বুধবার, ৪ঠা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

বাঁশের বেড়ায় তৈরী হওয়া নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এখন উপজেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

বাঁশের বেড়ায় তৈরী হওয়া নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এখন উপজেলার সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

(দিনাজপুর) প্রতিনিধি: উত্তরের জেলা দিনাজপুরের অন্যতম দূরবর্তী খানসামা উপজেলায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৫৯ সালে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বাঁশের বেড়ায় প্রতিষ্ঠিত হওয়া নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় এখন সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জানা যায়, উপজেলার আংগারপাড়া ইউনিয়নের আরাজী যুগীর ঘোপা গ্রামে ১৯৫৯ সালে অত্র অঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে উঠে। ঐ স্কুলের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক মরহুম আব্দুল জব্বার শিক্ষাকে সবার আগে গুরুত্ব দিয়ে খানসামা উপজেলার মত একটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে সকলের সহায়তায় দায়িত্ব ভার গ্রহণ করেন। সেই থেকে সময়ের সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে শিক্ষার্থী সংখ্যা ও স্কুলের অবকাঠামো। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাকেরহাট থেকে চেহেলগাজী যাওয়ার রাস্তার পাশে মূল ফটক দিয়ে প্রবেশ করেই দেখা যায় ক্লাস শুরু হওয়ার আগেই চলছে জাতীয় সংগীত গাওয়া ও পিটি-প্যারেড। এরপরে একটু এগুলেই চোখে পড়বে ৩ তলা ২ টি ভবন, শ্রেণীকক্ষ, খেলার মাঠ, গ্যারেজ ও মেয়েদের কমন রুম। মূল ভবনে রয়েছে প্রধান শিক্ষক কক্ষ, শিক্ষক কক্ষ, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব ও বিজ্ঞান ল্যাবরেটরী। তবে শিক্ষার্থী সংখ্যার চেয়ে শ্রেণীকক্ষ কম হওয়ায় পাঠদান দিতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় বলে জানিয়েছে ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত মোট ৭৭০ জন ছাত্র-ছাত্রী এই স্কুলে পড়ালেখা করছে। এদের পাঠদানের জন্য ১৬ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারী চাকুরীরত আছেন। ২০২৩ সালসহ বেশ কয়েকবার এই স্কুল  উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হওয়া নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের গত কয়েক বছরের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় মানবিক ও বিজ্ঞান শাখার ১৩৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশের হার শতকরা ৯৭.০৪% ও জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ৪৭ জন। অন্যদিকে ২০২২ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ১২৬ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে শতকরা পাশের হার ৯৭.৬২% ও জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ জন। সেই সাথে বৃত্তি পরীক্ষায় রয়েছে সাফল্য। এছাড়াও ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানসহ সৃজনশীল নানা আয়োজনে এই প্রতিষ্ঠানের সরব উপস্থিতি আছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত ৪৫তম বিজ্ঞান মেলায় মাধ্যমিক পর্যায়ে উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয়েছে নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়। ঐ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিয়াম আহাম্মেদ মাহি বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই এই স্কুলের শিক্ষার মান ও সুনাম শুনে ভর্তির আগ্রহ। সেই কারণেই এই বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। স্কুলের সকল শিক্ষক আমাদের পাঠদানে অত্যন্ত আন্তরিক সবসময়। খানসামা উপজেলার সেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রতি বছর প্রায় ৫০-৬০ জন শিক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, নার্সিং-এ ভর্তি হয়ে ব্যাপক প্রশংসিত হচ্ছে। এই বিদ্যালয়ের কৃতি শিক্ষার্থীবৃন্দ প্রশাসন, বিচার বিভাগ, প্রকৌশল,চিকিৎসা সেবা ও দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা সহ দেশ সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। সেই দেশের নানা ক্রান্তিলগ্নে এই শিক্ষার্থীরা তাদের সাধ্যমত কাজ করে। ঐ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিসিএস (সড়ক ও জনপথ) এর ৩৭ ব্যাচের কর্মকর্তা মো: আমানউল্লাহ আমান বলেন, এই স্কুলের শিক্ষকদের বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়। পরবর্তীতে এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই মফস্বলের এই স্কুলের শিক্ষার্থীরা উজ্জ্বল স্বাক্ষর রেখে যাচ্ছি।  এ স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী ও খানসামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. শামসুদ্দোহা মুকুল বলেন, আমাদের আবেগের জায়গা হল নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়। এই স্কুলে পড়ে আজ আমি একটা জায়গায় পৌঁছেছি। এইজন্য প্রিয় শিক্ষকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এই প্রতিষ্ঠান শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার সাথে সাথে দেশ ও দশের প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে। শিক্ষক ও কর্মচারীদের মেধা ও পরিশ্রমে এই স্কুল আজ সর্বমহলে প্রশংসিত হয়। স্কুলের অর্জন রাখতে ও পরিসর বৃদ্ধি করতে সকলের সহায়তা ও পরামর্শ প্রয়োজন। খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। যে জাতি যত বেশী শিক্ষিত তারা তত বেশী উন্নত। এই শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে নিউ পাকেরহাট উচ্চ বিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই স্কুলের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন