাসপাতালে ৪৯ বছর পরে নতুন তিন সেবা ইউনিট চালু। 
সেলিম রেজা, তজুমদ্দিন প্রতিনিধি ।।
ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার সরকারি হাসপাতাল স্থাপনের ৪৯ বছর পর অবশেষে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চালু হলো আল্ট্রাসনোগ্রাম, প্যাথলজি ও ডেল্টাল সেবা ইউনিট। গত ৩ অক্টোবর থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নতুন এই তিনটি সেবা ইউনিট চালু হয়। কার্যক্রমের উদ্ভোদন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, ভোলা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা. মো: শফিকুজ্জামান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো: আরিফুল ইসলাম খান প্রমূখ।
দীর্ঘদিন পর এই সেবা চালু হওয়ায় চরাঞ্চল ও দুর দুরান্ত হতে আগত সাধারণ রোগীরা উপকৃত হবেন। এ নিয়ে খুশি উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও। সরকার নির্ধারিত ফি প্রদান করে অফিস চলাকালীন সময়ে যে কেউ এই সেবা গ্রহণ করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) সকালে তজুমদ্দিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও প্যাথলজি ল্যাবের সেবা সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক রোগীদের বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অন্যান্য সেবা প্রদান করছেন। তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা রোগীরা টিসি, ডিসি, ইএসআর,  হিমোগ্লোবিন (একত্রে) ১৫০ টাকা ও প্রতিটি আলাদা পরীক্ষার জন্য ৩০ টাকা, এসজিপিটি ৭০ টাকা, ব্লাড সুগার ৬০ টাকা, সিরাম ক্রিয়েটিনিন ৫০ টাকা, লিপিড প্রোফাইল ৩০০টাকা ও আল্ট্রা ২২০ টাকাসহ সল্প খরচে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা যাবে। এসব পরীক্ষাগুলো বেসরকারি কোন ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে করতে প্রায় ৪-৫  গুন বেশি খরচ পড়বে।
সেবা নিতে আসা তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের তানিয়া বেগম বলেন, আমাদের আল্ট্রাসনোগ্রাম প্রয়োজন হলে বাইরের কোন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে অদক্ষ টেকনেশিয়ান দ্বারা এবং অনেক টাকা দিয়ে পরীক্ষা করতে হতো। এখন হাসপাতালে এই সেবাটি চালু হওয়ায় আমাদের জন্য খুবই ভালো হলো। আমরা এজন্য উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমানসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।
মেডিকেল অফিসার ডা: রোমান মোল্লা জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এসে যে কোন রোগী প্রতি সপ্তাহের শনি থেকে বুধ ৫ দিন প্যাথলজিক্যাল, সোম থেকে বুধ ৪ দিন আল্ট্রা  সেবা সরকারী মুল্যে গ্রহন করা যাবে। পাশাপাশি প্রতিদিন ডেন্টাল সেবাও গ্রহন করতে পারবে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা: তাসমিয়া ইসলাম জানান, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩১ সয্যা থেকে ৫০ সয্যায় উন্নীত হয়েছে। কিন্তু ডেন্টাল ইউনিটসহ অনেক ক্ষেত্রে লোকবল কম রয়েছে। তারপরও নতুন কয়েকটি সেবা ইউনিট চালু হওয়ায় রোগীর চাপ অনেক বেশি। আমাদের কয়েকজন ডায়নামিক ডাক্তারগন দিন রাত নিরসলস প্রচেষ্টা চালিয়ে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। প্যাথলজি ও আল্ট্রা ইউনিটে সল্প মুল্যে পরীক্ষা নিরীক্ষা ও অন্যান্য সেবা চালু হওয়ার পর রোগীরা অনেক উন্নত সেবা ও হয়রানী মুক্ত চিকিৎসা সেবা পাবে।
তজুমদ্দিন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সেলিম রেজা জানান, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাম ও প্যাথলজি সেবা ছিল না। সেটিও চালু হলো। আশা করছি এই সেবা চালুর মাধ্যমে হাসপাতালটি সেবার মানের দিক থেকে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। সরকার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন তারই প্রতিফলন এটি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুল ইসলাম খান বলেন, উপজেলা পর্যায়ে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমাদের জন্য এটি একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। আমরা আশাবাদী যে, আমাদের একঝাঁক তরুণ  চিকিৎসকের আন্তরিক প্রচেষ্টায় প্রান্তিক পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে পারবো। স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. সামিউল ইসলাম সাদী এবং মহাপরিচালক এবিএম খুরশিদ আলম স্যারের সদয় ভুমিকার জন্যই এই তিনটি সেবা ইউনিট চালু করা সম্ভব হয়েছে।
হাসপাতাল সূত্র জানায় জায়, তজুমদ্দিন বাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার হাসপাতালটি স্থাপন করেন। প্রথমদিকে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট থাকলেও এলাকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবাকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এর সার্বিক সহযোগিতায় সরকার এই হাসপাতালকে ৫০ শয্যায় উন্নতিকরণ করেন।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন