বৃহস্পতিবার, ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

লালমনিরহাটে ২০ দিনেও খোঁজ নেই মাদ্রাসা ছাত্র আপনের উদ্ধারের দাবীতে মানববন্ধন 

লালমনিরহাটে ২০ দিনেও খোঁজ নেই মাদ্রাসা ছাত্র আপনের উদ্ধারের দাবীতে মানববন্ধন 
লালমনিরহাট  সংবাদদাতা।।
লালমনিরহাটে ২০দিন ধরে নিখোঁজ মাদ্রাসার হিফ্জ শাখার চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র আলাউদ্দিন সরকার আপন (১২)। থানায় জিডি করেও কোনো হদিস পাচ্ছে না তার পরিবার। সন্তানকে হারিয়ে পালিত মা অলেকা বেগম এখন পুলিশ প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। শিশু আপন অপহরণ নাকি নিখোঁজ এ নিয়ে এখন দেখা দিয়েছে নানা গুনজন।
সন্তানকে ফিরে পেতে মঙ্গলবার ৪ জুন সকাল ১১টায় জেলার প্রাণকেন্দ্র মিশনমোড়ে পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসি প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করে মানববন্ধন করেছে। মানববন্ধন শেষে সন্তানকে ফিরে পেতে এলাকাবাসী সহ জেলা প্রশাসক লালমনিরহাট এর নিকট একটি স্বারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় আলাউদ্দিন সরকার আপনের বাবা মোঃ জরিপ উল্লাহ প্রশাসনের নিকট সন্তানকে ফিরে পাওয়ার আবেদন জানান।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের মালীটারী তালিমুল কুরআন রহমানিয়া হাফিজিয়া মাদরাসা থেকে গত ১৫ মে ২০২৪ ইং তারিখ শিশু আলাউদ্দিন সরকার আপন নিখোঁজ হয় বলে থানায় জিডি করেন আপনের বাবা জরিপ উল্লাহ। জিডির পর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া না পাওয়ায় নিজেরাই আপনকে খুজতে থাকে কিন্তু দির্ঘ ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত আপনের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি।
শিশু আলাউদ্দিন সরকার আপনের ফুফু এবং পালিত মা অলেকা বেগম জানান, আপনের মা মারা যাওয়ার পর তার ভাই জরিপ উল্লাহ আবার বিয়ে করেন। এরপর সৎ মায়ের সংসারে আপনকে মেনে নিতে না পারায় তারা তাকে নির্যাতন করতো। এর পরেই তিনি ফুফু হয়ে আপনের মায়ের দায়িত্ব নেন এবং তার কাছেই আপনকে রাখেন। তারপর তাকে ৩ বছর আগে ওই মাদরাসায় ভর্তি করে দেন।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার হারাটি ইউনিয়নের মালীটারী তালিমুল কুরআন রহমানিয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসায় (আবাসিক) থেকে আরবী হিফ্জ শাখা ও বাংলা চতুর্থ শ্রেণিতে পড়তো শিশু আপন। অলেকা বেগম নিজে একটি চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাতেন। গত ১৬ মে মাদরাসার সুপার তাকে ফোন করে জানায় তাদের সন্তান দুপুরে খাবারের কথা বলে যাওয়ার পর তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। খবর শুনে সাথে সাথে মাদরাসায় ছুটে যান অলেকা বেগম। শিশু সন্তান আপন কোথায় গেল বা কে নিলো তার কোনো খোঁজ না পাওয়ায় গোটা পরিবার উদ্বিগ্ন। আপন তার বাবার কাছে গিয়েছে কিনা, বা অন্য কেউ তাকে তার বাবার কাছে নিয়ে গিয়েছে কিনা তারও কোনো খোঁজ পুলিশ বের করতে পারেনি।
ফুফু অলেকা বেগম জানান,  আপনের বাবার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই। আপনের বাবাও কোনোদিন ছেলের খোঁজ নেননি। মাদরাসা কর্তৃপক্ষই তাদের ছেলেকে টাকা চুরির অপবাদে গুম করে রেখেছেন।
দির্ঘদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও যখন ছেলে আপনকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না তখন শিশুটির পালিত মা গত ১জুন দুপুরে সন্তানের খোঁজে আবারও মাদরাসায় যান। এসময় মাদরাসা গভর্নিং কমিটির নির্বাহী সদস্য এনামুল ও মাদরাসা শিক্ষক ভোলা মামুদসহ আরো কয়েকজন গালিগালাজসহ চুলের মুঠি ধরিয়া বেধরক মারতে থাকে এবং বলে এখানে তোদের কোন সন্তান নাই এখনি এখান থেকে চলে যা নইলে তোদের সবাইকে ওপারে পাঠিয়ে দিব। পরে স্থানীয় লোকজন আগাইয়া আসলে তারা হুমকি দিয়ে চলে যায়।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসা এলাকার অনেকে বলছেন, চুরির অপবাদে হয়তো শিশুটিকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। তা নাহলে এতো দিনেও  শিশুটির কোন খোঁজ নাই কেন.? এদিকে পুলিশও শিশুটির কোন খোঁজ পাননি।
এ বিষয়ে মালিটারী তালিমুল কোরআন হাফিজিয়া মাদরাসার সুপার ওসমান গনি জানান,আমরা চারিদিকে খোঁজার জন্য লোক লাগিয়েছি। সন্তানকে খুঁজতে আসলে তাদেরকে মারা হলো কেন জানতে চাইলে এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট সদর থানার (ওসি) ওমর ফারুক বলেন, এ ব্যাপারে থানায় একটি সাধারন ডায়েরী ও গত ১জুন একটি অভিযোগ দিয়েছেন শিশুটির পরিবার। শিশুটি আসলে কোথায় আছে তার তদন্ত চলছে। তারপরেও সব জায়গায় ছেলেটির ছবিসহ সংবাদ পাঠানো হয়েছে হয়তো খুব তারাতারী আমরা তাকে খুঁজে পাবো।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন