বগুড়ার সান্তাহার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন সার্কেলে কর্মরত পরিদর্শকের কান্ড
এএফএম মমতাজুর রহমান
আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ
‘মাদক সেবন রোধ করি, সুস্থ সুন্দর জীবন গড়ি’ এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে চলছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কার্যক্রম। অথচ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে কর্মরত থেকেও মাদক সম্পর্কে ধারনা নেই বগুড়ার সান্তাহার সার্কেলের পরিদর্শক রফিকুল ইসলামের। অ্যামারিন ৩৫০পিস ও ইজিয়াম ৩০০পিস এ্যাম্পুল উদ্ধারের পর ‘ঔষধ না মাদক’ এটা বিশ্লেষণ করতেই প্রায় ৩ ঘন্টা অতিবাহিত করেছেন তিনি। এ নিয়ে জনসাধারণের কাছে তিনি ব্যাপক প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছেন। তাদের এই কাজের জন্য বিড়ম্বনায় পড়েছিলেন এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানা। ঘটনাটি ঘটে উপজেলার সান্তাহার পৌর শহরের ববি ফার্মেসী নামের একটি ঔষধের দোকানে। মাদকদ্রব্যের এমন কাজে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।এ যেন অদক্ষ পরিদর্শক দিয়ে চলছে মাদকের কার্যক্রম এমন টাই বলছেন তারা।
জানা যায়, গত ৯ মে মঙ্গলবার বেলা ১২ টায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সান্তাহার সার্কেলের সদস্যরা ৫ জন মাদকসেবিকে আটক করে। আটকের পর মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাকে খবর দেন। মুনিরা সুলতানা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর মোবাইল কোর্টে রায় দেওয়ার আগে সান্তাহার সার্কেলের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম মাদকসেবিদের কথা মতো নেশা জাতীয় দ্রব্য যেখানে বিক্রি হয় সেখানে যান তারা। এরপর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে সান্তাহার পৌর শহরের নতুন বাজার এলাকার মৃত মাসুদ খানের ছেলে পল্লী চিকিৎসক মকছেদ খান ওরফে বিষুর বাড়ির নিচ তালায় ববি ফার্মেসীতে অভিযান চালায় পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম ও তার টিম। সেখান থেকে দুটি ব্যাগে রাখা অ্যামারিন ৩৫০পিস ও ইজিয়াম ৩০০পিস এ্যাম্পুল উদ্ধার করে।
উদ্ধারের পর সেগুলো কি ‘ঔষধ না মাদক’ এটা নিয়ে বিশ্লেষণ শুরু করে পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এরপর তিনি একাধিক জায়গায় খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন। তাদের কার্যক্রম দেখে উৎসুক জনতা ও গনমাধ্যমকর্মী এগিয়ে যান ফার্মেসীতে। সেখানে গিয়ে একে একে প্রশ্ন করেন গনমাধ্যমকর্মীরা। গনমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্ন উত্তরে পরিদর্শক রফিকুল বলেন, আমরা এখানে কি পেয়েছি? ঘুমের ইনজেকশন ইজিয়াম, এটা আমার মধ্যে পড়ে না। অভিযান চলাকালীন পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম জোর দিয়ে বলছিলেন, এখানে যদি একটা এ্যাম্পুল পাইতাম, তাহলে আপনারা আমাকে এখানে এতোণ দেখতে পাইতেন না। যেহেতু ইজিয়াম আমার মধ্যে পড়ে না, তাই আমি কিছু করতে পারছি না। এরপর কি করবেন, না করবেন ভেবে প্রায় ৩ ঘন্টা বিষুর ফার্মেসীতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট মুনিরা সুলতানাকে বসিয়ে রেখে তার ভূমি অফিসের কাজে বিলম্ব করান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সান্তাহার সার্কেলের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম। এদিকে ভূৃমি অফিসে সেবাগ্রহীতারা এসিল্যান্ডের অপোয় দুপুর ১ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত বসে ছিলেন। পরে ওই দিন রাতেই অ্যামারিন ৩৫০পিস তথ্য গোপন রেখে ইজিয়াম ৩০০পিস এ্যাম্পুল উল্লেখ করে মাদক আইনে বিষুর বিরুদ্ধে পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে আদমদীঘি থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযান পরিচালনা করার সময় গণমাধ্যমকর্মী ও জণগনকে বলেছিলেন ইজিয়াম ও অ্যামারিন ঘুমের ঔষধ, এটা অবৈধ নয়, তাহলে বিষুকে কিভাবে গ্রেপ্তার ও মামলা করলেন এবিষয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তেরের সান্তাহার সার্কেলের পরিদর্শক রফিকুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, আমি ইজিয়াম ও অ্যামারিন এ্যাম্পুল জব্দ করে এর আগে কখনো মামলা দেইনি। তাহলে ইজিয়াম ৩০০ পিস এ্যাম্পুলকে অবৈধ উল্লেখ করে মাদক আইনে কিভাবে মামলা করলেন অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আপনি এজাহার দেখেন, এজাহারে সব উল্লেখ আছে। এসময় তিনি বিরক্ত নিয়ে বলেন, আমি বুজতে পারছি না, সেদিনের একটা বিষয় নিয়ে এত প্রশ্ন? এমন কথা বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এদিকে আদমদীঘি ভূমি অফিসে সেবাগ্রহীতা সৈকত খান, মুরাদ, রানা ও কাজিপুর মসজিদ কমিটির সভাপতি সারওয়ার জাহিদ খোকন জানান, বিশেষ একটি কাজে এসিল্যান্ডের অপোয় বেলা ১ টা থেকে সাড়ে ৫ টা পর্যন্ত বসে আছি। এসিল্যান্ড না থাকায় আর কাজ হয়নি। এরপরে জানতে পারলাম মোবাইল কোর্ট করতে তিনি সান্তাহারে গেছেন। পরে শুনলাম বিষু ডাক্তারের ফার্মেসীতে নাকি ঝামেলা হয়েছে। সেখানে দীর্ঘ সময় এসিল্যান্ডকে বসিয়ে রেখেছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সান্তাহার সার্কেলের সদস্যরা।
এ বিষয়ে জানতে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুনিরা সুলতানাকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও ফোন রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
৩০০ পিচ ইজিয়াম এ্যাম্পুলসহ মকছেদ খান ওরফে বিষুকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আদমদীঘি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রেজাউল করিম রেজা।