শনিবার, ১১ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

বয়স্কভাতা ১০০ বিধবাভাতা ৫০ টাকা বাড়ল

বয়স্কভাতা ১০০ বিধবাভাতা ৫০ টাকা বাড়ল

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : সামাজিক সুরক্ষাখাতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে বরাদ্দ সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি কয়েকটি কর্মসূচিতে ভাতার পরিমাণও বাড়ানো হচ্ছে। এর মধ্যে বয়স্কভাতা ১০০ টাকা ও বিধবাভাতা ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ভাতা কিছুটা বৃদ্ধির পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়বে। চলতি ২০২২–২৩ অর্থবছরের বাজেটে সামাজিক সুরক্ষা খাতে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত বাজেটে এ খাতে এক লাখ ২৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

আগামী অর্থবছরেও নগদ সহায়তা বা ভাতার জন্য থাকছে আটটি কর্মসূচি। চলতি অর্থবছরে এই আট কর্মসূচিতে বরাদ্দ রয়েছে ৪১ হাজার ৮২১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ ৩ হাজার কোটি টাকা বেড়ে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। কর্মসূচি আটটি হলো বয়স্কভাতা, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা; হিজড়া, বেদে ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের ভাতা; মা ও শিশুসহায়তা কর্মসূচি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা, শহীদ পরিবার ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও সম্মানী ভাতা এবং সরকারি কর্মচারীদের অবসর ভাতা।

আগামী অর্থবছরে এ আট কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ করা ৪৫ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে ৮ লাখের কাছাকাছি অবসরভোগী সরকারি কর্মচারীর অবসর ভাতা বা পেনশন বাবদ।

সরকার সাত বছর পর দেশের গরিব বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা এবং প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতা কিছুটা বাড়াচ্ছে। কোনো কর্মসূচিতে বাড়ানো হচ্ছে ১০০ টাকা, কোনো কর্মসূচিতে আবার ৫০ টাকা। ভাতার পাশাপাশি উপকারভোগীর সংখ্যাও কিছুটা বাড়বে।

বর্তমানে বয়স্ক ভাতা দেয়া হয় ৫৭ লাখ ১ হাজার নারী-পুরুষকে। প্রস্তাবিত বাজেটে এ ভাতাভোগী ১ লাখ বাড়ানো হবে। তাদের ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হবে ৬০০ টাকা। এ ছাড়া বর্তমানে ২৪ লাখ ৭৫ হাজার বিধবাকে মাসিক ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হয়। এ কর্মসূচিতেও এক লাখ ভাতাভোগী বাড়বে। আর ভাতা বাড়বে ৫০ টাকা। অর্থাৎ আগামী অর্থবছর থেকে বিধবারা ভাতা পাবেন ৫৫০ টাকা করে। এখন মোট ২৩ লাখ ৬৫ হাজার প্রতিবন্ধী ভাতা পান। আগামী অর্থবছরে এ সংখ্যা ৫ লাখ ৩৫ হাজার বাড়িয়ে করা হবে ২৯ লাখ। তবে ভাতার পরিমাণ আগের মতো ৮৫০ টাকাই রাখা হচ্ছে। কিন্তু প্রতিবন্ধী ছাত্র/ছাত্রীদের মাসিক শিক্ষা উপবৃত্তির হার বাড়িয়ে প্রাথমিক স্তরে ৭৫০ টাকা থেকে ১০০০ টাকায়, মাধ্যমিক স্তরে ৮০০ টাকা হতে ৯৫০ টাকায় এবং উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে ৯০০ টাকা হতে ৯৫০ টাকা করা হয়েছে।

হিজড়া জনগোষ্ঠীর ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৮১৫ জন হতে ৬ হাজার ৮৮০ জনে উন্নীত করা এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬০০ জন হতে ৫ হাজার ৬২০ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে। অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন কার্যক্রমে উপকারভোগীর সংখ্যা ৬৯ হাজার ৫৭৩ জন হতে ৮২ হাজার ৫০৩ জনে বৃদ্ধি করা এবং বিশেষ ভাতাভোগীর সংখ্যা ৪৫ হাজার ২৫০ জন হতে ৫৪ হাজার ৩০০ জনে উন্নীত করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে। এছাড়া, বাজেটে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির জন্য বরাদ্দ ১০০ কোটি টাকা বাড়ানো হয়েছে। বর্তমানে এ খাতে বরাদ্দ ৪ হাজার ৪১৭ কোটি টাকা। উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা মোট ২১ হাজার ৯০৩ জন হতে ২৬ হাজার ২৮৩ জনে বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে শিক্ষাবৃত্তির হার বাড়বে না।

মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির উপকারভোগীর সংখ্যা ১২ লাখ ৫৪ হাজার জন থেকে ১৩ লাখ ৪ হাজার জনে উন্নীত করা; অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসংস্থান কার্যক্রমে উপকারভোগীর ভাতার হার দৈনিক ২০০ টাকার পরিবর্তে ৪০০ টাকায় বৃদ্ধি করার প্রস্তাব করা হয়েছে বাজেটে।

খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় টিআর, জিআর, ভিডব্লিউবি, ওএমএস, খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, ভিজিএফ ইত্যাদি ১১টি শ্রেণিতে ১৫ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে চলতি অর্থবছরে। আগামী অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ দুই হাজার কোটি টাকা বাড়নো হয়েছে। এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার সাধারণ মানুষের কাছে কম দামে চাল ও আটা বিক্রি করে। আবার কাজের সুযোগ তৈরি করতে গ্রামে বিভিন্ন প্রকল্প নেয়া হয়।

আগামী অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি ১২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। করোনার কারণে এসএমই খাতকে সুদ ভর্তুকি বাবদ ৫ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। করোনার ঝুঁকি কমে যাওয়ায় এ শ্রেণিতে বরাদ্দ অনেকটাই কমবে নতুন বাজেটে।

১০০ কোটি টাকার জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল, ১২৫ কোটি টাকার নারী উন্নয়ন ও নারী উদ্যোক্তাদের তহবিলসহ চলতি অর্থবছরের বাজেটে ৯টি তহবিল ও কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ রয়েছে সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। এ বরাদ্দ কিছুটা কমানো হয়েছে প্রস্তাবিত বাজেটে। কারণ কোনো কোনো কর্মসূচি বাদ দেয়া হতে পারে। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র, জয়িতা ফাউন্ডেশনের মতো মোট ১৩টি কর্মসূচিতে আগামী অর্থবছরে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৫০ কোটি টাকা করা হয়েছে।

সামাজিক সুরক্ষার ১১৫টি কর্মসূচির মধ্যে কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, খোলাবাজারে বিক্রির (ওএমএস) মতো খাদ্যনিরাপত্তা কর্মসূচি যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে দুর্যোগসহায়তা কার্যক্রম। কিছু কিছু ঋণসহায়তা কার্যক্রম, উন্নয়ন খাতের ৫০টির মতো প্রকল্প, ৮টি কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়কে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় দেখায় সরকার। এতে মোট সুফলভোগীর সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৫৩ কোটি।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুফলভোগীর সংখ্যা বেশি দেখাতে এমন প্রকল্প ও কর্মসূচিকে সরকার সামাজিক সুরক্ষা খাতে দেখায়, যা আসলে সামাজিক সুরক্ষা নয়। যেমন অর্থ বিভাগ জয়িতা ফাউন্ডেশনের সক্ষমতা উন্নয়ন ও ভবন নির্মাণ প্রকল্পকেও সামাজিক সুরক্ষার মধ্যে দেখিয়েছে সরকার।

আগামী অর্থবছরেও খাদ্যনিরাপত্তা ও কর্মসৃজন কর্মসূচির ১১ বিষয়, বৃত্তি বাবদ ছয়টি, নগদ ও খাদ্যসহায়তাসংক্রান্ত ১৭টি, ঋণসহায়তার ২টি, বিশেষ সম্প্রদায় ও জনগোষ্ঠীর ১৩টি, বিভিন্ন তহবিল ও কর্মসূচি ৯টি এবং ৫০টি উন্নয়ন কর্মসূচি বাবদ বরাদ্দ থাকছে। যেসব খাত সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি নয়, সেগুলোকেও বাজেটে এ খাতে দেখানো হচ্ছে।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন