পিরোজপুরে সড়ক দুর্ঘটনা : একই মহল্লার ৩ জনের মৃত্যুতে শোকের ছায়া
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের পাড়েরহাট সড়কে একটি বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলকে চাপা দেওয়ার ঘটনায় নিহত সাতজনের মধ্যে তিনজনের বাড়িই একই মহল্লায়। শুক্রবার সন্ধ্যায় মরদেহ বাড়িতে পৌঁছালে শোকের ছায়া নেমে আসে ওই মহল্লায়। শেষবারের মতো একনজর দেখতে আশপাশের অসংখ্য মানুষকে ওই তিন বাড়িতে ভিড় করতে দেখা গেছে। নিহতরা হলেন, পিরোজপুর সদর উপজেলার উত্তর সংকরপাশা গ্রামের জাকির হাওলাদারের ছেলে দুর্ঘটনার কবলে পড়া অটোরিকশা চালক মো. নাইম (১৯), একই গ্রামের ইদ্রিস ফরাজির ছেলে মো. খায়রুল ফরাজি (২০) ও জাহাঙ্গীর মুন্সির স্ত্রী মোসা. মানসুরা বেগম (৫০)। পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে নিহতরা বসবাস করতেন। নিহত অটোরিকশা চালক মো. নাইমের মরদেহ বাড়িতে পৌঁছানোর পর বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন নাইমের মা মিনারা বেগম। নাইমের বাবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান ২০১৫ সালে। এরপর থেকে মা মিনারা বেগম আর নানীকে নিয়ে বাস করতে বাড়িতে। এই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি নাইমকে হারিয়ে বারবার কেঁদে উঠছেন মা মিনারা বেগম। নাইমের কিছুক্ষণ পরেই পাশের বাড়িতে পৌঁছায় ইদ্রিস ফরাজির ছেলে মো. খায়রুল ফরাজির মরদেহ। তা দেখে বাবা, মা আর ভাইসহ আশপাশের মানুষ কাঁদতে শুরু করেন। নিহত খায়রুল ফরাজির বাবা ইদ্রিস ফরাজি বলেন, তার তিন ছেলে খায়রুল মেঝো ছেলে বড় ছেলে ঢাকায় গাড়ি চালায়, ছোটটা কিছুই বোঝে না। খায়রুল বাড়িতে শ্রমিকের কাজ করে আমাদের দেখাশোনা করতো। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি। একই সময় মরদেহ পৌঁছায় পাশের বাড়ির মানসুরা বেগমের বাড়িতে। বৃদ্ধ পক্ষাঘাতে (প্যরালাইসিস) আক্রান্ত স্বামী জাহাঙ্গীর মুন্সি (৭০) তখন শোকে পাগলপ্রায়। মানসুরা বেগমের দুই ছেলে রাকিব মুন্সি ও সাকিল মুন্সিও তখন কাঁদছিলেন। নিহত মানসুরা বেগমের ছেলে রাকিব মুন্সি বলেন, আমার মা পিরোজপুরে বোনের বাড়িতে রমজানের খাবার নিয়ে গিয়েছিলেন। ঘটনার পর মাকে অনেক বার ফোন দিয়েও ফোনে পাচ্ছিলাম না। পাশের বাড়ির দুইজনের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মাও মারা গেছেন। ওই গ্রামের বাসিন্দা মো. মফিজুল খলিফা বলেন, একই মহল্লার পাশাপাশি তিনটি বাড়িতে তিনজনের মৃত্যুর খবর শুনে মহল্লায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এ ঘটনা খুবই বেদনাদায়ক। স্থানীয় গ্রাম পুলিশ সদস্য মো. মিন্টু হাওলাদার বলেন, সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে গিয়ে দেখি সেখানে একটি বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দিয়েছে। নিহতদের সাতজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি একই মহল্লায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. দেলোয়ার হোসেন কাজি বলেন, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় থাকা সবাই মারা গেছে। তাদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি পাশাপাশি। নিহত তিনজনই অনেক অসহায়। পিরোজপুর সদর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আশিকুজ্জামান বলেন, দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হয়েছেন। ঘাতক বাসটিকে জব্দ করা হয়েছে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পিরোজপুর সদর উপজেলার শংকরপাশা ইউনিয়নের পাড়েরহাট সড়কে শুক্রবার (৮ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে একটি বাস ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও একটি মোটরসাইকেলকে চাপা দেয়। এ দুর্ঘটনায় সাতজন নিহত হয়।