বুধবার, ৮ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

রাজবাড়ীতে হাহাকার, কোথাও মিলছে না পানি

রাজবাড়ীতে হাহাকার, কোথাও মিলছে না পানি

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : সারাদেশের মতো রাজবাড়ী জেলাতেও চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ। ভয়াবহ এই তাপদাহে জেলাটির জনজীবনে নেমে এসেছে বিপর্যয়। একদিকে তীব্র দাবদাহে পুড়ছে জেলার মানুষ অন্যদিকে নতুন করে প্রায় সব উপজেলাতে দেখা দিয়েছে তীব্র পানি সংকট। এতে যেমন বিপর্যস্ত হচ্ছে জনজীবন, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে কৃষি উৎপাদন।

রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নমিতা বিশ্বাসের ৬ সদস্যের পরিবার। নিজের টিউবওয়েল থাকলেও বেশ কয়েকদিন ধরে পানি উঠছে না। একদিকে বইছে তীব্র তাপপ্রবাহ অন্যদিকে পানির জন্য হাহাকার। সবকিছু মিলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে নমিতার পরিবারের জীবনযাত্রা। পানির অভাব মেটাতে ছুটছেন এদিক-ওদিক।

শুধু নমিতার পরিবারই নয়। পানির জন্য এমন চিত্র রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার পরিবারের। তীব্র তাপপ্রবাহ এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় এই ভোগান্তি বলে জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর।

বালিয়াকান্দি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ভৌগোলিক কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের মধ্যে বালিয়াকান্দি উপজেলাটি ভিন্ন। আশপাশের অঞ্চল থেকে এই অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ স্তর নিম্নমুখী। যে কারণে প্রতি বছর পানির স্তর ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি নিচে নেমে যাচ্ছে। বালিয়াকান্দিতে মোট পরিবারের সংখ্যা ৫০ হাজার। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী পাঁচটি পরিবারের জন্য কমপক্ষে একটি টিউবওয়েল থাকা জরুরি।

সে অনুযায়ী বালিয়াকান্দিতে প্রয়োজন প্রায় ১০ হাজার টিউবওয়েল। কিন্তু সরকারিভাবে ২০২২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৬০টি সাবমার্সেবল ও ২০১৯ সাল থেকে ৫২০টি টিউবওয়েল বসানো হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় খুবই সামান্য। ব্যক্তিগত উদ্যোগে যেসব টিউবওয়েল বসানো হয়েছে সেগুলোতে এখন আর পানি উঠছে না।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বলছে- বালিয়াকান্দিতে বর্ষা মৌসুমে পানির স্তর থাকে ১৫ থেকে ২২ ফুট নিচে। আর শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে এপ্রিল, মে ও জুন মাসে সেটা নেমে দাঁড়ায় ৩২ ফুট নিচে। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো টিউবওয়েলগুলোর পাম্পিং ক্ষমতা ২০ থেকে ২৪ ফুট। ফলে শুষ্ক মৌসুমে এ অঞ্চলে পানি থাকে না। শুধু সরকারিভাবে বসানো টিউবওয়েলে পানি থাকে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর ইউনিয়নের পাইককান্দি গ্রামে প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই টিউবওয়েল রয়েছে। টিউবওয়েল থাকলেও বেশির ভাগ টিউবওয়েলে নেই পানি। কোনো কোনো টিউবওয়েলে সকাল ও সন্ধ্যার পর কিছু পরিমাণ পানি উঠছে। যেখানে সরকারি সাবমার্সেবল পাম্প রয়েছে সেখান থেকে অনেকেই সংগ্রহ করছে পানি। শত চাপেও টিউবওয়েলে উঠছে না পানি

পাইককান্দি গ্রামের বাসিন্দা সালেহা বেগম জানান, প্রায় এক সপ্তাহ হতে চলল তার বাড়ির টিউবওয়েল থেকে পানি উঠছে না। ৫০টি চাপ দেওয়ার পর এক গ্লাস পানি উঠছে। পানির অভাবে নানা ধরনের সমস্যায় ভুগছেন তার পরিবার। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধ নারীরা অনেক কষ্টে রয়েছেন।

নবাবপুর ইউনিয়নের মেছুয়াঘাটা এলাকার কৃষক বাদল মিয়া জানান, পানি না ওঠায় তিনি মাঠে ফসল চাষ করতে পারছেন না। এখন পাট চাষের উপযুক্ত সময়। জমিতে সেচ দিয়ে পাটের চারা রোপণ করতে হবে। কিন্তু পানি না ওঠায় তিনি পাটের বীজ রোপণ করতে পারছেন না।

বালিয়াকান্দি উপজেলা সহকারী প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম বলেন, বালিয়াকান্দির ৬০ শতাংশ পরিবারে এখন পানির অভাব রয়েছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে এ অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের ওপর প্রভাব পড়ছে। প্রতি বছর পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। আগামী দিনগুলো আরো কঠিন হয়ে পড়বে। নিরাপদ পানি ও শুষ্ক মৌসুমে পর্যাপ্ত পানি পেতে হলে পরিকল্পনা করে টিউবওয়েল স্থাপন করতে হবে।  তিনি আরো বলেন, আমাদের বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। তবে যারা সাবমারসিবল পাম্প অথবা তারা টিউবওয়েল বসিয়েছে তাদের কোনো অসুবিধা হচ্ছে না।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন