বৃহস্পতিবার, ২রা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

ঘরের ভেতর কবর বানিয়ে বসবাস করছেন বৃদ্ধ দম্পতি

ঘরের ভেতর কবর বানিয়ে বসবাস করছেন বৃদ্ধ দম্পতি

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : মৃত্যুর আগেই কবর খুঁড়ে সেই কবরের পাশেই স্ত্রীকে নিয়ে জীবনযাপন করছেন শতবর্ষী ভাজন আলী। বাবার কবরের পাশে আরও দুটি কবর তৈরি করে সেখানেই ইবাদত বন্দেগী করে স্ত্রীর সঙ্গে দিন কাটান এই বৃদ্ধ। ঘটনাটি পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের উত্তর ভাটিয়াপাড়া গ্রামের। ভাজন আলী ওই গ্রামের মৃত ঈমান আলীর ছেলে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী এই বৃদ্ধের বয়স ১০১ বছর হলেও ভাজন আলীর দাবি, তার বয়স ১১৫ বছর। তার স্ত্রী অবিরনের বয়স ৭৬ বছর।  ভাজন আলী তার ঘরের মধ্যেই তৈরি করেছেন কবর ও মাজার। সরেজমিনে দেখা যায়, থাকার ঘরের পাশের একটি রুমে তিনটি কবর। প্রথমটি তার মৃত বাবা ঈমান আলীর কবর। জীবিতকালে ঈমান আলী ছেলে ভাজন আলীকে বলে গেছেন, মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে যেন ভাজন আলী ও তার স্ত্রী অবিরনের দাফন করা হয়। বাবার ইচ্ছা ও পীর সাহেবের নির্দেশে তিনি মাটি খনন করে কবর বাধাই করে রেখেছেন। মৃত্যুর পর সে নির্দেশনা অনুযায়ী সেই কবরে তাকে দাফন করা হবে। এই বৃদ্ধ-বৃদ্ধা পাশের রুমে বসে নামাজ-জিকিরের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করে চলেছেন। গত এক যুগ ধরে এভাবেই কবরের পাশে বসবাস করে আসায় তাদের দেখতে ছুটে আসছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।  জানা যায়, শতবর্ষী বৃদ্ধ ভাজন আলীর তিন ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। দেশ স্বাধীনের আগে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের ছাইফুদ্দীন এনায়েতপুরীর মুরিদ হন। এরপর পীর সাহেব তাকে ধর্ম পালন করে চলতে বলেন। মৃত্যুর আগে কবর তৈরি করে রাখলে মৃত্যুর ভয় তৈরি হবে। তাহলে ইবাদতে মনোযোগ আসবে, এই উদ্দেশ্যে পীরের আদেশেই মৃত্যুর আগে কবর নির্মাণ করে সেই কবরের পাশেই বসবাস শুরু করেন তিনি। ভাজন আলীর ছেলে আব্দুল জলিল বলেন, পীরের নির্দেশে বাবা-মা কবর তৈরি করে রেখেছেন। তারা মারা যাওয়ার পর তাদেরকে সেখানেই দাফন করা হবে। আর বাবা পাশের রুমে বসেই নামাজ, জিকিরসহ আমল করে সময় কাটাচ্ছেন। বাবা কবিরাজি করতেন। তার কাছে অনেক মানুষ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসেন। ছেলের বউ কুলসুম বেগম বলেন, আমার শ্বশুর পীরের তরিকা অনুযায়ী চলছেন। পীরের নির্দেশ ও দাদা শ্বশুরের অছিয়তে ঘর মধ্যে কবর খুঁড়ে রেখেছেন। মৃত্যুর পর সেখানেই তাদেরকে দাফন করা হবে। প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, কবর তৈরির বিষয়টি নিয়ে এলাকায় রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু আমাদের গ্রামের নয়, বিভিন্ন এলাকার মানুষও আসছে দেখার জন্য। ভাজন আলী ধার্মিক মানুষ। তিনি অনেক কিছু জানেন। ভাজন আলীর স্ত্রী অবিরনের (৭৬) সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি প্রথমত কথা বলতে চাইছিলেন না। পরে বলেন, আমরা ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের ছাইফুদ্দীন এনায়েতপুরীর কাছে বাইয়্যিত পড়ে মুরিদ হয়েছিলাম। আমার শ্বশুরের মৃত্যুর পর আমরা নিয়মিত যাই সেখানে। সেখানে বাবার নির্দেশ পেয়েই সে তরিকা অনুযায়ী আমল করছি। আর আমার শ্বশুর আমাকে বলে গেছেন, মা তোমার কবর আমার পাশে থাকবে তারপর আমার ছেলের কবর। শতবর্ষী ভাজন আলী বলেন, ৫০ বছর আগে ময়মনসিংহের শম্ভুগঞ্জের ছাইফুদ্দীন এনায়েতপুরীর কাছে বাইয়্যিত নিয়েছিলাম। বাবার কথামতো তার তরিকা অনুযায়ী জীবনযাপন করছি। বাবা মৃত্যুর আগে বলে গেছেন, তার মৃত্যুর পর আমাদের স্বামী-স্ত্রীর যার মৃত্যু হবে। তখন বাবার কবরের পাশেই যেন দাফন করা হয়। আর পীর বাবা বলেছিলেন, তোমরা মৃত্যুর আগেই কবর খুঁড়ে রাখ। যাতে করে প্রতিদিন কবর দেখে আমল করতে পার। কারণ মৃত্যু অনিবার্য। মরতে হবেই। মরলে তো কবরে যেতেই হবে। তাই মৃত্যুর আগেই কবর প্রস্তুত করে রেখেছি। চাকলাহাট ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম বলেন, তিনি আমার ইউনিয়নের বাসিন্দা ভাজন আলী। তিনি তরিকাপন্থী। তরিকা অনুযায়ী জীবনযাপন করেন। এর থেকে তার সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন