লালমনিরহাটের তিস্তায় দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন।। পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার
মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।।
লালমনিরহাটের তিস্তা নদীতে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাংঙ্গন।। পানিবন্দী ২০ হাজার পরিবার। সরকারী ভাবে এান বিতরণ অব্যহত।
জানা গেছে,
লালমনিরহাটের তিস্তা নদীর পানি কিছুতা কমলেও আবারও বেড়েছে। অপরদিকে ভয়াবহ নদীর ভাঙন। নদী ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে পড়েছে তিস্তা পাড়ের হাজারো মানুষ। ইতিমধ্যে নদীর গর্ভে বিলীন হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলার ৬ টি ইউনিয়নে প্রায় ২ শতাধিকের বেশি বসতভিটা ও বিভিন্ন স্থাপনা।
হুমকির মুখে রয়েছে বিদ্যালয়, মসজিদ ও মাদ্রাসা। প্রতি বছর নদী ভাঙনে হারিয়ে যাচ্ছে বসতভিটা আর আবাদি জমিসহ নানা স্থাপনা। ২ দিকের ভাঙনে উপজেলার মানচিত্র প্রতি বছর সংকুচিত হয়ে আসছে।চলতি মৌসুমে উপজেলায় প্রায় ২শতাধিক বসতভিটা তিস্তা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
গত কয়েক দিনে হাতীবান্ধা উপজেলার সিন্দুর্না, ডাউয়া বাড়ি, পাটিকাপাড়া, শতাধিক পরিবারের আশ্রয়স্থল বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়ছে। অনেকে বাঁধের রাস্তায় ও সরকারী জমি এবং স্কুলের মাঠে আশ্রায় নিয়েছে। ভাঙন ঝুঁকিতে পড়েছে হাতীবান্ধার গড্ডিমারীর তালেব মোড়ের ওয়াপদা বাঁধ ও হাতীবান্ধা বাইপাস সড়ক, পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি কাজের অংশ হিসেবে স্পার বাঁধ ও চন্ডিমারী বাঁধ রক্ষায় জিও ব্যাগ ফেলছে।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি গ্রামের আবেদ আলী জানান,তিস্তার পানি কমার সাথে সাথে মহুর্তেই ঘরবাড়ি ও বসতবাড়ি ভাঙন দেখা দেয়। এতে প্রায় ৭০ টি ঘর বাড়ি নদীতে বিলিন হয়। অনেক ঘরবাড়ি ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়ছেন।
সিন্দর্না গ্রামের আফিয়ার রহমান জানান, চোখের সামনে বসতভিটা নদীগর্ভে হারিয়ে গেছে। সিন্দুর্না ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ড প্রায় বিলিনের পথে। তিস্তা নদী পাড়ের বাসিন্দাদের একটাই দাবি, আমরা রিলিফ বা ত্রাণ চাই না, তিস্তার বাঁধ চাই। দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের দাবী করেন।
হাতীবান্ধা উপজেলায় ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান জানান, আমার ইউনিয়নের ৬টি ওয়ার্ড নদী তীরবর্তী। সব এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। কয়েক দফা পানি বৃদ্ধির ফলে ৭০টি বাড়ি বিলীন হয়েছে। পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মজিবুল আলম সাদাত বলেন, আমার ইউনিয়নে আংশিকসহ ৭টি ওয়াডের প্রায় ১৫ শত পরিবার পানি বন্দী এবং প্রায় ৭০টি বসত ভিটে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি কমলেও আবারও পানি বৃদ্ধি হচ্ছে। জেলায় ২০ হাজার পরিবার পানিবন্দী বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে আবহাওয়া সংস্থাসমূহের তথ্য অনুযায়ী, দেশের উত্তরাঞ্চল ও তৎসংলগ্ন উজানে আগামী ২৪ ঘন্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস রয়েছে।
আগামী ২৪ ঘন্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীর পানি সমতল সময় বিশেষে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর ফলে ঘাঘট নদীর পানি সমতল গাইবান্ধা পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপদসীমার কাছাকাছি প্রবাহিত হতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম জেলার কতিপয় নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির সামান্য অবনতি হতে পারে।
উত্তরাঞ্চলের বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত স্টেশন: ১৩ টি।
পাটেশ্বরী (দুধকুমার) +০৩, কুড়িগ্রাম (ধরলা) +০৮, নুনখাওয়া (ব্রহ্মপুত্র) +৩৪, হাতিয়া (ব্রহ্মপুত্র) +৩২, চিলমারী (ব্রহ্মপুত্র) +৪৯, ফুলছড়ি (যমুনা) +৪০, বাহাদুরাবাদ (যমুনা) +৫১, সাঘাটা (যমুনা) +৪৪, সারিয়াকান্দি (যমুনা) +৩৩, কাজিপুর (যমুনা) +১৫, জগন্নাথগঞ্জ (যমুনা) +৮৬, সিরাজগঞ্জ (যমুনা) +৩৬, পোড়াবাড়ী (যমুনা) +১০।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চলের উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.):
কুড়িগ্রাম ১৩১.০, গাইবান্ধা ৯২.০, চিলমারী (কুড়িগ্রাম) ৫৮.০ এবং পাটেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) ৫৭.০।
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সংশ্লিষ্ট উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত (মি.মি.):
ধুব্রি (আসাম) ১১০.০ এবং জলপাইগুড়ি (পশ্চিম বঙ্গ) ৩৮.০।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র
বাপাউবো, পানি ভবন, ঢাকা বৃহস্পতিবার ১১ জুলাই ২০২৪ ইং তারিখ এ তথ্য জানান।
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার বলেন, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় ইতিমধ্যে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর রাখছি।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসাদের। তিস্তার ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধ রক্ষায় কাজ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার লালমনিরহাট এান অফিস জানান, পানিবন্দী ও ভাংঙ্গন কবলীত পরিবারদের জন্য ২২ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু করা হয়েছে।