অভাবের সংসারে পড়ালেখা থেমে গেলেও থেমে যায়নি স্বপ্ন; বিমান তৈরি করে উড্ডয়ন করলেন এক যুবক
খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি: অভাবের সংসারে পড়ালেখা থেমে গেলেও লক্ষ্য পূরণে পিছপা হয়নি। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার প্রত্যন্ত ভান্ডারদাহ গ্রামে। এই গ্রামের নুরল মেম্বার পাড়ার ২৩ বছর বয়সী যুবক আলমগীর তৈরী করলেন এক বিমান। তাঁর তৈরী এই বিমান প্রায় এক কিলোমিটার দূরত্বে প্রায় আধাঘন্টা উড়তে পারে। যুবকের এই উদ্ভাবন দেখতে প্রতিদিন ভিড় করেন আশপাশের গ্রামের অনেক মানুষ। তাঁর এই কাজে সে এখন প্রশংসিত হচ্ছে। স্বপ্ন ছিল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার কিন্তু অভাবের সংসারে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিকেই থেমে যায় উপজেলার খামারপাড়া ইউনিয়নের ভান্ডারদাহ গ্রামের আব্দুল মজিদ ও জাহানারা বেগম দম্পতির ছোট ছেলে আলমগীর। বাড়ির কাজের পাশের পাশাপাশি চুক্তিভিত্তিক স্যালোমেশিন দিয়ে পানি দেওয়া ও বিভিন্ন কাজের সাথে সম্পৃক্ত এ যুবক। তিন ভাইয়ের মধ্যে ছোট এই যুবক প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরীর কাজে সময় ও অর্থ ব্যয় করেছেন। অনলাইন ও ইউটিউব থেকে ধারণা নিয়ে সময়ের সাথে তাঁর এই উদ্ভাবনী কার্যক্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাঁর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় ৩-৪ বছর ধরে সাথে বিভিন্ন মডেলের বিমান তৈরী করে উড্ডয়নের চেষ্টা করেছে। কিন্তু সেটি সফল হয়েছে ২০২৪ সালে। এর পূর্বে অনেক বিমান তৈরী করেছে ভেঙেছে আবার নতুন করে তৈরী করেছে। ছেচনা মডেলের বিমানটি গত ডিসেম্বর থেকে চূড়ান্তভাবে তৈরীর কাজ করে ফেব্রুয়ারী মাসের শুরুতে শেষ হয়। এরপরে বাড়ির পাশে খেলার মাঠে পরীক্ষামূলক ভাবে বিমানটি উড্ডয়ন করলে এলাকা জুড়ে হৈচৈ পড়ে যায়। দেখতে বাড়ছে ভিড়। প্রায় ১২ হাজার টাকা দিয়ে তৈরী এই ছোট বিমানের মূল বডি ককশিট দিয়ে তৈরি করেছেন আলমগীর। এছাড়া ট্রান্সমিটার, রিসিভার, লিপো ব্যাটারি, শক্তির জন্য ব্রাসলেস মোটর ও ছোট ফ্যান ও চাকা রয়েছে। একটি রিমোট বিমানটি আকাশে উড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ হয়। তাঁর বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই সে বিভিন্ন প্রকার যন্ত্র তৈরীর কাজের সাথে সম্পৃক্ত। তাঁর উপার্জিত অর্থ দিয়ে সে এসব তৈরী করে। এখন বিমান তৈরী করায় এলাকার সবাই দেখতে আসতেছে। সংশ্লিষ্টদের যদি সুদৃষ্টি ও সহযোগিতা পাওয়া যায় তাহলে আমার ছেলের স্বপ্ন অনেকটাই পূরণ হবে। শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারী) সরেজমিনে ঐ এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় খেলার মাঠে ছোট বিমান উড্ডয়ন করছেন আলমগীর। এসব উৎসুক জনতা ও স্থানীয়দের উপচে পড়া ভিড়। ঐ এলাকার সামসুল ইসলাম নামে এক যুবক বলেন, আলমগীরের এই কাজে আমরা এলাকাবাসী গর্বিত। অস্বচ্ছলতার কারণে সে তাঁর প্রতিভা বিকশিত করতে পারছে না তাই সবার সুদৃষ্টি প্রয়োজন। এই বিমান নির্মাতা আলমগীর ইসলাম বলেন, ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল বিমান তৈরীর সেটি আজ পূরণ হয়েছে। তবে আমার একটি ল্যাপটপ ও আর্থিক ভাবে সক্ষমতা থাকলে এই ছোট বিমানটি আরো উন্নত করা যেত। সেই সাথে সহায়তা পেলে আমার শৈশবের এই স্বপ্ন পূরণের ধাপ আরো এগিয়ে যেত। উদ্ভাবনী এই কাজের প্রশংসা করে খানসামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ তাজ উদ্দিন বলেন, এমন উদ্ভাবনী কার্যক্রম স্মার্ট বাংলাদেশ বির্মাণের অগ্রযাত্রায় একটা উদাহরণ। এই প্রযুক্তি বিকাশে প্রশাসন তাঁর পাশে থাকবে।