চোটে ছিটকে গেলেন সাকিব
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : পুনে কি অপয়া হয়ে থাকল সাকিব আল হাসানের জন্য? এই পুনেতেই ১৯ অক্টোবর স্বাগতিক ভারতের বিপক্ষে খেলতে পারেননি চোটের কারণে। বিশ্বকাপে দ্বিতীয়বারের মতো পুনেতে ফেরার দিনই পেলেন দুঃসংবাদ। বাঁ হাতের আঙুলের চোটের কারণে ১১ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এই বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচটি খেলা হচ্ছে না তার। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সোমবার রাতে ব্যাটিংয়ের সময় পাওয়া চোট ছিটকে দিয়েছে বাংলাদেশ অধিনায়ককে। দলকে পুনে পাঠিয়ে বাধ্য হয়ে তাকে ফিরতে হয়েছে দেশে। আগের রাতে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে শ্রীলঙ্কাকে ৩ উইকেটে হারিয়ে যে স্বস্তি মিলেছিল, তা রাত পোহাতেই উবে গেছে তার ছিটকে যাওয়ার খবরে। মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের শহর দিল্লিতে ছয় ম্যাচ পর পাওয়া সেই জয়ের পরও পুনে যাত্রায় সঙ্গী হয়েছে দুশ্চিন্তা। শ্রীলঙ্কার ২৭৯ রানের লক্ষ্য পেরোনোর পথে অধিনায়ক সাকিব খেলেছিলেন ৬৫ বলে ৮২ রানের বিস্ফোরক ইনিংস। এর আগে বল হাতে নিয়েছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ২ উইকেট। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচসেরার স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন। তবে ব্যাটিং করতে গিয়ে বাঁ হাতের তর্জনীতে চোট পান। সেটা নিয়েই খেলা চালিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ম্যাচ শেষে এক্স-রেতে তর্জনীতের চিড় ধরা পড়ে। ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে টিকে থাকতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ডু-অর-ডাই ম্যাচটা খেলা হচ্ছে না তার। দ্রুত পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া শুরু করতে গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা ফিরে গেছেন অধিনায়ক। কারণ এই ক্ষত থেকে মুক্তি পেতে লেগে যাবে তিন থেকে চার সপ্তাহ। সাকিবের সঙ্গে একই ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন ওপেনার লিটন কুমার দাসও। জরুরি পারিবারিক প্রয়োজনে এই বিশ্বকাপেই দ্বিতীয়বারের মতো দুদিনের ছুটি পেয়ে সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে ঢাকায় ফিরেছেন তিনি। তবে ৯ নভেম্বর লিটন পুনেতে দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। এদিকে সাকিবের বিকল্প হিসেবে দেশ থেকে উড়িয়ে আনা হচ্ছে বহু ব্যবহৃত এনামুল হক বিজয়কে। দিল্লির মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণ উপেক্ষা করে সোমবার মনে রাখার মতো একটা ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ম্যাচটা ৫৫ বল হাতে রেখে জিতলেও শ্রীলঙ্কা শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গিয়েছিল। তবে একেবারে ভিন্ন কারণেই লঙ্কানরা এই ম্যাচের দুঃসহ স্মৃতি সহজে ভুলবে না। বিশ্বকাপের মঞ্চে এটা বাংলাদেশের কাছে তাদের প্রথম হার। এর চেয়ে বড় ক্ষত তৈরি হয়েছে সাকিবের এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ খেলোয়াড় অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজকে টাইমড আউট নামক এক অদ্ভুত নিয়মে আউট হতে বাধ্য করেন সাকিব। আইসিসির আইন অনুযায়ী একজন ব্যাটার আউট হওয়ার পর থেকে ২ মিনিটের মধ্যে পরের ব্যাটসম্যানকে পরের বলটি মোকাবিলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ সেই কাজটা করতে দেরি করে ফেলেন। এরপর তার হেলমেটের হুক ভেঙে যাওয়ায় আরও দেরি হতে দেখে সাকিব টাইমড আউটের আবেদন করেন। আম্পায়াররা একাধিকবার সাকিবের কাছে আবেদনের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবেন কি না, জানতে চাইলে দলের জয়ের কথা চিন্তা করে সাকিব না সূচক জবাব দেন। তাই ম্যাথিউজকে কোনো বল মোকাবিলা না করেই ফিরতে হয় ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে। ম্যাচের পর এ নিয়ে নানামুখী সমালোচনা চললেও তা গায়ে মাখেননি সাকিব; বরং যুদ্ধে জিততে যা যা দরকার ছিল, সেটাই করার কথা বলেছেন তিনি। আর ম্যাথিউজ সাকিব ও বাংলাদেশের প্রতি সম্মান হারানোর কথা সরাসরি বলেছেন। আইসিসির আইনের মধ্যে থেকে সাকিবের এই সিদ্ধান্ত নিয়ে এখনো চলছে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা। এর মাঝেই তার বিশ^কাপ থেকে ছিটকে পড়াটা দলের জন্য বড় আঘাত। সেই আঘাত সামলাতে বিজয়কে ডাকা হয়েছে। অভিজ্ঞ এই ওপেনার ঘরোয়া ক্রিকেটে গেল কয়েক বছর ধরেই রান করছেন নিয়মিত। তবে জাতীয় দলে বিচ্ছিন্নভাবে পাওয়া সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারেননি। সাকিবের চোটে বিজয়ের সামনে দুঃস্বপ্নের এই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এটাকে আপনি প্রকৃতির বিচার হিসেবেও চিহ্নিত করতে পারেন। ২০১৫ বিশ্বকাপে দলে ছিলেন এই ওপেনার। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে কাঁধে চোট পেয়ে বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল তাকে। সেই বিজয়ই আবার বিশ্বকাপ দলে ফিরেছেন সাকিবের চোটের সুযোগে। ২০১৯ বিশ্বকাপে ব্যাটে-বলে দুনিয়া চমকে দেওয়া সাকিব এই বিশ্বকাপে নেতৃৃত্ব দিয়ে দেখেছেন মুদ্রার উল্টো পিঠ। ব্যাট হাতে একেবারেই ছন্দে ছিলেন না। ভারতের বিপক্ষে বিশ্রামে ছিলেন। আগে-পরে খেলা চার ম্যাচে তার সংগ্রহ ছিল মোটে ৫৬ রান। ব্যাড-প্যাচ কাটাতে কলকাতায় নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে হুট করে ঢাকায় ফিরে শৈশবের মেন্টর নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে দুই সেশনে নেটে ঘাম ঝরান। তাতেও লাভ হয়নি ডাচদের কাছে ৮৭ রানের হারের লজ্জা পাওয়ার ম্যাচে সাকিব করেন মাত্র ৫ রান। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। অবশ্য ৪৩ রান করে বিদায় নেওয়ায় দলকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে ব্যর্থ হন। সেই ম্যাচে হেরে বাংলাদেশের বিশ^কাপের সেমিফাইনাল সম্ভাবনার ইতি ঘটে। দিল্লির দূষণের মতোই বাংলাদেশের ভেতরটাও যেন দূষিত বায়ুতে আছন্ন হয়ে পড়েছিল। সেই সঙ্গে ২০২৫ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা নিয়েও তৈরি হয় শঙ্কা। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাটে-বলে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। সেই ম্যাচের পর অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ নিয়েও আশায় ছিলেন ভালো খেলার। তবে সেটা তিনি পারছেন না অনাহূত চোটের কারণে। সাকিবের অনুপস্থিতিতে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে হারানো মোটেই সহজ হবে না। তারপরও পুনেতে সেরা চেষ্টাটাই করতে হবে দলকে। কারণ এই ম্যাচ জিততে পারলে মিলে যাবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির টিকিট। সাকিবের বিকল্প হিসেবে বিজয় এসেছেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেলে তিনিও নিশ্চয় চাইবেন, হঠাৎ পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে। দলের গোড়ায় যে ক্ষত তৈরি হয়েছে তানজিদ হাসান তামিমের ধারাবাহিক ব্যর্থতায়, তাতে বিজয়ের খেলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।