বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

আতর বিক্রি করে সংসার ও পড়াশোনা চালান অনার্সের ছাত্র সাইদুল

আতর বিক্রি করে সংসার ও পড়াশোনা চালান অনার্সের ছাত্র সাইদুল
ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি :
আতর বিক্রি করে বৃদ্ধ বাবা- মায়ের ভরনপোষণ ও নিজের পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছেন কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সাইদুল ইসলাম। অভাব- অনটন দমাতে পারেনি তাকে। অভাবের সাথে লড়াই করে বাবা মায়ের দেখভালের পাশাপাশি চালিয়ে যাচ্ছেন পড়াশোনা।
জানা গেছে, সাইদুলের বাড়ী কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের পুর্ব ফুলমতি গ্রামে। বাবা ফয়েজ উদ্দিন(৭০) পেশায় একজন দিনমজুর ছিলেন। মা সাহেরা বেগম (৬০) স্থানীয় চালকলে শ্রমিকের কাজ করতেন। তিন ভাই বোনের মধ্যে সাইদুল দ্বিতীয়। বড়ভাই স্ত্রী সন্তান নিয়ে আলাদা থাকেন। ছোট বোন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে।  ২০১৯ সালে বালারহাট আদর্শ স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে কুড়িগ্রাম সরকারী কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে অনার্সে ভর্তি হন সাইদুল। বাবা মায়ের আয়ে কোন রকমে পড়াশোনা চলছিল তার। কিন্তু ২০২১ সালে সাইদুল যখন দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র তখন হঠাৎ কিডনি রোগে আক্রান্ত হন বাবা ফয়েজ উদ্দিন। বাবার চিকিৎসায় সহায় সম্বল সব শেষ হয়ে যায়। অসুস্থ স্বামীর সেবা যত্নের কারনে চালকলের কাজও ছেড়ে দেন সাহেরা বেগম। অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধের উপক্রম হয় সাইদুলের।  সাইদুল জানান, একদিকে বৃদ্ধ বাবার চিকিৎসার খরচ, পরিবারের ভরণপোষণ অন্যদিকে নিজের ও ছোটবোনের পড়াশোনা। সবকিছুর চিন্তায় আমি হতবিহ্বল হয়ে পড়ি। তখন রবিউল নামের এক বড়ভাই আমাকে সাহায্য করেন। তিনি নিজের কলেজ এবং পাশ্ববর্তী বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের কাছে বিক্রির জন্য কিছু আতর কিনে দেন। সেই থেকে আজ প্রায় তিন বছর আতর বিক্রি করেই চলছে আমার বাবা- মায়ের ভরনপোষণ, ছোটবোন ও নিজের পড়াশোনা। বর্তমানে আমি অনার্স তৃতীয় বর্ষে পড়ছি। কলেজে ক্লাসের পর আতর টুপি তসবিহ নিয়ে বিক্রির জন্য বেরিয়ে পড়ি। কুড়িগ্রাম শহর, নিজ এলাকার বালারহাট বাজারসহ বিভিন্ন মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আতর, টুপি ও তসবিহ বিক্রি করি। এতে প্রায় প্রতিদিনই পাঁচ ছয়শ টাকা আয় হয়। সাইদুল আরও জানান, পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী না হলে বৃহৎ আকারে আতর ব্যবসা শুরু করবেন তিনি।  এ প্রসঙ্গে ফুলবাড়ী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম রব্বানী সরকার জানান, সাইদুল আতর বিক্রির উপার্জনে খুব কষ্ট করে পরিবারের ভরণপোষণ এবং নিজের পড়াশোনা চালাচ্ছে। তাকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন