রবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, সৈয়দপুরে ঠিকাদারের ম্যানেজার পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সাথে

চাঁদা না দেয়ায় সন্ত্রাসী হামলা, সৈয়দপুরে ঠিকাদারের ম্যানেজার পাঞ্জা লড়ছে মৃত্যুর সাথে
  সৈয়দপুর (নীলফামারী) প্রতিনিধি:  সেচ ক্যানেল সংষ্কারে মাটি ভরাট কাজে চাঁদা চেয়ে না পাওয়ায় সশস্ত্র হামলা চালিয়েছে দূর্বৃত্তরা। এতে গুরুত্বর আহত হয়ে হাসপাতালের বিছানায় ৪ দিন ধরে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন ঠিকাদারের ম্যানেজার। এমন ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের পূর্ব বেলপুকুর দোয়ানি এলাকায়। এব্যাপারে ৮ জনের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে। এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে তিস্তা সেচ প্রকল্পের টি৮এস৭টি ক্যানেল অবস্থিত। প্রকল্পের উন্নয়ন কাজের অংশ হিসেবে ওই ক্যানেলের সংষ্কার কাজ শুরু হয়েছে। সেই কাজের জন্য দুইপাশের রাস্তা তৈরীর জন্য মাটি ভরাট চলছে। মূল ঠিকাদারের কাছ থেকে স্থানীয় সাতপাই পাড়ার মৃত দবির উদ্দীনের ছেলে যুবক আশিকুজ্জামান আশিক (এরশাদ) সাব কন্ট্রাক্টে মাটির কাজটি নিয়ে প্রায় একমাস ধরে নিয়মিত ভরাট করছেন।কিছুদিন থেকে পার্শবর্তী দেড়ানী এলাকার মাটি ব্যবসায়ী পাকা ও তার শালা ক্যানেলের পাড়ে বৃক্ষ রোপনকারী সমিতির সেক্রেটারি দোয়ানী এলাকার বাবুর নেতৃত্বে কয়েকজন চাঁদা দাবী করে আসছে। না দিলে কাজ করতে দেয়া হবেনা বলে হুমকি দিচ্ছে।
এমতাবস্থায় গত ৩০ মার্চ সকাল ১০ টায় মাটি নিয়ে ৬টি ট্রলি ক্যানেলে যাওয়ার পথে সাতপাইপাড়া ও ক্যানেলের মাঝামাঝি জায়গায় ওই চাঁদাবাজরা লাঠি, রড, ছোড়া নিয়ে সন্ত্রাসী কায়দায় ট্রলিগুলো আটকে দেয়। খবর পেয়ে সাব ঠিকাদারের ভাতিজা ও মাটি ভরাট কাজের ম্যানেজার মনজেনুর ইসলাম (২৮) বাধা দেয়ার কারণ জানতে চাইলে তারা বলে ২ লাখ টাকা না দিলে মাটি ফেলতে দেয়া হবেনা। তাদের এমন হুমকির প্রেক্ষিতে কোন চাঁদা দেয়া হবেনা বলামাত্রই দোয়ানীর মৃত আব্দুস করিমের ছেলে হামিদের হুকুমে তার ভাই শফিকুল ইসলাম হাতের লাঠি দিয়ে ট্রলি চালক পূর্ব বেলপুকুর ডাঙ্গীরপাড়ের আজিজুল ইসলামের ছেলে মিজানুর রহমানকে হাতে ও পায়ে বেধড়ক মারপিট করে।
এতে বাধা দিলে হামিদ তার হাতের ধারালো ছোরা দিয়ে মনজেনুরুরের মাথায় আঘাত করে। ফলে মাথার মাঝ বরাবর হাড় কেটে যায় এবং মাটিতে লুটে পড়ে। এসময় আব্দুল করিম মাষ্টারের ছেলে মাজাহারুল ইসলাম কালু (২৯) বুকের উপর বসে দুই হাত দিয়ে গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করে। তখন ট্রলি চালক মিজানুর এগিয়ে আসলে হামিদের অপর দুই ভাই রবিউল ইসলাম (৩৭) ও ইউনুস আলী (৪৫) এবং জিকরুল হকের ছেলে মনির হোসেন লাঠি ও রড দিয়ে এলোপাথাড়ি মার ডাং করতে থাকে। একইসাথে পূর্ব বেলপুকুর নদীরপাড়ের বাচ্চুর ছেলে আবু (২৮) রড দিয়ে মনজেনুরকে মারপিট করে। এই সুযোগে আহত মনজেনুরের প্যান্টের পকেটে থাকা গাড়ী মেরামতসহ তেল কেনা, ভ্যাকুট্যাক ও ট্রলি ভাড়া এবং মজুরদের পারিশ্রমিক বাবদ ৯০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয় কালুর ভাই আজাহারুল ইসলাম (৩২)। পরে আহতদের কান্না ও চিৎকারে এলাকাবাসী ও ঠিকাদারের লোকজন ছুটে আসলে হামলাকারীরা স্থান ত্যাগ করে। যাওয়ার সময় হামিদ ছোরা উচিয়ে হত্যার হুমকি দিতে থাকে।
পরে আগত লোকজন আহত মনজেনুর কে উদ্ধার করে সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করলে তার মাথার কাটা স্থানে ৭ টি সেলাই দেয়া হয়। কিন্তু অবস্থা গুরুত্বর হওয়ায় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। সেখানেও রোগীর অবস্থা শোচনীয়। প্রতিনিয়ত ছটফট করে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে। বমি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতি আরও বেগতিক হওয়ার আশংকা করছেন চিকিৎসকরা। আশিকুজ্জামান আশিক (এরশাদ) বলেন, এলাকার গরীব লোকজনকে কাজে নিয়ে আর্থিক সহযোগীতার উদ্দেশ্যই মূলতঃ কাজটা সাব ঠিকাদার হিসেবে নিয়েছি। কিন্তু কতিপয় দুষ্কৃতকারীর কারণে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পাকা নামের একজনের দূরভিসন্ধীর খপ্পরে পড়ে এলাকাবাসী কাজ না করে চাঁদাবাজীর মত অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, মাটি ব্যবসায়ী পাকা কাজটা না পেয়ে প্রতিহিংসা বশতঃ তার শালা বাবুকে দিয়ে দোয়ানী এলাকার কয়েকজনকে প্রলুব্ধ করে আমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। চাঁদা না দেয়ায় তারা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে এই সন্ত্রাসী হামলা করেছে। সরকারী কাজে বাধা দেয়ার মত অপরাধ করেও তারা দাপট দেখিয়ে বেড়াচেছ। এরশাদ বলেন, পাকা ও বাবু দূর্ধর্ষ প্রকৃতির লোক। তারা ইতোপূর্বেও এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। এমনকি ক্যানেল সংষ্কার কাজের মূল ঠিকাদার মেসার্স মাহিয়া এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার এবাদুল ও সাইট সুপারভাইজার জসিম উদ্দীনের সাথেও খারাপ আচরণ করেছে এবং কেমন করে কাজ করবে তা দেখে নিবে বলে হুমকি দিয়েছে। সেই ষড়যন্ত্র থেকেই এই সন্ত্রাসী কাজ করেছে। হামলায় আহত আমার ভাতিজা মনজেনুরের অবস্থা খুবই খারাপ। আমরা এই হত্যাচেষ্টার দৃষ্টান্ত মুলক বিচার চাই। সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনার দিন ৯৯৯ নাম্বারে খবর পেয়ে ফোর্স পাঠিয়ে আটক ট্রলি উদ্ধার করা হয়েছে। স্থানীয়দের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। উভয়পক্ষই অভিযোগ দিয়েছে। তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন