রবিবার, ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

গোলমেলে ব্যাটিংয়ে ইতিহাস বদলানো হলো না বাংলাদেশের

গোলমেলে ব্যাটিংয়ে ইতিহাস বদলানো হলো না বাংলাদেশের

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে এর আগে ১৫টি ওয়ানডে খেলে একটিও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। সব সিরিজেই হোয়াইটওয়াশের লজ্জায় পড়তে হয়েছে লাল-সবুজের দলকে। এবার ইতিহাসটা বদলানোর প্রত্যয় ছিল নাজমুল হোসেন শান্তদের। ভিন্ন ফরম্যাটে হলেও কদিন আগেই ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডকেই টেস্টে হারের স্বাদ দিয়েছিল টাইগাররা। নতুন অধিনায়ক শান্তর অধীনে পারফর্মটাও ছিল চোখে পড়ার মতোই। তবে গোলমেলে ব্যাটিংয়ে বৃষ্টিবিঘ্নিত প্রথম ওয়ানডেতে হারতে হয়েছে ৪৪ রানের বড় ব্যবধানে।

২৪৫ রানের লক্ষ্যে যেভাবে ইনিংসের শুরুটা করা প্রয়োজন তা করতে পারেনি বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে পুরোপুরি ব্যর্থ হলেন সৌম্য সরকার। উইকেট বিলিয়ে দিলেন শান্ত-মুশফিকরাও। ৯২ রানে ৪ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর ম্যাচটা সেখানেই শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিজয়-আফিফরা আশা দেখালেও হারের ব্যবধানটা কমিয়েছেন কেবল। শেষ পর্যন্ত ২০০ রান তুলে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগে অধিনায়ক শান্ত বলেছিলেন, ‘এর আগে বাংলাদেশের কোনো টিম ভালো ফলাফল করতে পারেনি নিউজিল্যান্ডে, কোনো না কোনো একটা গ্রুপকে তো করতে হবে। আমাদের এই গ্রুপের সেই সামর্থ্য আছে, সবাই বিশ্বাস করে এবার ভালো কিছু হবে ইনশাআল্লাহ।’ ইতিহাস বদলানোর মঞ্চে শুরুটা দারুণভাবেই করেছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টি ভেজা কন্ডিশনে টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। ইনিংসের প্রথম ওভারেই কিউই শিবিরে জোড়া আঘাত হানেন শরিফুল ইসলাম। চতুর্থ বলটি অফ স্টাম্পের ওপর গুড লেংথে করেছিলেন এই বাঁহাতি পেসার। আউট সুইং করে বল বের হয়ে যাওয়ার সময় রাচিন রবীন্দ্রের ব্যাটের বাইরের দিকের কানায় লেগে মুশফিকের গ্লাভসে জমা পড়ে। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করা এই ওপেনার সাজঘরে ফেরেন ডাক খেয়ে।এক বল পর আবারও উইকেটের দেখা পেয়েছেন শরিফুল। প্রথম ওভারের শেষ বলটি ব্যাক অব লেংথে করেছিলেন এই পেসার। এবারও আউট সুইংয়ে বিভ্রান্ত হয়েছেন ব্যাটার। সামনের পায়ে ভর করে অফের দিকে খেলতে গিয়ে স্লিপে এনামুল হক বিজয়ের হাতে ধরা পড়েন হেনরি নিকোলস। ২ বল খেলে রানের রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরেছেন তিনি। প্রথম ওভারেই দুই ব্যাটারকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে স্বপ্নের মতো শুরু এনে দেন শরিফুল। যদিও বারবার বৃষ্টির হানায় ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমছিল কেবল। বৃষ্টির কারণে ৫০ ওভারের ম্যাচ নেমে এসেছিল ৪৬ ওভারে। তবে সেখানেই শেষ নয়। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের সময়ই আরও দুবার খেলা থেমেছে বৃষ্টিতে। ম্যাচটা সে কারণেই শেষ পর্যন্ত নেমে আসে ৩০ ওভারে। বৃষ্টি বাধার পর ব্যাট করতে নেমে ঝড় তোলেন কিউই দুই ব্যাটার অধিনায়ক টম ল্যাথাম ও ওপেনার উইল ইয়াং। দুজনের জুটি থেকে আসে ১৭১ রান। ল্যাথাম শেষ পর্যন্ত ৯২ রানে আউট হয়ে গেলেও ইয়াং ফিরেছেন ওয়ানডেতে নিজের তৃতীয় শতক (১০৫) হাঁকিয়ে। যদিও ল্যাথামকে দ্রুত ফেরানোর সুযোগ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

সৌম্য সরকার হাতে বল জমাতে ব্যর্থ হন সে দফায়। আর তাই সৌম্যকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারেন কিউই অধিনায়ক। এদিন বল হাতেও বেশ খরুচে ছিলেন সৌম্য। ৬ ওভার বল করে ১০-এর ওপর গড়ে ৬৩ রান খরচ করেছেন। উইকেট পাননি একটিও। ডিএলএস মেথডে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ৪৫ রানের লক্ষ্যটা বেশ কঠিনই বলা যায়। এমন টার্গেট তাড়ায় বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ভালো শুরু। তবে শুরুটা হয়েছে হতশ্রী। ইনিংসের প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফেরেন সৌম্য সরকার। দীর্ঘদিন পর দলে ফিরে আরও একবার ব্যর্থ হলেন তিনি। লেগ স্টাম্পের বাইরে খানিকটা খাটো লেংথে করেছিলেন অ্যাডাম মিলনে। আউট সুইং করে বের হয়ে যাওয়া বল ডিফেন্স করতে গিয়ে দ্বিতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন সৌম্য। সাজঘরে ফেরার আগে ৪ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি এই ওপেনার। ব্যাট, বল ও ফিল্ডিংয়ে বাজে একটা দিন কাটালেন সৌম্য। সেই সঙ্গে নিজের দলে ফেরাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। সৌম্যর পর দ্রুতই ফিরতে পারতেন বিজয়ও। জ্যাকব ডাফির করা ইনিংসের চতুর্থ ওভারে ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন বিজয়। তবে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে সেটা হাতে জমাতে পারেননি উইকেটকিপার টম ব্লান্ডেল। জীবন পেয়ে বড় ইনিংস গড়তে পারেননি। ফিরলেন ৪৩ রান করে অভিষিক্ত পেসার জশ ক্লার্কসনকে তারই হাতে প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট উপহার দিয়ে। অন্যদিকে, শান্ত নিজের উইকেটটা উপহারই দিয়ে আসলেন একপ্রকার। ইশ সোধির বলে বোল্ড হলেন রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে। ওই শটটা তখন খেলার খুব দরকার ছিল কি না শান্তই ভালো বলতে পারবেন। লিটন দাস আর মুশফিকদের ব্যাটিং দেখে কে বলবে দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন তারা! রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে ক্যারিয়ারে অনেকবারই আত্মহুতি দিয়েছেন মুশফিক। আজও রাচিন রাবিন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ এই শট খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হলেন। এভাবে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসার খেলায় মাতলে আর যাই হোক জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। লোয়ার মিডল অর্ডারে তাওহিদ হৃদয়-আফিফ হোসেনরা আক্রমণাত্মক খেলেছেন, ভালো শুরুও পেয়েছেন। তবে কেউই দায়িত্ব নিয়ে লম্বা সময় ব্যাটিং করতে পারেননি।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন