শুক্রবার, ১৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

গরমে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে ঘোড়াঘাটের খামারিরা

গরমে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে ঘোড়াঘাটের খামারিরা

ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ টানা কয়েক দিনের দাবদাহে আর অনাবৃষ্টিতে গবাদিপশু নিয়ে বিপাকে পড়েছে দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের খামারিরা। এমন দুঃসহ গরমের পাশাপাশি লোডশেডিংয়ে হিমশিম খাচ্ছেন পশুর খামারিরা। অতিরিক্ত গরমে গরুর খামারগুলোতে কমেছে দুধের উৎপাদন। বেড়েছে রোগবালাই ও মৃত্যুর আশঙ্কা। এজন্য খামারিদের কাঁধে চেপেছে বাড়তি ব্যয়ের চাপ। এতে কোরবানির পশুর দাম বেড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাপমাত্রা বেড়ে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ভর্তুকির দাবি করছেন অনেক খামারি। দুর্বিষহ দাবদাহে সবমিলিয়ে এখন দিশাহারা খামারিরা। উপজেলার প্রান্তিক খামারিদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তীব্র তাপদাহে গরুর দুধ উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩০ শতাংশ। উৎপাদন খরচ বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। তাছাড়া কোরবানির জন্য মোটাতাজা করা গরুর খরচ ২০ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে মনে করছেন তাঁরা।

এদিকে কয়েকটি খামার ঘুরে দেখা গেছে, তীব্র গরম ও লোডশেডিংয়ের কারণে গরু-ছাগলের হাঁসফাঁস অবস্থা। বিদেশি জাতের গরুর জন্য সার্বক্ষণিক ফ্যানের ব্যবস্থা করা আছে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের কারণে জেনারেটরের পেছনে অতিরিক্ত খরচ করতে হচ্ছে খামারিদের। এতে করে ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। শুধু গরমের ভোগান্তিই নয় গ্রীষ্মকালে গবাদিপশুর থ্রি ডেস সিকনেস নামক জ্বর এবং লাম্পি স্কিন ডিজিস নামের এক ধরনের পক্স হয়। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সে নিয়েও চিন্তিত তারা।

উপজেলা ডেইরি ফার্ম অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. শাহ নেওয়াজ কালবেলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে যেসব প্রজাতির গরু পালন করা হয়, সেগুলো খরা সহিষ্ণু নয়। যে কারণে অতিরিক্ত তাপে গবাদি পশুর শরীরে নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চলমান তাপপ্রবাহের প্রভাবে খামারগুলোতে দুধের উৎপাদন ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। হিটস্ট্রোকের কারণে গরু মারা যাওয়ার খবর পাইনি। তবে এফিমেরাল ফিভার রোগে উপজেলাতে ৬টি গরু মারা গেছে। কিন্তু গরমে ল্যাম্পি স্কিন রোগ বেড়ে গেছে। আধুনিক খামারিরা আগেভাগে প্রস্তুতি নিলেও প্রান্তিক পর্যায়ের খামারিদের অধিকাংশই জানেন না, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কি করতে হবে। অপরদিকে গরু সুস্থ রাখতে খামারগুলোতে ব্যয় বেড়ে গেছে অন্তত ২০ শতাংশ। তিনি আরও বলেন,উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে সব জানিয়ে দেওয়া হলেও খামারিরা সেভাবে উপকৃত হচ্ছেন না। মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা সেবা থাকলেও গবাদিপশুর ক্ষেত্রে অফিস কর্মঘণ্টার বাইরে সেবা মেলে না।তাপপ্রবাহের মাঝে খামারিরা সহযোগিতা না পেলে খামার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর প্রভাব কোরবানির পশুর বাজারেও পড়তে পারে।

তাপপ্রবাহের মধ্যে গবাদি পশুর বাড়তি যত্ন নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে ঘোড়াঘাট উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ বিপ্লব কুমার দে কালবেলাকে বলেন, ‘খামারের ঘরগুলো ঠান্ডা রাখাতে হবে। গরুকে প্রতিদিন একাধিকবার গোসল করাতে হবে, কোনোভাবেই যেন গরুর গায়ের তাপমাত্রা বেড়ে না যায়। গরুর জন্যে আদর্শ তাপমাত্রা হচ্ছে ২২ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু তাপমাত্রা যখন এরচেয়ে বেশি হয়ে যায় তখন তারা খাওয়া দাওয়া কমিয়ে দেয়। প্রচুর পানি খায় কিন্তু দুধ দেয় খুব কম।

তিনি আরও জানান, তাপপ্রবাহকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এগুলো মোকাবিলা করতে ঘোটা উপজেলায় আমরা মাঠপর্যায়ে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে সতর্ক করে দিচ্ছি । এটা ঠিক যে, ২৪ ঘণ্টা সেবার ব্যবস্থা এখনো হয়নি। তবে ওয়েবসাইটে আমাদের কর্মকর্তাদের ফোন নম্বর রয়েছে, খামারিরা চাইলে আমাদের যেকোনো সময়ে ফোন দিয়ে সহায়তা নিতে পারেন।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন