সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় প্রস্তুত হচ্ছে ১১০টি কোচ
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপন করতে নাড়ীর টানে বাড়ি ফিরবে লাখো মানুষ। নিয়মিত ট্রেনের সঙ্গে ঈদ উপলক্ষ্যে প্রয়োজন হবে বাড়তি দুই শতাধিক কোচ। বাড়তি কোচের জোগান দিতে নির্ধারিত সময়ের বাইরেও অতিরিক্ত সময় কাজ করে পুরাতন কোচ মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীরা। প্রয়োজনের মাত্র ২৫ শতাংশ জনবল, বাজেট স্বল্পতা, উপকরণ সরবরাহসহ নানা সমস্যা নিয়েও এবারের ঈদযাত্রায় ১১০টি কোচ সংযুক্ত করতে যাচ্ছে কারখানাটি। এর মধ্যে রয়েছে ৮০টি ব্রডগেজ ও ৩০টি মিটারগেজ কোচ। নানা সংকটের মধ্যেও চরম কর্মব্যস্ততায় সময় কাটছে কারখানাটির শ্রমিক-কর্মচারীদের। মেরামতকৃত এসব কোচ ঈদের বিশেষ ট্রেনগুলোতে সংযুক্ত করা হবে। রেলবহরে বাড়তি কোচগুলো যুক্ত হলে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাত্রাপথের ভোগান্তি কিছুটা হলেও লাঘব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জিওএইচ, উৎপাদন মেশিন শপ, ফাউন্ডি শপ, ক্যারেজ শপ, হুইল শপ, সিএমডব্লিউ শপ, ক্যারেজ শপ ও সিএইচআর শপ ঘুরে দেখা গেছে, ফাউন্ডি শপে গলিত লোহা ছাঁচে ঢেলে তৈরি হচ্ছে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ। এই যন্ত্রাংশগুলো চলে যাচ্ছে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন শপে। বড় বড় কামরাগুলো লাইনে যার কাঁধে ভর করে চলে সেই চাকা মেরামতের সিএমডব্লিউ শপে একেকজন ব্যস্ত একেক কাজে। কেউ চাকা পরিষ্কার করছে, কেউ ফিটিং করছেন। মানুষের কাজ সহজ করছে দৈত্যাকার সব মেশিন। কোথাও আবার মেরামত করা বগিকে নতুন করে রং লাগিয়ে চকচকে করে তোলা হচ্ছে। আবার কেউ ওয়েল্ডিং ও কোচের সিট মেরামতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। যেন দম ফেলার সময় নেই তাদের। যদিও এ কারখানায় জনবল ও উপকরণ সংকটসহ নানা সমস্যা রয়েছে, তবুও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিকতায় সব সময় কাজে গতি মেলে। জনবল সংকটের কারণে অতিরিক্ত সময়ও কাজ করতে হচ্ছে। তবুও মানুষের নিরাপদ ঈদযাত্রায় এই বাড়তি শ্রমেই আনন্দ খুঁজছেন তারা। কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত কাজের মজুরি না পাওয়া নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। মহসিন আলী নামে কারখানার এক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈদের আগে প্রতিবারই আমাদের কাজের চাপ বেশি থাকে। কিন্তু প্রতিবছর যেমন টিএলআর (অস্থায়ী শ্রমিক) থাকে এ বছর তেমন টিএলআর নাই। তাছাড়া আমাদের ওভারটাইম বন্ধ হয়ে গেছে যার কারনে সবার মন মানসিকতা তেমন একটা ভাল না। কারণ ওভারটাইম থাকলে অতিরিক্ত সময় দিয়ে গাড়িগুলো মেরামত করা যায়। রোজা মধ্যেও কষ্ট করে কাজ করছি। আর যে বাজার দর যা বেতন পাই সংসার চলে না। সরকারের কাছে দাবি আমাদের বেতন বাড়ানো হোক। আলী হোসেন সরকার নামে আরেক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোকবলের খুব সংকট এর মধ্যেও আমরা কাজ করে যাচ্ছি। ঈদ উপলক্ষ্যে প্রচুর কাজের চাপ। নির্ধারিত সময়ের বাইরেও আমরা কাজ করতেছি। জয়নাল হোসেন নামে আরেক শ্রমিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার চাকরির বয়স ২০ বছর চলছে। জনগণের সেবা দেওয়া আমাদের কর্তব্য। প্রতি ঈদে যেন ঘরমুখী মানুষ যাতে ঠিকমতো যাতায়ত করতে পারে সেই হিসেবে আমরা কাজ করি। কিন্তু বর্তমানে লোক সংখ্যা খুব কম। আর আমাদের ওভারটাইম নাই, আগে টিএলআর ছিল এবার তাও নাই। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় পুরোনো ট্রেনকে নতুন করার কাজ চলে আসছে ব্রিটিশ আমল থেকে। ব্রিটিশ সরকার ১৮৭০ সালে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাটি স্থাপন করে। সেই সময় সৈয়দপুর কারখানায় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ১০ হাজার। ধীরে ধীরে জনবল কমে যাওয়ার পরও এ কারখানায় প্রতিদিন একটি কোচ ও একটি ওয়াগন মেরামত করা হয়। এছাড়া রেলওয়ের নানা ধরনের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয় এখানে। কারখানাটির যান্ত্রিক শাখায় ২ হাজার ৮৫৯ জনবলের বিপরীতে কর্মরত রয়েছেন মাত্র ৮৬০ জন। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত কাজ চলছে কারখানার ২৯টি বিভাগে। ইতোমধ্যে প্রস্তুত হওয়া ৮৫টি বগি চলে গেছে পাকশী ও লালমনিরহাট রেলওয়ে বিভাগের কাছে। আরও ২৫টি মেরামতের কাজ চলছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের। কারখানার ক্যারেজ শপের ইনচার্জ মোমিনুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এবারেও আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় ১১০টি কোচ মেরামতের লক্ষ্যমাত্রা আমাদের ওপর দেওয়া আছে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। আমারদের শ্রমিক সংকট আছে। শ্রমিক নিয়োগ একটা চলমান প্রক্রিয়া। যে শ্রমিক আছে এগুলো দিয়ে কাজ এগিয়ে যাচ্ছি। কষ্ট হচ্ছে আবার ভালো লাগাও আছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক (ডিএস) সাদেকুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১১০টি কোচ মেরামতের কাজ আমরা হাতে নিয়েছি। এর মধ্যে ৮৫টি কোচ মেরামত শেষে রেলের ট্রাফিক বিভাগে হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকি কোচগুলো মেরামত করা হচ্ছে। কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের আন্তরিকতায় এসব কোচ মেরামত কাজ চলছে। সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় স্বাভাবিক সময় প্রতিমাসে গড়ে ৩০ কোচটি মেরামত করা হয়। কিন্তু সারাদেশে ঈদের আগে ও পরের পাঁচদিন বিশেষ ট্রেন চলাচল করবে। এছাড়াও নিয়মিত ট্রেনেও লাগানো হবে অতিরিক্ত কোচ। এ কারণে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় এবার ৫১ কর্মদিবসের মধ্যে ১১০টি যাত্রী কোচ ও ১৬টি পাওয়ার কোচ মেরামতের সিদ্ধান্ত হয়। ঈদযাত্রায় ১৬টি স্পেশাল ট্রেনে প্রতিদিন কমপক্ষে ২২ হাজার অতিরিক্ত মানুষ যাত্রা করতে পারবে।