বুধবার, ২৭শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

লালমনিরহাটে সরকারী চাল বস্তা পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি

লালমনিরহাটে সরকারী চাল বস্তা পরিবর্তন করে বাজারে বিক্রি
লালমনিরহাট জেলা সংবাদদাতা
সরকারী চাল বস্তা পরিবর্তন করে গুটি স্বর্ণা নামে বাজারে বিক্রি করছেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার অসাধু কিছু ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, সরকার প্রতিবছর খাদ্য মন্ত্রনালয়ের অধিনে মিলারদের কাছ থেকে চাল ক্রয় করে থাকে। সরকার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্ধারীত ওজনের বস্তায় এসব চাল ক্রয় করে থাকে। ক্রয় করা এসব চাল নির্ধারীত সুফল ভোগীর মাঝে বিতরন ও বিক্রি করে আসছে। এর মধ্য খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির সুফল ভোগীদের মাঝে ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি মাসে কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিক্রি করে নির্ধারীত ডিলারের মাধ্যমে। একই ভাবে ভিজিডি কার্ডধারী সুফল ভোগীদের মাঝেও কার্ড প্রতি ৩০ কেজি হারে চাল বিনামুল্যে বিতরন করা হয়। তাই ওজন ঠিক রাখতে এবং এসব সুফল ভোগীদের মাঝে স্বচ্ছতার ভিত্তিতে চাল বিতরন ও বিক্রির জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তার উপজেলার চাহিদা অনুযায়ী ৩০ কেজি ওজনের চাল ক্রয় করেন। একই ভাবে ভিজিডি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসুচির জন্য তা সরবরাহ করে থাকে। এর বাহিরে আর কোন বস্তা ৩০ কেজি ওজনের কেনা হয় না। আর এসব চালের বস্তায় খাদ্য অধিদফতরের সীলমোহর দেয়া থাকে। যাতে খুব সহজে তা সরকারী সম্পদ বলে চিহ্নিত করা যায়। এসব চাল সুফল ভোগীদের কাছে বিক্রি না করে কৌশলে কালো বাজারে বিক্রি করে রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হচ্ছেন অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা। এ ক্ষেত্রে তারা খাদ্য অধিদফতরের সীলমোহর যুক্ত বস্তা পরিবর্তন করে অন্য চাল আড়তের সীলমোহরের বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে সরবরাহ করছে। বেসরকারী চাল আড়তগুলোর বাজারে সরবরাহ করা চাল প্রতি ছোট বস্তায় ২৫ কেজি ও বড় বস্তা ৫০ কেজি ওজনের। ৩০ কেজি ওজন শুধুমাত্র সরকারী চাল। এ কারনে চক্রটি সরকারী চালের ৩০ কেজির বস্তা পাল্টিয়ে ২৫ কেজি ওজনের নতুন বস্তায় প্যাকেট করে বাজারে দেদারছে বিক্রি করছে। এ ক্ষেত্রে একদিকে যেমন সরকারী সম্পদ কালোবাজারে বিক্রি করছে। একই ভাবে নিম্নমানের চালকে গুটি স্বর্ণাসহ বিভিন্ন নামে ভুয়া সীলমোহর দিয়ে ক্রেতাদের প্রতারীত করছে অসাধু ব্যবসায়ীর এ চক্রটি। সরেজমিনে কালীগঞ্জ উপজেলার কাশিরাম চৌধুরী মোড় এলাকার মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের গুদামে গিয়ে দেখা যায় শত শত সরকারী চালের বস্তা। তা পরিবর্তন করে ২৫ কেজি ওজনের দিনাজপুরের চিতা বাঘ মার্ক গুটি স্বর্ণা নামে প্যাকেট করা হচ্ছে। প্যাকেট শেষ হলে দ্রুতই তা চলে যাচ্ছে জেলার সকল বাজারে। খুবই নিরাপত্তার সাথে অনেকটা গোপনীয় ভাবেই করা হচ্ছে বস্তা পরিবর্তন ও সরবরাহের কাজ। গোপন ক্যামেরায় এ দৃশ্য ধারন করা হলেও ক্যামেরা ওপেন করা যায়নি। সাংবাদিকরা চলে যাওয়া মাত্রই কৌশলে সড়ানো হয় এসব চালের বস্তা গুলো।  স্থানীয় সাধারণ  একাধিক চাল ব্যবসায়ীর দাবি, খাদ্যবান্ধব কর্মসুচি ও ভিজিডি’র এসব চাল কম দামে ক্রয় করে বস্তা পরিবর্তন করে নিরাপদে অধিক মুল্যে বিক্রি করছে এ চক্রটি। এভাবে তারা দীর্ঘ দিন ধরে সরকারী সম্পদ তছরুপ করে জনগনের সাথে প্রতারনা করছে। উচ্চতর তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তারা। মেসার্স অলিয়ার ট্রেডার্সের মালিক অলিয়ার রহমান প্রথম দিকে ক্রেতার পরিচয়ে মুখ খুললেও পরে সাংবাদিক পরিচয়ে পুরো বিষয় গোপন করেন। প্রথম দিকে অলিয়ার রহমান বলেন, সরকারী এসব চাল কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন ভাইয়ের। আমি শুধু নই, বেশ কিছু গুদামে দেয়া আছে এসব চাল। প্রায় দুইশত মেঃটন চাল দিয়েছিল। আমরা শুধু বস্তা পরিবর্তন করে ৩০ কেজির স্থলে ২৫ কেজি করে পাঠিয়ে দেই। তিনি কোথায় কি ভাবে বিক্রি করেন আমি জানি না। তবে কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান কাঞ্চন বলেন, এসব চাল সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না। গুদাম মালিক আমার নাম বললে হবে? আমার চাল হিসেবে তার কাছে কি ডকুমেন্ট আছে দেখেন। কোন অডিও বা কোন কাগজপত্র দেখাতে পারে কি না। অলিয়ার কেন আমার নাম বলেছে তা আমি জানি না। এর সাথে তিনি জড়িত নন বলে জোর দাবি করেন তিনি।
বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন