কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানী সংকটের মুখে
সোহেল সানী: দেশের একমাত্র দিনাজপুরের পার্বতীপুরে কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানী সংকটের মুখে। কয়লার অভাবে বন্ধ হয়ে গেলে পুরো উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলা বিদ্যুৎহীন কিংবা লো ভোল্টেজের কবলে পড়বে বলে এমনটাই জানালেন বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বকর সিদ্দিক। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার উপর নির্ভর করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে থাকে। কয়লার উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনটি ইউনিটের মধ্যে ১নং ও ২নং ইউনিট দুটি বন্ধ রেখে ৩নং ইউনিট চালু রেখে গড়ে প্রতিদিন ১৭০-১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। খনির ভূ-গভের কাজের জন্য চলতি বছরের গত ২৮ ফেব্রুয়ারী বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির পুরাতন ১৩০৬ ফেইজ (কূপের) কয়লা উত্তোলন শেষ হয়। এখন নতুন ১১১৩ ফেউজে (কূপে) স্থানান্তর করতে তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মত সময় লাগতে পারে। বর্তমানে ১ লাখ ১১ হাজার মে,টন মজুতকৃত কয়লা দিয়ে মে মাঝামাঝি পর্যন্ত একটি ইউনিট সচল রাখার কথা রয়েছে। নতুন এই ফেইসটি জটিল। বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১নং ইউনিট যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে বন্ধ। বর্তমানে তাপবিদুৎ কেন্দ্রের ২নং ইউনিটি সংস্কার করার জন্য ওভার হোলিং এর কাজ চলছে। ১নং ইউনিট দিয়ে প্রতিদিন ৮৫ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ এবং ২নং ইউনিটি দিয়ে ৮০ মেগাওয়ার্ট উৎপাদন হতো। ৩য় ইউনিট ২৭৫ মেগাওয়াট থেকে প্রতিদিন ১৭০-১৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। বর্তমান বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২ হাজার মেট্রিক টন কয়লা ব্যবহার হচ্ছে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৫ হাজার ২০০ টন কয়লার প্রয়োজন হয়। তবে, তিনটি ইউনিট একই সঙ্গে চালানো হয় না। কয়লার সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে দুটি ইউনিট চালু রেখে ২৫০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দৈনিক কয়লার প্রয়োজন প্রায় সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার মেট্রিক টন।
বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সুত্রে জানা যায়, বর্তমানে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কোল ইয়ার্ডে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার মে.টন কয়লা মজুত আছে তা দিয়ে মে মাস পর্যন্ত চলবে। ফলে, কম কয়লায় কেন্দ্র চালিয়ে কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে দেশের উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় লোডশেডিং বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষ বলছে, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে নতুন কয়লা তোলা যাবে। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রথম দুটি ইউনিটে ২৫০ মেগাওয়াট ছিল, ২০১৭ সালে ২৭৫ মেগাওয়াটের তৃতীয় ইউনিট স্থাপনের পর এটি ৫২৫ মেগাওয়ার্ট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র হলেও এখন পর্যন্ত ৫২৫ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ কোন দিনেই উৎপাদন করতে সক্ষম হয়নি। ২৫০ মেগাওয়াটের স্থলে উৎপাদন হয়েছে ১০০ থেকে ১৭৫ মেগাওয়াট। ২৭৫ মেগাওয়াডের স্থলে উৎপাদন হয়েছে ১৭৫ থেকে ২০০ মেগাওয়াট।
বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী মো. সাইফুল ইসলাম সরকার জানান, গত বছরের ২৭ জুলাই খনি ভূ-গর্ভে ১৩০৬ নম্বর কোল ফেইস থেকে কয়লা উৎপাদন শুরু হয়েছিল। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই ফেইসে উত্তোলনযোগ্য কয়লার মজুদ শেষ হয়ে যাওয়ায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ক্রটিবিচ্যুতি ধরা পড়লে মেরামতের জন্য বাড়তি সময়ের প্রয়োজন হয়। আগামী মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আবারো কয়লা উৎপাদন করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি।
এ তিন ইউনিট থেকে বিদ্যুতের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরুর ব্যাপারে বড়পুকুরিয়া ৫২৫ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো: আবু বকর সিদ্দিক জানান, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির উৎপাদিত কয়লার উপর নির্ভশীল, কয়লা খনি থেকে সরবরাহকৃত কয়লার উপর ভিত্তি করে তাপবিদ্যুৎটি পরিচালিত হয়। বড়পুকুরিয়া খনিতে কয়লার উত্তোলন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটি ইউনিট চালু রেখে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ১৭০ থেকে ১৮০ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে দৈনিক কয়লা লাগছে প্রায় ২ হাজার টন। এই কয়লা দিয়ে আগামী মে মাস পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন চালু রাখতে হবে।