ঘুরতে যাওয়া হলো না তাদের, পাশাপাশি কবরে শায়িত দুই বন্ধু
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ঠাকুরগাঁও সদরে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত আরেক বন্ধুর মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল তিনজনে। একই মোটরসাইকেলে থাকা গুরুতর আহত আরেক বন্ধু রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। নিহত ফিরোজ হোসেন (১৭) ঠাকুরগাঁও সদরের পূর্ব বেগুনবাড়ী গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে। ফিরোজ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিন দিন আইসিইউতে চিকিৎসা নেওয়ার পর রোববার (১০ মার্চ) ভোর ৪টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে গত শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকেলে মহাসড়কের ২৯ মাইল এলাকায় ঠাকুরগাঁও থেকে আসা একটি রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সের গাড়ির সঙ্গে ফিরোজদের মোটরসাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলে একই গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে রাসেল ইসলামসহ অ্যাম্বুলেন্সের যাত্রী সুমিত্রা রাণী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। মোটরসাইকেলের আরোহী বাকি দুইজন ফিরোজ ও মেহেদীকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে ঠাকুরগাঁও জেনারেল হাসপাতাল ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকার পরে রোববার ভোরে ফিরোজ হোসেন মারা যান। আরেক বন্ধু মেহেদী হাসানের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন ফয়সাল নামে তার এক স্বজন। স্বজন ও প্রতিবেশীরা জানান, একই গ্রামে জন্ম তিনজনের। বেড়ে ওঠাও এক সঙ্গে। দিন নেই, রাত নেই একজনের প্রয়োজনে অন্য দুজন ছুটে আসতেন। আরেকজনের অবস্থাও ভালো না। ফিরোজের মা ফিরোজা বেগম আহাজারী করে বলেন, বাড়ি থেকে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে কিছু টাকা নিয়েছিল । সেই যে গেল বাড়ি থেকে ফিরে এলো লাশ হয়ে। এ বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা বেলাল হোসেন। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে বাবা-মায়ের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে পরিবেশ। তাদের সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও। তিন দিন আগে ছেলেকে হারিয়ে এখনও কাঁদতে কাঁদতে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছেন রাসেলের মা লায়লা বেগম। স্বজন ও প্রতিবেশীরা তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। লায়লা বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘আমি এখন কী নিয়া বাঁচব। আমার মানিকরে, বুকের ধনরে আমার কাছে আইনা দাও।প্রতিবেশী আনোয়ার হোসেন বলেন, রোববার স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে ফিরোজ হোসেনকে পারিবারিক কবরস্থানে পাশাপাশি দুই বন্ধুকে চির নিদ্রায় শায়িত করা হয়। এ দুই বন্ধু আচার ব্যবহারে বড় ভালো ছিল। দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বোদা হাইওয়ে থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আশরাফুল ইসলাম বলেন, অ্যাম্বুলেন্সের চাকা ব্লাস্ট হলে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটরসাইকেলটিকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দিলে রাস্তার পাশে উল্টে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলেই দুজন মারা যান।