শোলাকিয়ায় ঈদ জামাতে থাকবে কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয়
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : প্রতি বছরের মতো এবারও ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে বড় জামাত অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। এতে ঈদুল ফিতরের ১৯৬তম জামাত হবে এবার।
বুধবার (১৯ এপ্রিল) জেলা প্রশাসক মো. আবুল কালাম আজাদ, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ, র্যাব-১৪ ময়মনসিংহের কমান্ডিং অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মহিবুল ইসলাম খান ও কিশোরগঞ্জ ক্যাম্পের অধিনায়ক মেজর শাহরিয়ার মাহমুদসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শোলাকিয়া মাঠ পরিদর্শন করেন।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখ জানান, ঈদকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। মাঠের বিভিন্ন প্রবেশপথে থাকছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। ঈদগাহের প্রতিটি প্রবেশপথে র্যাব-পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি থাকবে। নামাজ শুরুর আগে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হবে ।
তিনি আরও জানান, কয়েক স্তরের নিরাপত্তাবলয় পার হয়ে মুসল্লিদের মাঠে প্রবেশ করতে হবে। নিরাপত্তার স্বার্থে শুধু জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে মাঠে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না। মাঠের ভেতরে এবং বাইরে কাজ করবে শক্তিশালী ড্রোন ক্যামেরা। পোশাকি পুলিশ ছাড়াও গোয়েন্দা পুলিশ নজরদারি করবে। ২০১৬ সালে ঈদগাহ মাঠের কাছে বর্বরোচিত জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে এবারও বাড়তি নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকবে বলে জানান পুলিশ সুপার।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ঈদ জামাতকে ঘিরে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। চার স্তরের নিরাপত্তাবলয়ে কাজ করতে ৫ প্লাটুন বিজিবি, প্রায় দেড় হাজার পুলিশ, শতাধিক র্যাব সদস্যসহ বিপুলসংখ্যক আনসার সদস্য ও এপিবিএন প্রস্তুত রয়েছে।
মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে দেহ তল্লাশি করা হবে। মাঠের চারপাশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবে। এবার গত বছরের চেয়ে বেশি মুসল্লির সমাগম হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেন জেলা প্রশাসক।
এদিকে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার উদ্যোগে শহরে ঈদগাহের প্রবেশপথে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এরই মধ্যে মাঠের সংস্কারকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাঠের লাইন টানা, দেয়ালে রং করা, অজুখানা মেরামত ও মিম্বরের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে।
পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, মাঠের উন্নয়ন ও সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। এখন সাজসজ্জার কাজ চলছে। ঈদের দিন পুরো শহরে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
এবার ঈদের জামাত শুরু হবে সকাল ১০টায়। এ জামাতে ইমামতি করবেন, বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য জমি ওয়াকফ করেন, ঈসাখাঁর বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খান। তারও ২০০ বছর আগে থেকে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো এ মাঠে ঈদের নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায় – এ বিশ্বাসে প্রতি বছর এখানে লাখ লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটে। দেশের বাইরে থেকেও আসেন অনেকে।
জনশ্রতি আছে শোলাকিয়ায় কোনো এক ঈদের জামাতে এক লাখ ২৫ হাজার বা সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের হয় ‘সোয়া লাখিয়া’, যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত। প্রায় ৭ একর আয়তনের এ মাঠে প্রতিবছর লাখ লাখ মুসল্লির ঢল নামে। দিন দিন এখানে বাড়ছে দেশ-বিদেশের মুসল্লির সংখ্যা।
ঈদের নামাজ শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। ঈদগাহ পরিচালনা কমিটি একাধিকবার সভা করেছে। কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শোলাকিয়ায় ঈদের জামাতে অংশ নিতে দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যসহ বাংলাদেশে অবস্থিত বিশ্বের মুসলিম দেশসমূহের কূটনীতিকদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
এদিকে মুসল্লিদের সুবিধার্থে ঈদের দিন ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ এবং ভৈরব-কিশোরগঞ্জ রুটে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।