সোমবার, ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, ভুয়া ভাউচারে টাকা উত্তোলন

কাজ শুরুর আগেই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ, ভুয়া ভাউচারে টাকা উত্তোলন
মুক্ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ
প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত জুন মাসের ৩০ তারিখে। এখনো শুরুই হয়নি কাজ। ফেরতও দেওয়া হয়নি টাকা। বরং সব টাকা উত্তোলন করা হয়েছে ভুয়া বিল-ভাউচার বানিয়ে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৩৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজে এ অনিয়মের তথ্য উঠে এসেছে। তবে এ বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম। অনুসন্ধানে জানা যায়, চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (পিইডিপি ৪) আওতায় ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ উপজেলার ৩৩ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাইনর মেরামত বাবদ দুই লাখ করে টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কাজ বাস্তবায়নের শেষ তারিখ ছিল গত ৩০ জুন। প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরুই হয়নি কাজ। বরাদ্দপ্রাপ্ত বিদ্যালয়গুলো হলো- বোয়ালী ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধর্মপুর ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভেলারায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালী ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধুবনী কঞ্চিবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নাচনী ঘগোয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজাম খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জামাদারের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটির চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামরায়ের পাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলকা মনিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বামনজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ্বাস হলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ভাটি বুড়াইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৈদ্যনাথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বুড়াইল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সাহাবাজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া নতুন জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়ের মধ্যে জিগাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোচাগাড়ী বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্ডিপুর পশ্চিমপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোচাগাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরকাপাসিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোচাগাড়ী ভূঁইয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, ভাটি কাপাসিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিণ সাতগিরি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাইনগর ফতেখাঁ বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বেলকা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিশ্বাস হলদিয়া ধনের ভিটা প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরখোর্দ্দা নামাপাড়া বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাচিয়া চরকেরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরপূর্ব লাল্যামার প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দক্ষিণ শাহরাজ (মতিন বাজার) বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।সরেজমিনে দেখা যায়, বোয়ালী ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ধর্মপুর ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শ্যামরায়ের পাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বামনজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বোয়ালী ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জিগাবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশকয়েকটি স্কুল ঘুরে মেরামতের কোনো দৃশ্য চোখে পড়েনি। ধর্মপুর ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, মেরামতের জন্য দুই লাখ টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। প্ল্যান ও আবেদন এখনো কিছুই করা হয়নি। বোয়ালি ১ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আনিছুর রহমান বলেন, স্কুলে দুই লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। টাকা বা চেক চাচ্ছি। কিন্তু দিচ্ছে না। না দিলে কীভাবে কাজ শুরু করবো? মাস্টারদের তো আর এক্সট্রা টাকা থাকে না যে সে টাকা দিয়ে কাজ করবো। চেক বা টাকা পেলেই কাজ শুরু করবো। শ্যামরায়ের পাঠ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য অর্থবছরের শেষ সময়ে বরাদ্দ এসেছে। চাহিদা অনুযায়ী রেজুলেশন করে অফিসে জমা দিয়েছি। ইঞ্জিনিয়ার অফিস থেকে ইস্টিমিট করে দিলেই আমরা শুরু করবো। বামনজল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোছা. দিনারা বেগম বলেন, টাকা না পেলে কাজ করবো কীভাবে? তবে গত বৃহস্পতিবার ইঞ্জিনিয়ার এসেছিলেন। আশা করছি, সপ্তাহখানেক পরে কাজ শুরু করতে পারবো। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির উপজেলা সভাপতি ও বোয়ালী ২ নম্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহেদুল ইসলাম  বলেন, কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ৩০ জুন। এখনো শুরুই করতে পারিনি। এটা চরম অনিয়ম হলেও বরাদ্দ টাকা এখনো ফেরত যায়নি। তবে রেজুলেশন করে চাহিদা জমা দিয়েছি গত ২ আগস্ট। চেক হাতে পেলেই আমরা কাজ শুরু করবো। এ বিষয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরে আর কোনো তথ্য দেননি। এমনকি মোবাইল ফোনে কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। গাইবান্ধা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুনর রশিদ এ বিষয়ে কোনো পরিষ্কার ধারণা না দিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ নূর-এ- আলম বলেন, বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। তারা কেন কাজ করেননি আর না করে থাকলে বরাদ্দ অর্থই বা তারা কী করেছে এ বিষয়ে শিক্ষা অফিসারের সঙ্গে কথা বলে জানতে চেয়েছিলাম। তিনি এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে চেয়েছেন। সুন্দরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আশরাফুল আলম সরকার লেবু প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ হয়নি উল্লেখ করে বলেন, ৩৩ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেরামতের জন্য শেষ সময়ে বরাদ্দ এসেছে। তাই উপজেলা শিক্ষা অফিসের মাদার অ্যাকাউন্টে টাকাটা উত্তোলন করে জমা রাখা হয়েছে। এরইমধ্যে স্কুলে ইস্টিমিট করে দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ হলো কি না সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসাররা তা দেখে চেক হস্তান্তর করবে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন