কিংস, মোহামেডানের আছে; আবাহনীর নেই
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী এবং জনপ্রিয় ক্লাব ঢাকা আবাহনী। পেশাদার ফুটবল লিগে সর্বাধিক বারের চ্যাম্পিয়নও এই ক্লাবটি। সেই আবাহনীর নেই নিজস্ব লোগো সম্বলিত কোনো টিম বাস।
ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে পেশাদার লিগ হলেও অংশগ্রহণকারী ক্লাবগুলোর অধিকাংশই অপেশাদার। মোহামেডান, বসুন্ধরা কিংস, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র, চট্টগ্রাম আবাহনী, বাংলাদেশ পুলিশ ছাড়া অন্য কোনো ক্লাবের নেই নিজস্ব লোগো সম্বলিত বাস। রহমতগঞ্জ, শেখ জামালসহ অন্য ক্লাবগুলোর মতো ঢাকা আবাহনীও ভাড়া বাস ব্যবহার করে। ঢাকা আবাহনী সুদীর্ঘকাল ধরে ভাড়া বাসই ব্যবহার করে আসছে। গতকাল সিলেটে এএফসি কাপের প্লে অফ ম্যাচে আবাহনীর বাস প্রসঙ্গটি আবার উঠে এসেছে। আবাহনীর ফুটবলারদের কয়েকজনকে বাসে এবং কয়েকজন সিএনজিতে করে স্টেডিয়াম যাওয়ার ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কয়েকজন খেলোয়াড় সিএনজিতে যাওয়ার কারণটি অবশ্য ক্লাব এবং ফেডারেশন সূত্রে জানা গেছে, ম্যাচ কমিশনার স্টেডিয়ামের সামনে পার্কিংয়ে হোম এন্ড অ্যাওয়ে দলের একটির বেশি বাস অ্যালাউ করেনি। সিলেটের বাসগুলোতে ৩০ জনের বেশি আসন নেই। তাই ২৩ জনের স্কোয়াড এবং কোচিং স্টাফ বাসে গিয়েছে আর যারা দলের বাইরে তারা সিএনজিতে স্টেডিয়ামে গেছেন। ম্যাচের আগে দুই দিন আবাহনী দু’টি বাসই ব্যবহার করেছে অনুশীলনের জন্য। মালদ্বীপের ক্লাব ঈগলসের জন্য বড় বাস ঢাকা থেকে সিলেট নিয়েছিল আবাহনী। সিলেটে গতকালের বিষয়টির ব্যাখ্যা থাকলেও আবাহনীর ভাড়া বাস ব্যবহারেই সংস্কৃতি। ঘরোয়া লিগ যখন ঢাকায় হতো তখন সিটি পরিবহণের সাদা বাসে ধানমন্ডি থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম আসা-যাওয়া করত আবাহনী ফুটবল টিম। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সংস্কার চলায় এখন কুমিল্লা, মুন্সিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রাজশাহীতে খেলা হচ্ছে। ভেন্যু অনুযায়ী আলাদা আলাদা রুটের বাস ঠিক করে ক্লাবটি। আবাহনীর মতো শীর্ষ ও জনপ্রিয় ক্লাবের নিজস্ব বাস কেন নেই এই প্রশ্নে কোনো মন্তব্য করেননি দলটির এক যুগের বেশি সময়ের ম্যানেজার সত্যজিত দাশ রুপু। আবাহনীর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডানে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকেই মোহামডোনের সঙ্গী সাদা-কালো বাস। দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম অনুষঙ্গও সেই বাসটি। জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ইমতিয়াজ সুলতান জনি আবাহনী ও মোহামেডান উভয় দলেই বেশ কয়েকটি মৌসুম খেলেছেন। দুই ক্লাবের বাসের সংস্কৃতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আবাহনীতে আমরা সুপিরিয়র পরিবহন বাসে আসা যাওয়া করতাম। বাসটি অন্য দিন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার হতো খেলার দিন আমরা যাতায়াত করতাম। মোহামেডানে নিজেদের বাসই ছিল। সেই বাসে আমাদের ও পরবর্তী প্রজন্মের কত স্মৃতি।’ক্লাবে ক্ষমতা পালাবদল-শিরোপা খরা হলেও নিজস্ব বাসে চলাচল কখনো পরিবর্তন হয়নি মোহামেডানের। পুরনো বাসটি জরাজীর্ণ হলেও ক্লাবের এক কোণে সযত্নে রয়েছে ঐতিহ্যের প্রতীক হিসেবে। বছর ছয়েক ধরে মোহামেডানে যুক্ত হয়েছে নতুন দু’টি এসি বাস। সেগুলো ক্লাবের লোগো বসিয়ে এখন পুরোদস্তুর মোহামেডানের বাস। ক্লাবের বাস ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ফুটবল ম্যানেজার ইমতিয়াজ আহমেদ নকীব বলেন,‘ আমাদের দুই বাসে দুই ড্রাইভার ফিক্সড। অনুশীলন, খেলা প্রায় সব জায়গায় আমরা এই বাস ব্যবহার করছি। ট্যাক্স ও গাড়ির সকল বিষয় আমরা আপটুডেট রাখি ফলে সকল রুটেই চলে নির্দ্বিধায়। ’ ঘরোয়া ফুটবলে এক সময় শুধু মোহামেডানেরই বাসে স্বকীয়তা ছিল। রেলিগেশন লড়াই করা চট্টগ্রাম আবাহনী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্রের নিজস্ব বাস রয়েছে। কর্পোরেট দল সাইফ স্পোর্টিংয়েরও ছিল নিজস্ব পরিবহণ। প্রিমিয়ার লিগের হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসও শুরু থেকে নিজেদের বাসেই চলাফেলা করছে। দেশের আরেক জনপ্রিয় ক্লাব ব্রাদার্স ইউনিয়নেরও বাস নেই। গোপীবাগ থেকে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের দূরত্ব স্বল্প হওয়ায় তাদের খেলোয়াড়রা রিকশাতেই অনেক সময় যাতায়াত করে আবার হেটেও যায় অনেক ক্ষেত্রে। ব্রাদার্স ইউনিয়নের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও সংকট রয়েছে। আবাহনী প্রতি মৌসুমেই কোটি কোটি অর্থ দিয়ে দল গড়ে কিন্তু ক্লাবের একটি নিজস্ব বাস করার দিকে নজর নেই কর্তাব্যক্তিদের।