শেষ মুহূর্তে রহনপুরের ঈদের বাজার জমজমাট
ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধাঃ আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ী উপজেলার প্রাণকেন্দ্র এস এম হাই স্কুল কাউসার মার্কেট,মা হাজরা মাকেট শেষ সময়ে জমে উঠেছে ঈদের বাজার।
দীর্ঘ এক মাস রোজা রাখা বা সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের এই দিনটিকে ধর্মীয় কর্তব্য পালনসহ খুব আনন্দের সাথে উদযাপন করে থাকে। সারা বছর মুসলমানরা অপেক্ষায় থাকে তাদের প্রাণের উৎসব ঈদুল ফিতরের জন্য। সকলের সাথে এই ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে দূর-দূরান্ত থেকে সকলেই শেকরের টানে চলে আসে তাদের নিজ বাড়িতে। সমস্ত ব্যস্ততা, ক্লান্তি আর বাকি দিনগুলোর কষ্টের কথা ভুলিয়ে দিতেই যেন উদয় হয় ঈদের দিন। ঈদকে উপলক্ষ করে শুরু হয় কেনাকাটা। এরই ধারাবাহিকতায় পলাশবাড়ী পৌর মার্কেটের বিভিন্ন কাপড়ের দোকান, জুতা স্যান্ডেলের দোকান, কসমেটিক্সের দোকান ও খাবারের দোকানে প্রচুর ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার জন্য অভিভাবকগণ প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি পলাশবাড়ী চৌধুরী মার্কেট,সহ পলাশবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন মার্কেটগুলোতে তাদের পছন্দের পণ্য কিনতে মানুষজন ভিড় করছে।
নতুন রুপে সাজিয়েছে নব দুটি মার্কেট ছৌধুরী ও মৌ কাপড়ের দোকানের মালিক মন্টু মার্কেট গার্মেন্টস ব্যবসায়ী মোহাম্মাদ জানান, সকাল থেকে গভীর রাত অবধি দোকান খুলে রাখতে হচ্ছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন ঈদের বাজার করতে হাইস্কুল মার্কেটে ছুটে আসছেন। এ ব্যবসায়ী বলেন, এবারের পণ্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় গ্রাহকদের সাথে বিক্রিত পণ্যের দাম নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে। এবারের ঈদে মেয়েদের নাইরা, আফগান, সারারা, গারারা, আলিয়াভাট ও গ্রাউন্ড পোশাকের যথেষ্ট কদর রয়েছে। ছেলেদের গেঞ্জি সেট, শার্ট সেট, পায়জামা পাঞ্জাবি, কাটুয়া ও জিন্স প্যান্ট বিক্রি হচ্ছে। তবে সব আশঙ্কা দূর করে ঈদ পর্যন্ত ভালো ব্যবসা করতে পারব বলে আমরা আশা করছি।
নতুন মার্কেটের পায়ে পায়ে সুজের মালিক মামুন বলেন, নতুন মার্কেট পুরাতন ব্যাবসা নতুন ভাবে চালু করেছে ক্রেতাদের আকর্ষণ ধরতে একটু সময় লাগবে। জান্নাত জুতার দেোাকানের স্বত্বাধিকারী জানান, এ দোকানে গ্রাহকদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যাই বেশি। গ্রাহকগণ তাদের পছন্দের জিনিস ক্রয় করতে সকাল থেকে রাত্রি ৯টা পর্যন্ত দোকানে ভিড় করছেন। জিনিসপত্রের দাম ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে। হারুন মার্কেটের বা লাবনী কসমেটিকস এর উত্তরাধিকারী রাসেদুল জানান, ঈদে পছন্দসই কসমেটিকস কেনার জন্য গ্রাহকগন ভিড় জমাচ্ছেন। কিন্তু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় বেচাকেনার সময় বেস হিমশিম খেতে হচ্ছে। দিনের প্রথম ভাগে বেচাকেনা বেশ হচ্ছে। তারপর আশা করছি শেষের দিকে ব্যবসা ভালোই হবে। পবিত্র রমজানে রোজাদারদের কাছে আকর্ষণীয় হলো ইফতার। বাহারি রঙের ইফতার সাজিয়ে শিল্পী ভোজনলায় মিতালীমআল রোমানসহ বিভিন্ন হোটেল গুলো ভালই ব্যবসা করছে।
এছাড়াও বিভিন্ন মোড়ে রাস্তার দুই ধারে ভ্রাম্যমান দোকান করে জিলাপি, পেয়াজু, বেগুণী, ছোলাসহ তরমুজ, আপেল, কমলা, পেয়ারা, কলা সহ বিভিন্ন ইফতার সামগ্রী বিক্রি করছে ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীগনরা। একেতো ঈদের বাজার তারপরে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে রোজাদারদের ইফতার সামগ্রিক ক্রয় সব মিলিয়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে রহনপুরের বিভিন্ন জায়গায়।
ঈদকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন টেইলার্সের দর্জিরা। আমাদের ভাষায় এখানে যাদেরকে খলিফা বলা হয়। খলিফাগন ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি, পায়জামা, মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, ম্যাক্সি সহ বিভিন্ন কাপড় প্রস্তুত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল ৮টা থেকে শুরু করে রাত ১টা পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন। ঈদের পূর্ব দিন পর্যন্ত তাদের এ ব্যস্ততা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে। গ্রীণ টেইলার্সের তারিগর জুয়েল জানান, তৈরি পোশাকের যুগেও গ্রাহকগণ সেলাই করা পোশাকের প্রতি তাদের আগ্রহ ও আস্থা রাখছেন। তাই দোকানের ১৬ জন কর্মচারীকে নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতে হচ্ছে। ঈদের সময় যেন গ্রাহকদের হাতে তাদের কাঙ্খিত পোশাকটি তুলে দিতে পারি এ আশায়।
ঈদের বাজারে ক্রেতাদের নির্বিঘ্নে যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য প্রতিটি মার্কেটের দুই প্রান্তে দুইজন নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মার্কেটে গভীর রাত অবধি ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
অপরদিকে ঈদকে সামনে রেখে মাংস এবং মসলার বাজার ঊর্ধ্বমুখী। খাসির মাংস কেজি প্রতি ১১০০-১২০০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা, দেশী মুরগি ৫০০ থেকে ৫২০ টাকা, সোনালি মুরগি ২৭০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সবজি ও মসলার বাজার ঊর্ধুমুখী হওয়ায় ক্রেতাদের কিনতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে।