বিশ্বকাপে রানখরায় শান্ত, যা বলছেন তার গুরু
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : বাংলাদেশ ক্রিকেটে বেশ প্রমিজিং ক্রিকেটার হিসেবেই আবির্ভাব ঘটেছিল নাজমুল হোসেন শান্তর। অনুর্ধ্ব ১৫, ১৭ এরপর যুববিশ্বকাপ খেলেই চলে আসেন বিসিবির সবুজ রাডারে। ফলশ্রুতিতে ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন টাইগার এই ব্যাটার। এরপর ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ফরম্যাটে অভিষেক হয় শান্তর।
তবে খুব একটা জাতীয় দলের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছিলেন তিনি। কখনো বাদ পড়েছেন, আবার কখনো দলের সঙ্গে থেকেছেন। যদিও স্থায়ী হতে পারছিলেন না। তবে কোভিড পরবর্তী সময়ে জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্যে পরিণত হন শান্ত। এরপর ব্যর্থতার ষোলোকলাও দেখেছেন তিনি। বারবার রান না পাওয়ায় ভক্ত সমর্থকরা এতটাই বিরক্ত হয়েছিলেন যে তিনি জাতীয় ট্রল বা মজার ব্যক্তিতে পরিণত। এমনকি হাস্যরসাত্বক পেজ লর্ড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতিও হন। তবে গেল বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর থেকে শান্ত যেন তৈরি করেছিলেন নিজেকে অন্যভাবে। চলতি বছরটা ২০২৩ সাল শান্তর কাটছিল স্বপ্নের মতো। শুরুতে বিপিএলে সিরিজ সেরার খেতাব জিতে নেন। বিপিএল চলাকালীন অবশ্য শান্ত বলেছিলেন, ‘আমাকে যত যা বলা হয় মনে হয় আমি দেশের বিরুদ্ধে খেলি, আমারও পরিবার আছে।’ এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জেতেন সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। এরপর একে একে আয়ারল্যান্ড, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড সবার সাথে করেছিলেন রান। নিজের হঠাৎ বদলে যাওয়া নিয়ে বিপিএলের সময় গণমাধ্যমে শান্ত বলেছিলেন ঘরোয়ার সফল কোচ সোহেল ইসলামের নাম। শান্ত বলছিলেন, ‘অনেকে জানেন কিনা জানিনা। আমি শেষ দুই, আড়াই বছর ধরে রংপুর রাইডার্সের বর্তমান হেড কোচ সোহেল ইসলামের সাথে কাজ করি। এবং আলহামদুলিল্লাহ্ আমার কাছে যেটা মনে হয়েছে আমার ব্যাটিংয়ে অনেক পরিবর্তন আসছে। এবং আমি অনেক আত্মবিশ্বাসী। তার সাথেই আমি ব্যাটিং নিয়ে সবচেয়ে বেশি কাজ করি। আমি তার প্রতি অনেক কনফিডেন্ট উনি যেভাবে আমাকে নিয়ে কাজ করছেন। যখনই সুযোগ পাই আমি তার সাথে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করি।’ সেই শান্তর ব্যাটিং দেখে অনেকে ধারণা করেছিলেন বিশ্বকাপেও ভালো কিছু করবে শান্ত। কেননা চলতি বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে ২১ ইনিংসে ব্যাট করে ২ সেঞ্চুরির সাথে ৬ অর্ধ-শতকে শান্ত করেছেন ৭৮৫ রান। স্ট্রাইকরেট ৮৮.০৪ এবং এভারেজ ৩৯.২৫। সেই শান্তই বিশ্বকাপে এবার ফ্লপ। ব্যাট হাতে একের পর এক ম্যাচে হতাশ করেছেন। টুর্নামেন্টে কেবল ৭ ম্যাচে ব্যাট করে ১অর্ধ-শতকে করেছেন ৮৭ রান।
শান্তর সবশেষ ৭ ইনিংসের রান দেখলেই বোঝা যাবে কোথায় হারালেন তিনি –
আফগানিস্তান- ৫৯
ইংল্যান্ড-০
নিউজিল্যান্ড-৭
ভারত-৮
দক্ষিণ আফ্রিকা-০
নেদারল্যান্ডস-৯
পাকিস্তান-৪
শান্তর এমন বিবর্ণ টুর্নামেন্টের মধ্যেই তার কোচ সোহেল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হয়। জবাবে ঢাকা পোস্টকে টুর্নামেন্টের আরো অন্যান্য বিয়য় নিয়েও মুখ খুলেছেন তিনি। শুরুতে বাংলাদেশের এমন হতশ্রী পারফর্ম নিয়ে সোহেল বলেন, ‘এটা তো আসলে বলার কিছু নেই! কিছু কি বলার থাকে আর। সাতটা ম্যাচ খেললাম ৬টায় পরাজয় বড় বড় ব্যবধানে সব। হারটারও একটা বিষয় থাকে। কোনো ম্যাচেই আমরা প্রতিযোগিতা করতে পারি নি। মাঠে যাই আর সোজা হেরে যাচ্ছি। কোনো রকম চান্স তৈরি করতেই পারছি না আমরা।’ শান্তর নাজুক ব্যাটিং পারফর্মম্যান্স নিয়ে সোহেল বলেন, ‘দেখেন তার সাথে কিন্তু আমি অনেকদিন ধরেই নেই। যেহেতু সেখানে অনেক কোচ আছে তারা তাকে দেখছে। এখন বর্তমানে সে কোন অবস্থানে রয়েছে সেখানের বর্তমান পরিবেশ, মানসিক কি অবস্থার মধ্যে রয়েছে সেটা তো আসলে বলতে পারব না। আমার এখান থেকে আসলে বলাটাও ঠিক যুক্তিসঙ্গত না।’ আগে দেখা গেছে চাপের মধ্যেই ভালো খেলতেন সাকিব আল হাসান। এবার কি মাঠের বাইরের ইস্যু বা অধিনায়কত্ব নিয়ে বাড়তি চাপ হয়ে গেল সাকিবের, জবাবের সোহেলের ভাষ্য, ‘প্রেশার বলতে আজকে ব্যাটিং দেখে মনে হল প্রেশারে আছে। আমরা যদি…এটা টিম গেম দল যদি পারফর্ম না করে তাহলে অধিনায়কের জন্য কঠিন।’ দলের ব্যাটিং অর্ডার প্রতিদিন পরিবর্তন হচ্ছে এটা কিভাবে দেখছেন সোহেলের জবাব, ‘পরীক্ষা নিরীক্ষা বলব না ব্যাটিং অর্ডার সাজানোর পর মনে হচ্ছে এটা ভালো তবে সেটা দেখা যাচ্ছে পরে আর কাজে দিচ্ছে না। নিশ্চয় কোনো যুক্তি আছে তবে কাজে দিচ্ছে আর কি। আমরা ভালো করছি না তার প্রতিচ্ছবি আর কি। শ্রীলঙ্কার সাথে সুযোগ আছে, আসলে এখন বলাটাও খুব কঠিন।’ অতীতের মতো বিশ্বকাপের মাঝে আরো দুটো ম্যাচ রয়েছে বাংলাদেশ দলের প্রমাণের জন্য। একইসঙ্গে শান্তও পাচ্ছেন নিজেকে প্রমাণ করার জন্য। সবমিলিয়ে বিশ্বকাপর মঞ্চে শান্তর জন্য বড় সুযোগই বলা যায়। এখন এই ব্যাটার নিজেকে প্রমাণ করবেন নাকি অতীতের সেই শান্ত হয়েই বিশ্বকাপ শেষ করবেন সেটা শান্তর উত্তরের কাছেই তোলা থাক।