সোমবার, ১লা জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

কলাগাছের তন্তু থেকে প্লঅস্টিক পণ্য ও পরিবেশ বান্ধব পলিথিন তৈরী করে কলেজ ছাত্র সাজ্জাদুল ইসলামের চমক

কলাগাছের তন্তু থেকে প্লঅস্টিক পণ্য ও পরিবেশ বান্ধব পলিথিন তৈরী করে কলেজ ছাত্র সাজ্জাদুল ইসলামের চমক
মৌলভীবাজার প্রতিনিধি: মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী কৃষক সন্তান ক্ষুদে বিজ্ঞানী সাজ্জাদুল ইসলাম কলা গাছের তন্তুকে বিশেষায়িত  করে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প  ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরীর ফরমুলা আবিস্কার করেছে। একই সাথে সে  পঁচা বা অব্যবহৃত সবজীর শে^তসার থেকে তৈরী করেছে পঁচনযোগ্য পলিথিন। তার দাবী এটি পরিবেশ বান্ধব এবং অনেকটা সাশ্রয়ী।

সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, শুধু টাইলস নয় তার আবিষ্কৃত কাঁচামাল দিয়ে প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকনে তৈরি প্লাস্টিকের আসবাবপত্র, টিন, টাইলস ও কার্বনের তৈরি মোটরযানের যন্ত্রাংশের বিকল্প হিসেবে কলাগাছের তন্তু ব্যবহার করা সম্ভব। এমনকি বুলেট ফ্রুফ দরজা জানালাও তৈরী করা সম্ভব। তার আবিষ্কৃত কাঁচামালে ৬৫ শতাংশ কলাগাছের তন্তু ও ৩৫ শতাংশ রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার হয়েছে।
তিনি জানান, তার আবিস্কৃত প্লাস্টিক পণ্য উচ্চ তাপে গলিয়ে সহযেই রাসায়নিক দ্রব্য ও কলাগাছের তন্তু আলাধা করা য়ায়। আর সবজির শে^তসার থেকে তৈরী পলিথিন মাটিতে ১ মাসে ও পানিতে ৩ মাসে পঁচে যাবে। যা মাটির জন্য হবে জৈব সার ও পানিতে হবে মৎস্য খাদ্য।
শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগের প্রভাষক হৃদয় কুমার ভৌমিক জানান, তাদের কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাজ্জাদুল  কলাগাছের সেলুলোজ সমৃদ্ধ তন্তু এর হাইডোঅক্সাইড ও রেজিন ব্যবহার করে একটুরো টাইলস তৈরী করে এবং আলুর শে^তসার থেকে পলিথিন তৈরী করে এনে দেখায়। পরে আমরা সরকরী কলেজের ল্যাবে তাকে এটি করে দেখানোর আহবান জানালে, মঙ্গলবার কলেজের ল্যাবে এই দুই পণ্য তৈরী করে। এ সময় কলেজের অনান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা তা দেখে। তিনি বলেন, সে যে কাঁচামাল ব্যবহার করেছে তা পরিবেশের ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। আরো অধিক গবেষনায় এটি ভালো কোন আবিস্কার হকে পারে।
কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক রোমান মিয়া বলেন, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গøাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। আর তার আবিস্কৃত এ পলিথিন পরিবেশের উপর অপছনশীল পলিথিনের প্রভাব কমাবে।
সাজ্জাদুলের মাধ্যমিক বিদ্যালয় শ্রীমঙ্গল মহাজেরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক ও বর্তমান হুগলিয়া হাজী মনছব উল্লাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কামরুল হাছান জানান, ছোট বেলা থেকেই সাজ্জাদুলের বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিস্কারে ছিল কৌতুহল। এ থেকেই বিভিন্ন কিছু আবিস্কারে তার মনোযোগ আসে। সাজ্জাদুল ইতিমধ্যে কলাগাছের তন্তুকে ব্যবহার করে তৈরী করেছে টাইলস আর অব্যবহৃত সবজীর শে^তসার থেকে তৈরী করেছে পরিবেশ বান্ধব পলিথিন।
শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক বিজন চন্দ্র দেবনাথ জানান, যেহেতু এর প্রধান কাঁচামাল কলাগাছ থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং কলাগাছ সহজলভ্য তাই এটির ব্যবহারে গøাস ফাইবার ও কার্বন ফাইবারের প্রয়োগ কমবে। এতে পরিবেশের উপর অপছনশীল প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার কমবে।
সাজ্জাদুল ইসলাম জানায়, কলাগাছের তন্তু থেকে তৈরী এই কঠিন যৌগ তৈরী করতে তার সর্বোচ্চ ৬৫ ভাগ তন্তু দিলে এর মধ্যে রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রন হবে।  সে জানায়, তার তৈলী টাইলসের ওজন পায় ৩০০ গ্রাম। যার মধ্যে ২০০ গ্রাম কলাগাছের তন্তু ও হাইডোঅক্সাইড ৬০ গ্রাম ও রেজিন ৪০ গ্রাম । সে জানায় রেজিন ব্যবহার করে দীর্ঘ সময় ধরে যেন এটি না পঁচে এবং হাইডোঅক্সাইড রেজিনের অবস্থানকে আরো শক্তিশালী অবস্থান প্রদান করে।
পরিবেশ বান্ধব পলিথিনের জন্য সে ব্যবহার করে বাজারের পরিত্যাক্ত সবজি থেকে সংগ্রহকৃত শে^ত সার, অ্যাসিটিক এসিড ও গিøসারল। মোট দ্রবনের ২৫ শতাংশ গিøসারল ২৫ শতাংশ এসিটিক এসিড ও ২৫/৩০  শতাংশ পানি ও বাকীটা সবজির শে^তসার।
বাংলাদেশের প্রতি বছর প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার ফল ও সবজি অপচয় হয়। এই অপচয়কৃত শস্য থেকে প্লাাস্টিকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার  যোগ্য  পণ্য তৈরি করা  হলে দেশের অর্থনীতিতে আসতে পারে বড় একটা পরিবর্তন ও সাথে সাথে কমে আসবে পরিবেশ দূষন। আর কলাগাছ যেহেতু একবার ফল দেয়ার পর কেটে ফেলে দিতে হয়। তাই কৃষককে অল্প মুল্যদিয়ে তা সংগ্রহ করে এর দ্বারা প্লাস্টিক, কার্বন ও সিলিকন পণ্যের বিকল্প  ব্যবহারযোগ্য পরিবেশ বান্ধব পণ্য তৈরী করা সম্ভব।
ইতোপূর্বে সাজ্জাদুল “বঙ্গবন্ধু সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪” এ মৌলভীবাজার জেলা পর্যায়ে বছরের সেরা মেধাবী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। সে জানায়, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে তার গবেষণা আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে।
সাজ্জাদুলের বাবা একজন দরিদ্র কৃষক। তার বাবার পক্ষে তার গবেষনার খরচ চালানো সম্ভব নয়। তাই তার এ কাজের উৎসাহ অর্থনৈতিক কারনে সামনের দিকে এগুচ্ছেনা। এই মেধাবী ক্ষুদে বিজ্ঞানীকে সরকার কিংবা হৃদয়বান কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্টান পৃষ্টপোষকতা করলে তার দ্বারা ভালো কিছু আবিস্কার আশা করেন তার শিক্ষকরা।
সাজ্জাদুলের বাবার নাম মো. নজরুল ইসলাম। তিনি একজন কৃষক। সাজ্জাদুল শ্রীমঙ্গল সদর ইউনিয়নের  মহাজেরাবাদ গ্রামে পরিবারের সাথে বসবাস করেন এবং শ্রীমঙ্গল সরকারী কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন