বুধবার, ১৮ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

আজ ১৪ই ডিসেম্বর পাঁচবিবি হানাদার মুক্ত দিবস 

আজ ১৪ই ডিসেম্বর পাঁচবিবি হানাদার মুক্ত দিবস 
পাঁচবিবি (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি:আজ শনিবার ১৪ ডিসেম্বর পাঁচবিবি হানাদার মুক্ত দিবস। ৭১’ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাঁচবিবির আকাশে উড়িয়ে দিয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশের বিজয়ের পতাকা। পাঁচবিবি হয়েছিল হানাদার মুক্ত।
আজ প্রত্যুষে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আসাদুজ্জামান বাবুল শ’দেড়কে মুক্তিযোদ্ধাসহ বিজয়ীর বেশে হিলি (পশ্চিম বঙ্গ) অঞ্চল থেকে বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখেন। পাঁচবিবি থানার ভূঁইডোবা গ্রাম হয়ে মুক্তিযোদ্ধারা সকাল ১০ টার দিকে পৌঁছান সদরের থানা চত্বরে স্বাধীনতার রক্ত পতাকা উত্তোলন করেন গুলি বৃষ্টির মধ্যে আসাদুজ্জামান বাবলু। এরপর তিনি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ মোত্তালেব ও খন্দকার আলমগীরের উপর পাঁচবিবির দায়িত্ব দিয়ে জেলা সদরের দিকে দলবলসহ যাত্রা করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ছিল পাঁচবিবিতে হাটের দিন (উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম হাট)। শত্রু কবলমুক্ত পাঁচবিবিতে মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবরে শতশত হাটুরে মানুষ অভিনন্দিত করার জন্য ছুটে আসে থানার দিকে।
মুক্তিযোদ্ধা জনতার আনন্দ কোলাহলের ভেতরে গগণ বিদারী শ্লোগান জয় বাংলা ধ্বনি ও অসংখ্য ফাঁকা গুলির শব্দ এবং করতালি ও হর্ষধ্বনির মাঝদিয়ে দ্বিতীয়বার লাল বিহারী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় অঙ্গণে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা তোলের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আঃ মোত্তালেব। জেলার মধ্যে পাঁচবিবি থানায় প্রথম হানাদার পাক বাহিনীর দখলে যায়। আবার শত্রু মুক্তও হয় সবার আগে।
১৯৭১ সালের ২০ শে এপ্রিল মঙ্গলবার সংগ্রাম কমিটির শামছুল হোদা সরদার এবং ইপিআর বাহিনীর মকবুল হোসেন ও হাওলাদারের নেতৃত্বে ইপিআর মুক্তিযোদ্ধার একটি দল অপারেশনের জন্য জয়পুরহাটে মুসলিমলীগ নেতা আঃ আলীমের বাস ভবনে যায়। এ সময় পাঁচবিবি ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। ঐ দিন বেলা আড়াইটার দিকে পাকবাহিনীর দল পাঁচবিবি হাটে এসে পৌঁছায় এবং এলোপাতারি গুলিবর্ষন করতে থাকে। হাটে পাকবাহিনীর গুলি বর্ষণের সময় প্রাণ ভয়ে সকলেই পালাতে থাকে।
পাকিস্থানীর গুলিতে নিহত আঃ সাত্তার পাগলা (দানেজপুর), নজরুল ইসলাম (দিবাকরপুর), গরু-মহিষের দড়ি বিক্রেতা রমজান আলী, ইয়াকুব আলী (দামোদরপুর), পুলিশ বাহিনীর একজন সদস্য (থানা আক্রমন কালে), হাট থেকে চিরতরে নিখোঁজ হন আয়মারসুলপুরের হাজী মনিরউদ্দিনের হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক ও সংস্কৃতি কর্মী বিমল কুমার কুন্ডুসহ আরো নাম না জানা অনেকে।
পাঁচবিবি হাটে রাস্তার এক পাশেই ননীগোপাল কুন্ডুর দোকানে উড়ছিল স্বাধীন বাংলার মানচিত্র খচিত জয় বাংলা পতাকা। গুলিতে ঝাঁঝড়া হয়ে যায় ননীগোপাল কুন্ডু ও পতাকার বুকও। তার ভগ্নিপতি নীলমনি কুন্ডু গুরুত্বর আহত হন এবং পরে মারা যান। হানাদার সৈন্যরা দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট থেকে পাঁচবিবিতে আসার পথে তুলশি গঙ্গা নদীর তীরে ফিচকাঘাটে আদিবাসী যুবক ভজেন বর্মনকে গুলি করে হত্যা করে। এছাড়া লোকমান হোসেন (জয়পুরহাট কলেজের নেতা), মীর আকবর (আ’লীগ সভাপতি), ইউসুফ উদ্দিন সরদার( জোতদার), ইলিয়াস উদ্দিন সরদার (পশু চিকিৎসক), ইউনুস উদ্দিন সরদার (সমাজ সেবী), ময়েজ উদ্দিন ফকির, কাদের বক্স, বিশারত উল্লাহ, জমির উদ্দিন (ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী) কে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্থানী সৈন্যরা।
হানাদার সৈন্যরা একই সঙ্গে পাঁচবিবি থানা, লাল বিহারী উচ্চ বিদ্যালয়, নছির মন্ডল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও ছাত্র ইউনিয়ন অফিসে হামলা চালায় এবং জ্বলিয়ে দেয়। পাঁচবিবির প্রথম শহীদ মিনারটি মার্টারের গোলায় বিধ্বস্থ করে। সে সঙ্গে আশে পাশের কয়েকটি গ্রামেও হামলা চালায় এবং জ্বালিয়ে দেয় বহু সংখ্যক ঘরবাড়ি। ২০ শে এপ্রিল থেকে (২৬৮ দিন) বিজয় অর্জনের পূর্ব পর্যন্ত পাক সেনারা গণহত্যা চালিয়ে যায়। পাকবাহিনীর সব থেকে ভয়ংকর বধ্যভূমি এখনকার বকুলতলা। ট্রেন যোগে থানার বাহিরের শত শত লোককে এখানে এনে নির্বিচারে হত্যা করা হতো। এখন এসব ইতিহাস। এ দিনটি পালন উপলক্ষে পাঁচবিবি উপজেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন