সিলেট আখালিয়ায় লাইভকারীরা চিহ্নিত ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ
শহীদুর রহমান জুয়েল ( সিলেট জেলা প্রতিনিধি) : সিলেট নগরের আখালিয়ায় পবিত্র কুরআন পুড়ানোর অভিযোগ এনে ফেইবুকে লাইাভকারীদের খোজছে পুলিশ।
ইতোমেধ্যে লাইভকারী অনেককে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকিদের চিহ্নিতকরণ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে অহেতুক ধর্মীয় উস্কানী দেওয়ার দায়ে তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সোমবার (৭ আগস্ট) ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের এমনটি জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ (এসএমপি) কমিশনার মো. ইলিয়াছ শরীফ (বিপিএম-বার, পিপিএম)।
সোমবার বেলা দেড়টার দিকে সিলেট মহানগরের আখালিয়া এলাকার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ পরিদর্শন করেন এসএমপি কমিশনার। এসময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
পরিদর্শন শেষে এসএমপি কমিশনার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন- পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখছে পুলিশ। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তারা ছাত্রজীবনে শিবিরের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন- কাল রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভ করে অনেকেই পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছিলেন। তাদের লাইভ দেখে জনতা আরও উত্তেজিত হয়েছেন। যারা ফায়দা হাসিলের উদ্দেশে এসব লাইভ করেছেন তাদের অনেককে আইডেন্টিফাই করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
রোববার (৬ আগস্ট) রাত ১১টার দিকে হঠাৎ উত্তাল হয়ে পড়ে সিলেট নগরের আখালিয়া এলাকা। আখালিয়ার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে পবিত্র কুরআন পুড়ানোর অভিযোগ তুলে তাদের দুজনকে রাত সাড়ে ১০টার দিকে মারধর করেন স্উত্তেজিত জনতা। তারা দুজন অনেকগুলো পবিত্র কুরআন পুড়িয়েছেন- এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে শত শত মানুষ উত্তেজিত হয়ে আইডিয়াল স্কুলের ফটকে জড়ো হয়ে তাদের পিটিয়ে ও পুড়িয়ে মারার হুমকি দিতে থাকেন।
খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের চেয়ারম্যান ও ওই শিক্ষককে প্রতিষ্ঠানটির একটি কক্ষে আটকে করে ক্ষুব্দ জনতার হাত থেকে রক্ষা করে। এসময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরানও উপস্থিত ছিলেন।
পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে রাত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের বিশেষ টিম সিআরটি এবং জালালাবাদ ও কোতোয়ালি থানার অতিরিক্ত পুলিশ এবং র্যাব-৯ ঘটনাস্থলে পৌঁছে।
এসময় উত্তেজিনত জনতার একাংশ সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দেয়।
রাত সাড়ে ১২টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাধ্য হয়ে ফাঁকা গুলি, সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে শুরু করে। পরে ধীরে ধীরে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন উত্তেজিত স্থানীয় জনতা। রাত ৩টার দিকে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আনে পুলিশ। এসময় পুলিশ স্কুলের চেয়ারম্যন ও শিক্ষক দুজনকে থানায় নিয়ে যায় ।
তারা হলেন- সিলেট মহানগরের আখালিয়ার ধানুহাটারপাড়স্থ আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ও চেয়ারম্যান নুরুর রহমান (৫০)। তিনি সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ উপজেলার বসন্তপুর গ্রামের মৃত ফজুর রহমানের ছেলে। বর্তমানে তিনি কোতোয়ালি থানাধীন আখালিয়া তপোবন এলাকার সরু মিয়ার বাসায় থাকেন।
অপরজন হলেন- ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট থানাধীন বাউলাপাড়া এলাকার ইদ্রিস আলীর ছেলে মাহবুব আলম (৪৫)। তিনি বর্তমানে কোতোয়ালি থানাধীন আখালিয়া ধানুহাটারপাড় এলাকায় বসবাস করছেন।
পুলিশ জানায়-রোববার বিকেলে সিলেটের জালালাবাদ থানাধীন ফতেহপুর মাদ্রাসার শিক্ষক ইসহাক আহমদ এক কার্টুন ভর্তি ও এক বস্তা ভর্তি কোরআন শরিফ দিয়ে যান প্রিন্সিপাল নুরুর রহমানের কাছে। এসময় তিন কার্টুনের কোরআন শরিফ ছাত্রদের মাঝে বিতরণ ও বস্তার কুরআন শরিফ পুড়িয়ে ফেলতে বলেন। এরই প্রেক্ষিতে রাত ১০টায় কুরআন শরিফ পুড়াতে যান নুরুর রহমান ও মাহবুব।
এদিকে, শুরু থেকে বেশ কিছু ফে-বু লাইভার পুরো ঘটনার লাইভ দিতে শুরু করেন এবং লাইভের মধ্যে তারা বেশ উস্কানিমূলক কথা বলতে থাকেন। এতে উপস্থিত জনতা আরও উত্তেজিত হয়ে পড়েন এবং পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠে। এতে শঙ্কিত হয়ে পড়েন সিলেটের সচেতন মানুষজন।
তাদের বক্তব্য- ফেসবুক লাইভাররা যদি এমন না করতেন তবে হয়তো পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত থাকতো। কিন্তু অসাংবাদিক ফেসবুক লাইভাররা ঘটনাকে উস্কে দিয়েছেন।
তবে বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা শুরু হতেই লাইভাররা রোববার রাতেই তাদের পেইজের লাইভ ডিলেট করে দেন। সোমবার দিনে অনলাইনে সে সব লাইভ খুঁজে পাওয়া যায়নি। বিষয়টি ধর্মীয় ও স্পর্শকাতর হওয়ায় পুলিশ গুরুত্বের সাথে দেখছে।
ওইদিন রাতে যারা লাইভ করে উস্কানী দিয়েছেন তাদের পেইজগুলোর কয়েকটি হচ্ছে- চ্যানেল এসএ’ , পিবিটিভি,শেওলা সুতারকান্দি টিভি, এমআই টেলিভিশন, নূর টিভি এফ ও ট্রাস্ট সিলেট-সহ অনেক।