মঙ্গলবার, ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

জেগে উঠা ১৬৫টি চরে বাড়ছে বাদামের চাষ

জেগে উঠা ১৬৫টি চরে বাড়ছে বাদামের চাষ
গাইবান্ধাঃ  জেলার ৭ উপজেলর মধ্যে চার উপজেলায় ছোট-বড় মিলে ১৬৫টি চর ও দ্বীপচর রয়েছে। চলতি মৌসুমে সুন্দরগঞ্জের তিস্তা, সদরের ব্রহ্মপুত্র, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার যমুনার নদী পানি শুকিয়ে জেগে উঠছে অসংখ্য বালুচর। এসব বালুচরে বাদাম চাষ করছেন চাষিরা।গেল বছর বাদামের বাম্পার ফলন হওয়ার পাশাপাশি বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা বাদাম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন। তাছাড়া উজানের পাহাড়ি ঢলে জমিতে পলি পড়ায় এ বছর বাদাম চাষ গত বছরের চেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে মনে করেন কৃষি সংশ্লিষ্টরা। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি চর ঘুরে দেখা গেছে, ধুধু বালুচর সবুজে ছেয়ে গেছে। চারিদিকে শুধু বাদামের চাষ। এ উপজেলার মোল্লারচর ইউনিয়নের সিদাই, বাজে চিথুলিয়া, কড়াইবাড়ি, বাটিকামারি, হাঁস ধরা, চিথুলিয়া দীঘরসহ বিভিন্ন চরে ব্যাপক বাদামের চাষ হয়েছে। এছাড়া খোঁজ নিয়ে জানা গেছে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার লাটশাল্লা, কাপাসিয়াচর, বালাসেরা, কাজিয়ার, খয়দার এবং ফুলছড়ি উপজেলার আলগা, জিগাবাড়ি, গাবগাছি, খাটিয়ামারির চরাঞ্চলেও বাদাম চাষ হয়েছে।স্থানীয়রা জানান, একটা সময় এসব চরাঞ্চলে মিষ্টি আলু ও দুই একটি সবজি ছাড়া কিছুই চাষ হতো না। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে উত্তরের উজানের ঢলে নেমে আসা পলিতে বাদাম চাষে অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তাই চলাঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে বাদাম চাষে ঝুঁকছে। এছাড়া অল্প সময়ে বাদাম চাষ করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। প্রতিবছর বন্যা পরবর্তী সময়ে জেগে ওঠা পলি মাটির চরে তারা বাদাম চাষ করেন। খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ১৭ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ হয়। বাদাম খেত থেকে আগাছা কেটে তাদের গবাদিপশুকে খাওয়ানো হয়। এছাড়া অন্য ফসলের মতো বাদামের জমিতে তেমন একটা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। বীজ রোপণের আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তুলে সংগ্রহ ও হাট-বাজারে বিক্রি করা যায়।সদর উপজেলার ইউনিয়নের সিদাই চরের বাদাম চাষি তারা মিয়া বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বাদাম চাষ করে আসছি। গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় এবার ৫ বিঘা জমিতে বাদাম লাগাইছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকলে এবারও ভালো ফলনের আশা করছেন তিনি। সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চর চরিতাবাড়ী গ্রামের কৃষক ময়নাল মিয়া বলেন, নদী ভাঙনে দিশেহারা মানুষ আমরা। ধানের চেয়ে গত কয়েক বছর ধরে বাদামেই বেশি লাভ হচ্ছে। তাই অনেক কষ্ট করে তিন বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। ধানে যেরকম কীটনাশক ও ওষুধ প্রয়োগ করতে হয় বাদাম চাষে তেমন একটা ওষুধ ও কীটনাশক লাগে না। ফুলছড়ি উপজেলার অ্যারেন্ডাবাড়ি ইউনিয়নের জিজ্ঞাসাবারী চরের কৃষক রফিক মিয়া বলেন, অল্প খরচে বাদাম চাষ করা যায়। অন্যান্য ফসলের তুলনায় বাদামে লাভ দ্বিগুণ হয়। প্রতি একরে খরচ হয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে আয় হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। বাদাম তুলে শুধু রৌদে শুকায়ে অনেকদিন রাখা যায়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, গাইবান্ধার চার উপজেলার বিভিন্ন চরে ৭৫ হেক্টর জমিতে এবার বাদামের চাষ হয়েছে। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের মধ্যে বিনামূল্যে সার ও বাদামের বীজ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। এছাড়া‌ বাদামের ভালো ফলনের জন্য উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে বাদাম চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বিগত বছরগুলোর চেয়ে এ বছর বাদাম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছেন এই কর্মকর্তা।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন