বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

উপজেলা চেয়ারম্যানের আশ্বাসে শেষ রাতে অবরোধ তুলে নিলো ১২শ’ নারী শ্রমিক

উপজেলা চেয়ারম্যানের আশ্বাসে শেষ রাতে অবরোধ তুলে নিলো ১২শ’ নারী শ্রমিক

 

মোঃজাকির হোসেন নীলফামারী প্রতিনিধি: পরচুলা ক্যাপ তৈরীর ৮টি ফ্যাক্টরীতে কর্মরত ১২ শ’ নারী শ্রমিকের ৩ মাসের বেতন না দিয়েই সব মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে মালিক। নিরুপায় হয়ে চরম হতাশায় নিমজ্জিত শ্রমিকরা মালিকের ভাতিজা ও একটি ফ্যাক্টরীর ম্যানেজারকে আটক করে।

কিন্তু তাতেও কর্তৃপক্ষ সাড়া না দেয়ায় এবং কোন সুরাহা না হওয়ায় বিকাল ৪ টায় মজুরী প্রদানের দাবীতে সড়ক অবরোধ করে শ্রমিকরা। এতে রাত ২ টা পর্যন্ত সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় ওইপথে। ফলে অসহনীয় ভোগান্তিতে পড়ে এলাকাবাসী ও চলাচলকারীরা।

পরে সমস্যা সমাধানে উপজেলা চেয়ারম্যানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধকারীরা শেষ রাতে বাড়ি ফিরে যাওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বুধবার (১৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম ইউনিয়নের সিপাইগঞ্জ বাজারে এই ঘটনা ঘটেছে।

বেতনের দাবীতে শ্রমিকদের আন্দোলনের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করলেও শ্রমিকদের সড়ক থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়। রাত হয়ে গেলে পরিবেশ অস্থিতিশীল ও ঝু্ঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লে বাধ্য হয়ে রাত ২ টায় উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি মোখছেদুল মোমিন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) আমিনুল ইসলাম, থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম ও ইউপি চেয়ারম্যান লানচু হাসান চৌধুরী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়।

এসময় নারী শ্রমিকদের টিম লিডাররা জানান, ইতোপূর্বে নিয়মিত বেতন পরিশোধ করলেও গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে সম্পূর্ণ বেতনই বন্ধ করে রেখেছে। শ্রমিকরা চাপ দিলে স্থানীয় সাব কন্ট্রাক্টর (মালিক) সিপাইগঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকার ছেলে মুকুল ও তার ভাতিজা শাহিন (ম্যানেজার) মিথ্যে আশ্বাসে আজকাল করে দিন পার করে।

সর্বশেষ প্রতিটি ক্যাপ তৈরীর জন্য ২শ’ টাকা বাড়িয়ে ৯ শ’ টাকা করে পারিশ্রমিক দেয়ার প্রলোভনে ২৭ রমজান পর্যন্ত সময় নেয়। ইতোমধ্যে সব কাজ শেষ হয়েছে এবং মাল ঢাকায় ডেলিভারিও হয়েছে। ঈদের আগেই সব পাওনা পরিশোধ করার কথা দেয়। সে অনুযায়ী আজ বেতন দিতে সকালে স্যালারী শিট রেডি করার জন্য বলে। কিন্তু বিকালে তাদের আর কোন খোঁজ নাই। এমনকি মোবাইলও বন্ধ করে দেয়। এতে আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি।

সন্ধায় আটক ম্যানেজার শাহিনের মোবাইলে কল দিয়ে মুকুল জানিয়ে দেয় কোন টাকা দেয়া হবেনা। যা করার আছে করেন। এতে মজুরী বঞ্চিত হতাশ শ্রমিকরা নিরুপায় হয়ে সড়ক অবরোধ করে। আমাদের ন্যায্য পাওনা বুঝে না পাওয়া পর্যন্ত আমরা ক্ষ্যান্ত হবোনা। কারণ মুকুল আমাদের সাথে চরম প্রতারণা করেছে। আমরা মানবেতর ভাবে দিন কাটাচ্ছি। দুইদিন পর ঈদ। অথচ আমরা দুচোখে অন্ধকার দেখছি।

পরে উপজেলা চেয়ারম্যান বলেন, আপনাদের কষ্টের টাকা মেরে দিয়ে কেউ পার পাবেনা। মুকুল যেখানেই থাক তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যেই আইনের আওতায় এনে ৮ টি ফ্যাক্টরীর মোট ৯০ লাখ টাকাই আদায় করে আপনাদের দেয়া হবে। প্রয়োজনে মুকুলের স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি জব্দ করে হলেও অর্থ পরিশোধ করা হবে।

মজুরী প্রাপ্তির এমন আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শ্রমিকরা অবরোধ তুলে নিয়ে সেহরীর আগে আগে বাড়ি ফিরে যায়। আর এর মধ্য দিয়েই ১১ ঘন্টা পর অবরুদ্ধ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয় এবং উত্তেজনাকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ফ্যাক্টরী মালিক মুকুলের কোন হদিস এখনও পাওয়া যায়নি।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন