রবিবার, ২৮শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, যার রেজি নং-৩৬)

লালমনিরহাটে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের পানিবন্দী হাজার হাজার পরিবার

লালমনিরহাটে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন তিস্তাপাড়ের পানিবন্দী হাজার হাজার পরিবার
মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট থেকে।।
শনিবার ১৫ জুলাই লালমনিরহাটের দেশের বৃহত্তর সেচ প্রকল্প তিস্তানদীর ডালিয়া ব্যারেজে পানি প্রবাহ বিপদসীমার নিচে থাকলেও দেখা দিয়েছে পানিবন্দী ১৫ হাজার পরিবারের দুর্ভোগ। সরকারি ভাবে পানি বন্দী পরিবারগুলোকে ৪৫০ টন চাউল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম।
শনিবার বিকাল ৩ টায় তিস্তানদীর ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় পানির সমতল ৫২.১২ মিটার
(বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৩ সে.মি নিচে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়  পানির সমতল ২৮.৬০ মিটার, (বিপদসীমা =২৮.৭৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১৫ সেঃমিঃ নিচে। ধরলা নদীর পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়, শিমুলবাড়ি পয়েন্টে পানি সমতল ৩০.৮৮ মিটার, (বিপদসীমা = ৩১.০৯ মিটার)
যা বিপদসীমার ২১ সেঃমিঃ  নিচে। পাটগ্রাম পয়েন্ট –
পানি সমতল  ৫৯.২৫০  মিটার, (বিপদসীমা =৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমার ১১০ সেঃমি নিচে।
লালমনিরহাটে গতকাল শুক্রবার  সকাল ০৮ টা হতে শনিবার  বিকাল ৩ টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাতঃ ৭৯ মিলিমিটার।
তিস্তা নদী পারের পানিবন্দী পরিবার গুলোর বেড়েছে দুর্ভোগ। সেই সাথে চরম বিপাকে পড়েছে গবাদি পশু-পাখি আর মৎস্য খামারিরাও। পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় তিস্তার তীরবর্তী ও লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে এবং নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে।
লালমনিরহাটের ৫ টি উপজেলায় বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ হাজার পরিবার।
পানিবন্দী পরিবার গুলোর মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। নদীপাড়ের অধিকাংশ পরিবারের সুপেয় পানির টিউবয়েল পানির নিচে ডুবে গেছে। মাচাং বানিয়ে এতে রান্না করছেন নারীরা। এক বেলা রান্না করে চালিয়ে নিচ্ছেন ২/৩ বেলা।
মাচাংয়ের ওপর চুলা বসিয়ে দিন রাতের রান্না এক সঙ্গে করছেন ফাতেমা নেছা (৫৫) জানান, বন্যা হলে কষ্ট বাড়ে। পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে মাচাংয়ে রান্না করতে হয়। পানিতে বেশিক্ষণ থাকলে নানান রোগ হয়। তবুও বাঁচতে হলে খাইতে হবে। দিন ও রাতের খাবার একবারে রান্না করতেছি। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট এখন পর্যন্ত পাইনি।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এলাকার পানি বন্দী রিয়াজুল ও বাদল জানান, পানি কিছুটা কমলেও বিপদে পড়েছি গৃহপালিত পশু নিয়ে। পানি কিছুটা নেমে গেলেও
সাপের ভয়ে আর ছোট বাচ্চারা পানিতে পড়ে যাওয়ার ভয়ে রাত জেগে থাকতে হচ্ছে।
লালমনিরহাট সদর উপজেলার বড়বাড়ি এলাকার সুকুমার ও রাজপুর এলাকার এন্তাজুল ইসলাম জানান, নদীপাড়ের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অনেক পুকুর ডুবে মাছ ভেসে গেছে। পুকুরের মাছ রক্ষায় চারদিকে নেট জাল দিয়ে রক্ষা করতে পারি নাই। পুকুরের মাছ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় রয়েছেন এ মৎস্য চাষি।
হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম‌্যান আবু বক্কর সিদ্দিক শ‌্যামল ও পাটিকাপাড়া ইউনিয়ন চেয়ারম‌্যান মজিবুল আলম সাহাদাত জানান, তাদের ইউনিয়নের অসংখ‌্য পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
লালমনিরহাট ত্রাণ শাখা জানান, তিস্তা নদীর পানি বন্দী পরিবার গুলোর জন্য সরকারি ভাবে ৪৫০ টন চাল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা বরাদ্ধ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আরো বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য উপরে চিঠি পাঠিয়েছি বরাদ্দ এলে তা বিতরণ করা হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্যা বলেন, তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জেলার ৫ উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জরুরি প্রয়োজনে সরকারি ভাবে ৪৫০ টন চাল ও নগদ ৭ লক্ষ টাকা পানিবন্ধি পরিবারের জন্য দেওয়া হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে প্রস্তুতি নেওয়া রয়েছে।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন