“কলাপাড়ায় ঘরে ঢুকে খাটের সাথে হাত-পা বেঁধে বুকে চাকু ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা,
মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া(পটুয়াখালী)।।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় তিন কন্যা সন্তানের পিতা সাইদুল সরদারকে (৩৮) ঘরে প্রবেশ করে উলঙ্গ করে খাটের উপর হাত-পা বেঁধে বুকে ধারালো অস্ত্র ঢুকিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে দূবৃত্তরা। এ হত্যাকান্ডের ৪৩ দিন অতিবাহিত হলেও পৃুলিশ এ হত্যার রহস্য উদঘাটন কিংবা হত্যায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি। এ কারনে খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে এখন রাস্তায় নেমেছে নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী। তবে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলছেন, তারা হত্যায় ব্যবহৃত একটি ধারালো চাকু উদ্ধার করেছেন। অবিলম্বে হত্যায় জড়িত সকলকে গ্রেফতার করা হবে। সেপ্টেম্বর মাসের ৯ তারিখ রাত ৯টার দিকে কলাপাড়ার মধ্য টিয়াখালী গ্রামের নিজ বাসার দোতলার শয়নকক্ষের খাটের সাথে তাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় সাইদুল সরদারকে। এ সময় ওই ঘরে ছিলেন শুধু তার দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজা বেগম। সাইদুলকে মারধরের পর মধ্যযুগীয় কায়দায় হত্যা করা হলেও ওই সময় ঘরে থাকা তার দ্¦িতীয় স্ত্রী খাদিজাকে কোন নির্যাতন করা হয়নি। এমনকি ঘরের সব মালামাল ছিলো সুৃরক্ষিত ও অক্ষত। সাইদুলকে হত্যার সময় তার ডাক চিৎকার শোনা গেলেও তার স্ত্রীর কোন চিৎকার শুনতে পায়নি প্রতিবেশীরা। এ সময় সাইদুলের চিৎকার শুনে তার ঘরে গিয়ে প্রতিবেশীরা সাইদুলকে এভাবে হাত-পা বাঁধা রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করে। কিন্তু চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওই রাতেই পুলিশ সাইদুলের মরদেহ উদ্ধার করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য পটুয়াখালী মর্গে প্রেরণ করে। কিন্তু হত্যায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সাইদুলের ঘরে একাধিক চেতনানাশক ঔষধ, জুস ও নাইলনের কট সুতা উদ্ধার করে। ঘরে এখনও রক্তের ছোপ ছোপ দাগ। কিন্তু এ হত্যায় কারা জড়িত এ বিষয়ে এখনও মুখ খোলেনি ঘটনার সময় উপস্থিত তার দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজা। এ ঘটনায় নিহতের ভাই শাহজালাল সরদার ১০ সেপ্টেম্বর কলাপাড়া থানায় অজ্ঞাত আসামীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। পুলিশ এ মামলায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজাকে গ্রেফতার করে এবং আদালতের মাধ্যমে তিনদিনের রিমান্ডে নেয়। কিন্তু রিমান্ডেও সে অপ্রকৃতস্থ্য আচরন করে। এ কারনে পুলিশ তার কাছ থেকে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদঘাটন করতে না পারায় ৪৩ দিনেও সাইদুল হত্যায় জড়িত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এদিকে এ হত্যাকান্ড ধামাচাপা পড়ে যাওয়ার আশংকায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সাইদুল সরদারের পরিবার ও তার প্রথম স্ত্রী ও তিন সন্তান। সাইদুলের মা ও স্ত্রী, সন্তানরা বলেন, সাইদুলকে পরিকল্পিতভাবে সম্পত্তির জন্য খাদিজা বেগম অন্যের সহায়তায় হত্যা করেছে। সে একা এ হত্যাকান্ড করতে পারে না। তারা অবিলম্বে এ হত্যাকারীদের সনাক্ত ও দ্রুত বিচারের দাবি জানান। আর সাইদুলের ভাই শাহজালাল সরদার ওরফে খোকন বলেন, প্রথম স্ত্রী কাকলী বেগমের অনুমতি নিয়ে তার ভাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীর সংসারে তার শাহরিয়া (১১), তাইফা (৬) ও সামিয়া (১২ মাস) নামের তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। কিন্তু প্রথম স্ত্রী ও সন্তানদের সে খুব ভালোবাসতো। পরিবারের সবার সে খেয়াল নিতো। কারো সাথে তার কোন বিরোধ ছিলো না। রাজনীতির সাথেও জড়িত ছিলো না। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর তাকে কিছু সম্পত্তি লিখে দিয়ে সাইদুল আবার তা ফিরিয়ে নেয়। এ নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজার সাথে প্রায়ই বিরোধ হতো। তার ভাইকে সম্পত্তির জন্যই পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।এলাকাবাসীরা বলেন,সাইদুলের নির্মম মৃত্যুতে গোটা এলাকার মানুষ কাঁদলেও দ্বিতীয় স্ত্রী খাদিজার ছিলো না কোন বিলাপ। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর খবর সে কাউকে না জানিয়ে মৃতদেহ দোতলায় আটকে রাখে সিড়ির ঝাপ দিয়ে। এটা পরিকল্পিত হত্যাকান্ড বলে তারা ধারনা করছেন। একই সাথে অবিলম্বে এ হত্যাকারীদের পুলিশ গ্রেফতার করতে না পারলে ছোট ছোট তিন সন্তান নিয়ে তারা রাস্তায় নামবেন বলে আলটিমেটাম দেন। এদিকে সাইদুল হত্যার জড়িতদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে শতশত এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের সদস্যরা। শনিবার দুপুরে কলাপাড়া শহীদ সুরেন্দ্র মোহন চেীধুরী সড়কে এ সমাবেশ ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে তার পরিবারের লোকজন। ছোট ছোট প্লাকার্ড নিয়ে রাস্তায় বসে পড়ে তিন সন্তান। এ বিষয়ে কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী অহমেদ বলেন, তারা মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছেন। সন্দেহভাজন দ্বিতীয় স্ত্রীকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্য তদন্ত করে দেখছেন। খুব শীঘ্রই আসামীদের গ্রেফতার করা হবে বলে জানান। ৪৩ দিনেও সাইদুল হত্যার রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি পুলিশ, খুনীদের গ্রেফতারের দাবিতে রাস্তায় নামলো নিহতের স্বজন ও এলাকাবাসী”