বুধবার, ১লা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ -muktinews24(তথ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক নিবন্ধনকৃত, রেজি নং-৩৬)

প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মাসুদের পরিবার

প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদে ঘুরে দাঁড়িয়েছে মাসুদের পরিবার

মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : ২০০৪ সালের আজকের এইদিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড বোমা ছোঁড়া হয়। সে সময় তাকে যারা রক্ষাকবচের মতো নিজের জীবনকে বাজি রেখে গ্রেনেডকে প্রতিহত করে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন বাঁচিয়েছিল তাদেরই একজন কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের হারুন-অর-রশিদের সন্তান মাহবুবুর রশিদ মাসুদ। নিজের জীবনের বিনিময়ে জননেত্রীর জীবন বাঁচানোর কারণে তিনি ইতিহাসের পাতায় নিজেকে স্থান করে নিয়েছেন। পিতা-মাতার চরম আনুগত সন্তান, দারিদ্রতার সঙ্গে যুদ্ধ করে বেড়ে ওঠা মাসুদ ছিলেন ছেলে বেলা থেকেই শান্তশিষ্ট ও পরোপকারী। যার ফলশ্রুতিতে পরবর্তীতে নিযুক্ত হন শেখ হাসিনার ৪০ জন ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীর মধ্যে গর্বিত একজন। জীবনের শেষ মুহুর্ত পর্যন্তও মাসুদ তার দায়িত্ব পালন করে গেছেন একনিষ্ঠভাবে। সেই আত্মত্যাগের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে। মাহবুবুর রশিদ মাসুদের বাবা হারুন অর রশিদ ও মা হাসিনা বেগম এখনও বেঁচে আছেন। শারীরিক নানা অসুস্থতা তাদের নিত্যসঙ্গী। আর মাহবুবুর রশিদের স্ত্রী ছেলেদের নিয়ে ঢাকায় থাকেন। বড় ছেলে আশিক বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং আর ছোট ছেলে রবিন ডাক্তারি পড়া শেষ করেছেন। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার জয়ন্তীহাজরা ইউনিয়নের ফুলবাড়ী গ্রামে নিজ ঘরের বিছানায় বসে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির কথা বলছিলেন বাবা হারুন অর রশিদ এবং মা হাসিনা বেগম। তারা জানান, তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। শরীরে নানা অসুখ। বয়সের ভারে হাসিনা বেগমের শারীরিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে চলেছে। আর বয়োবৃদ্ধ হারুন অর রশিদ প্রোস্টেট ক্যান্সার নিয়ে জীবন সংগ্রাম করে চলেছেন। বাড়ি থেকে খুব একটা বের হন না। কারও সামনেও আসেন না। প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকা আর বয়স্ক ভাতার টাকায় তাদের সংসার চলে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে তার দরিদ্র পরিবার। তবে বাবা-মায়ের খোঁজ না রাখায় ক্ষোভ রয়েছে নিজের সন্তানদের উপরও। ৮৬ বছরের হারুন অর রশীদ বলেন, আমার পাঁচ ছেলে ও পাঁচ মেয়ে। মাসুদ তো চলেই গেছে আমাদের ছেড়ে। এক ছেলে, এক মেয়ে ও এক নাতি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় সরকারি চাকুরি পেয়েছেন। মাহবুবের স্ত্রী শামীমা আক্তার আছমা তার দুই ছেলে আশিক ও রবিনকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং আর ছোট ছেলে ডাক্তারি পড়েছে শুনেছি। তবে তাদের সাথে যোগাযোগ নেই। তারাও খোঁজ রাখে না। এখন ছোট মেয়ে আবিদা কাছে থাকেন। সেই আমাদের দেখাশুনা করে। মেয়েকে একটা ভালো ঘরে বিয়ে দিতে পারলে আমার আর কিছু চাওয়ার নেই। স্মৃতিচারণ করে হারুন অর রশীদ জানান, অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়া করিয়েছেন। মাসুদকে বাড়ির পাশের ফুলবাড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করান তিনি। সেখান থেকে মাসুদ পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেন। কিন্তু মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির টাকা না থাকায় তাকে তার মামা আবদুর রব নিয়ে গিয়ে রাজবাড়ীর পাংশার বাহাদুরপুর শহীদ খবির উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি করে দেন। মামাবাড়ি থেকেই ১৯৮৪ সালে এসএসসি পাস করেন মাসুদ। তারপর সংসারের প্রয়োজনে বাধ্য হয়ে সেনাবাহিনীর মেজর পর্যায়ের এক কর্মকর্তার বাসায় ৬০০ টাকা বেতনে চাকরি নেয় মাহবুব। পরে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে নিয়োগ পান। মাসুদের চাকরির সুবাদেই দরিদ্র সংসারটি কিছুটা স্বাচ্ছন্দের মুখ দেখে। নির্দিষ্ট মেয়াদে চাকরি শেষে গ্রামে ফিরে ব্যবসার উদ্যোগও নিয়েছিলেন। ২০০০ সালে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ড্রাইভার হিসেবে চাকরিতে যোগ দেন মাসুদ। পরে বিশ্বস্ততা ও সততা অর্জন করায় অল্প সময়ের মধ্যে শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত দেহরক্ষীর দায়িত্ব পান মাহবুব। এ বছর ২১ আগস্টের আগে সাংবাদিকদের থেকে দূরে থাকছেন এই বৃদ্ধ দম্পতি। প্রতি বছর এই দিনটি (একুশে আগস্ট) এলে দোষীদের শাস্তির বিষয়ে নানা খবর শোনেন। মন খারাপ হয়। তবে মৃত্যুর আগে হলেও ছেলের হত্যাকারীদের বিচারের রায় বাস্তবায়ন দেখে যেতে চান এই দম্পতি। রোববার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়,বাড়ির পাশে ফুলবাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পেছনের কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন মাহবুবুর রশিদ মাসুদ। সরকারি খরচে নির্মিত কাশফুল সাদা পাথরখচিত সমাধিটি পরিষ্কার করা হয়েছে। ধানক্ষেত পার হয়ে মাসুদের সমাধিস্থলে যাওয়ার জন্য পাকা রাস্তা ও আলোর ব্যবস্থার দাবি থাকলেও দাবির বাস্তবায়ন হয়নি দীর্ঘদিনেও। প্রতিবছর ২১ আগস্টের আগে নিজ হাতে ছেলের সমাধিস্থলটি পরিষ্কার করতেন বাবা হারুন অর রশীদ। কিন্তু এ বছর শারিরীক অসুস্থতার কারণে সমাধিস্থল পরিষ্কার করতে না পারায় কষ্ট রয়েছে তার। ছেলের মৃত্যুবার্ষিকী কীভাবে পালন করবেন জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, মৃত্যুবার্ষিকীতে মেয়েরা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করেছে। কথা হয় ছোট মেয়ে আবেদা সুলতানার সাথে। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় তিনিও খোকসা উপজেলা পরিষদে চাকুরি করেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদের দু’হাত ভরে দিয়েছেন। তার কাছ আর কিছু চাওয়ার নেই। প্রতি বছর সামর্থ্যানুযায়ী ভাইয়ের মৃত্যুবার্ষিকী পালন করি।

বিভাগ
শেয়ার করুন

মতামত লিখুন