মাদক কারবারির বাড়ি খুঁড়ে মিলল যুবকের হাড়- মাথার খুলি
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : প্রায় ১ বছর ২ মাস আগে সাভারের ইমান্দিপুর এলাকা থেকে নিখোঁজ হন তোফাজ্জল হোসেন ওরফে টুনো (২৮)। অপর একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার আসামিদের দেওয়া তথ্যে টুনোকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানতে পারে ঢাকা জেলা (উত্তর) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পুলিশ।
তাদের দেওয়া তথ্য অনুসারে সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনে মাদক কারবারি স্বপনের দুইতলা ভবনের নিচ তলার একটি কক্ষে মাটি খুঁড়ে তারা। মাটির ৭ ফুট নিচ থেকে উদ্ধার করা হয় বেশ কয়েকটি হাড় ও মাথার খুলি। এ ছাড়া একই স্থান থেকে পাওয়া একটি শার্ট, যা টুনোর বলে নিশ্চিত করেছেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
ডিবির কর্মকর্তারা জানান, গত ২ জুন সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের খনিজনগর এলাকা থেকে সীমা আক্তার নামে এক নারী নিখোঁজ হন। বিষয়টি জানতে পেরে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) মোবাশশিরা হাবীব খানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে সাইফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া খনিজনগর এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া অবস্থায় সীমা আক্তারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
সাইফুল সাভারের আনন্দপুর সিটি লেনে মাদক কারবারি স্বপনের দুইতলা ফাঁকা বাড়ির নিচতলায় মাটির নিচে টুনোকে হত্যার পর পুঁতে রাখা হয়েছে বলে ডিবিকে জানান। ডিবি ওই তথ্যের সূত্র ধরে সোমবার ওই বাড়িতে মাটি খোঁড়া শুরু করেন। তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো মরদেহের সন্ধান পাননি তারা।
মঙ্গলবার (১১ জুন) ধামরাই উপজেলার কুল্লা থেকে মাদক কারবারি স্বপনকে গ্রেপ্তার করেন তারা। স্বপনের দেওয়া তথ্যে ওই বাড়িতে পুনরায় খুঁড়ে ৭ ফুট মাটির নিচ থেকে বেশ কয়েকটি হাড় ও মাখার খুলি উদ্ধার করেন তারা।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সীমা অপহরণ এবং পরবর্তীতে যে সীমা হত্যাকাণ্ড, এই মামলার সূত্র ধরে ঢাকা জেলা পুলিশের ডিবি ও সাভার থানা পুলিশ সাইফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে। ওই মামলায় সাইফুল আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন ও কীভাবে সীমাকে মারেন ও হত্যাকাণ্ড করলেন এ ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা জানিয়ে ও আদালতে আরও পাঁচজনের নাম প্রকাশ করেন। সেখানেই স্বপনের নাম উঠে আসে। ওই ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে ধামরাইয়ের কুল্লা এলাকা থেকে আসামি স্বপনকে ডিবি গ্রেপ্তার করে। এরই মধ্যে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে টুনো নামে এক ব্যক্তির অপহরণের ঘটনা ঘটে। যে ঘটনা সাভার থানা পুলিশ তদন্ত করছিল, সেই ঘটনায়ও আমরা স্বপনের নাম পাই।
তিনি বলেন, স্বপনকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে এই হত্যাকাণ্ডেও স্বপন তার সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে। সে তাকে অপহরণ করে হত্যার পর তার নির্মাণাধীন বাড়ির নিচে মাটি চাপা দেয়। স্বপন একজন সিরিয়াল কিলার। সে মাদক ব্যবসায়ী। এর আগে ডিবির একটি টিম স্বপনের স্ত্রী ও স্থানীয় এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তার করে। ওই ঘটনায় স্বপন সিমাকে হত্যা করে। একই রকম কারণে সে টুনোকেও হত্যা করে।
মরদেহ শনাক্তের বিষয়ে এসপি বলেন, এখানে লাশের পাশে যে শার্টটি পাওয়া গেছে, সেদিনের অপহরণের আগ মুহূর্তে একই শার্ট তার পরনে ছিল। তার স্ত্রী এসে শার্টটি শনাক্ত করেন। এর পরবর্তীতে আমরা ডিএনএ করে লাশটি টুনোর কি না তা নিশ্চিত হব। তবে প্রাথমিকভাবে স্বপন স্বীকার করেছে, এটি সেই ঘটনা ও এটি টুনোর মরদেহ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী মরদেহটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা তাকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করবো এই আরও কোনো নিখোঁজের অভিযোগ থাকলে সেটি ধরেও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি বলেন, মূলত মাদকের ব্যবসার কারণেই তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয় অপহরণ করা হয়, তাকে শ্বাসরোধ করে মাটি চাপা দিয়ে তাকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আরও কে কে জড়িত ছিল সে বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করলে হয়ত আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।
নিখোঁজ টুনোর চাচা ওসমান গণি বলেন, ইয়াবা ট্যাবলেটের বিরোধ ধরেই তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিল। স্বপন ১০-১২ জন শ্রমিক রেখে আনন্দপুরে ইয়াবা বিক্রি করত। একইভাবে ইয়াবা ইমান্দিপুরেও পাঠাতো। কিন্তু টুনোরা প্রতিবাদ করতো যাতে ইমান্দিপুরে ইয়াবা না পাঠায়। এটি নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝেমধ্যে দ্বন্দ্ব লাগত। নিখোঁজের সময় ছিল রোজার মাস। ২৮ রমজানে সে আমার সঙ্গে তারাবি পড়ছে। তারপরই নিখোঁজ। আর খুঁজে পাইনি। থানায় বলেছি, অভিযোগ করেছি। অবশেষে ডিবি কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। এই লোক সন্ত্রাস। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই, ওর ফাঁসি চাই।