ফখরের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে রেকর্ড জয় পাকিস্তানের
মুক্তিনিউজ২৪ ডট কম ডেস্ক : অধিনায়ক টম ল্যাথামকে সঙ্গী করে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন প্রথম ওয়ানডের সেঞ্চুরিয়ান ড্যারিল মিচেল। তবে বৃথা গেছে কিউইদের হয়ে মিচেলের ১২৯ রানের সেই অনবদ্য ইনিংস। পাকিস্তানের মাটিতে নিজেদের দলীয় সর্বোচ্চ পুঁজি পেয়েও স্বাগতিকদের কাছে হারের স্বাদ পেতে হয়েছে নিউজিল্যান্ডের।
দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ফখর জামানের তাণ্ডবে শনিবার সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে রেকর্ড গড়ে ৭ উইকেটে জয় পেয়েছে পাকিস্তান। রাওয়ালপিন্ডিতে এদিন টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৩৩৬ রান তোলে কিউইরা। ৩৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ৩ উইকেট হারিয়ে ১০ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাবর আজমের দল। দারুণ এই জয়ে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল পাকিস্তান। ভাঙল ২০ বছরের পুরনো রেকর্ড। এর আগে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ২৯২ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল তারা, ২০০৩ সালে লাহোরে।
পাকিস্তানের চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে টানা তিন ওয়ানডে ইনিংসে সেঞ্চুরির কীর্তি গড়লেন ফখর। ১৪৪ বলে ৬ ছক্কা ও ১৭ চারে বিস্ফোরক এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান অপরাজিত থাকেন ১৮০ রানে। তার আগের দুটি সেঞ্চুরিও নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষেই।
১১৯ বলে তিন ছক্কা ও আট চারে ক্যারিয়ার সেরা ১২৯ রানের ইনিংসে নিউ জিল্যান্ডকে বড় সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন মিচেল। কিন্তু ফখরের দুর্দান্ত ইনিংসের সামনে সেটা যথেষ্ট হলো না।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ষষ্ঠ ওভারে ভাঙে নিউ জিল্যান্ডের উদ্বোধনী জুটি। হারিস রউফের বলে কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান উইল ইয়াং। দ্বিতীয় উইকেটে সফরকারীদের টানেন চ্যাড বাওয়েস ও মিচেল। প্রায় একই ছন্দে খেলে ফিফটি স্পর্শ করেন দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।
৫০ বলে পঞ্চাশ করে পরের বলেই বিদায় নেন বাওয়েস, ভাঙে ৮০ বল স্থায়ী ৮৬ রানের জুটি। ৫১ বলে ৭ চারে তিনি করেন ৫১।
এরপর নিজেদের সেরা জুটি পায় নিউ জিল্যান্ড। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ১৫৯ বলে মিচেল ও টম ল্যাথাম উপহার দেন ১৮৩ রানের জুটি। শুরুতে একটু সময় নন ল্যাথাম, ফিফটি স্পর্শ করেন ৬১ বলে। পরে তিনি বাড়ান রানের গতি।
১০২ বলে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি ছুঁয়ে রানের গতিতে দম দেন মিচেলও। তাদের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে শেষ ১১ ওভারে ১০৭ রান তোলে নিউ জিল্যান্ড।
টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি করা মিচেলকে ফিরিয়ে ১৮৩ রানের জুটি ভাঙেন নাসিম শাহ। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে ৯৮ রানে থামেন ল্যাথাম। তার ৮৫ বলের ইনিংস গড়া আট চার ও এক ছক্কায়।
খরুচে বোলিংয়ে ৭৮ রানে ৪ উইকেট নেন গতিময় পেসার রউফ। অন্য উইকেটটি নেন নাসিম।
রান তাড়ায় পাকিস্তানকে ভালো শুরু এনে দেন ইমাম-উল-হক ও ফখর। দশম ওভারে ইমামকে ফিরিয়ে ৬৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন ম্যাট হেনরি। দ্বিতীয় উইকেটে ১২২ বলে ১৩৫ রানের জুটিতে স্বাগতিকদের টানেন ফখর ও বাবর।
নিজের মতো করে খেলেন পাকিস্তান অধিনায়ক। অন্য প্রান্তে বোলারদের চাপে রাখেন ফখর। ৪৪ বলে পঞ্চাশ ছুঁয়ে তিনি ৮৩ বলে স্পর্শ করেন তিন অঙ্ক। এরপর রানের গতি বাড়ান আরও।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে বেশিদূর যেতে পারেননি বাবর। ইশ সোধির চমৎকার এক ডেলিভারিতে বিদায় নেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। ৬৬ বলে খেলা ৬৫ রানের ইনিংসটি গড়া ৫ চার ও ১ ছক্কায়। আব্দুল্লাহ শফিকের দ্রুত বিদায়ে ম্যাচে ফেরার আশা জাগায় নিউ জিল্যান্ড।
তবে পাল্টা আক্রমণে সফরকারীদের চেপে বসতে দেননি ফখর ও রিজওয়ান। ৮৬ বলে ১১৯ রানের জুটিতে ম্যাচ শেষ করে আসেন দুই জনে। গিয়েই চার মেরে শুরু করা রিজওয়ান ৬ চারে ৪১ বলে অপরাজিত থাকেন ৫৪ রানে।
আগামী বুধবার করাচিতে হবে তৃতীয় ওয়ানডে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৩৬/৫ (ইয়াং ১৯, বাওয়েস ৫১, মিচেল ১২৯, ল্যাথাম ৯৮, নিশাম ১৭ , চাপম্যান ১, নিকোলস ৬, নাসিম ১০-০-৪৯-১, ইহসানউল্লাহ ৮-০-৬০-০, রউফ ১০-০-৭৮-৪, নওয়াজ ৭-০-৪০-০, উসামা ১০-০-৬৬-০, সালমান ৫-০-৩৪-০)
পাকিস্তান: ৪৮.২ ওভারে ৩৩৭/৩ (ফখর ১৮০*, ইমাম ২৪, বাবর ৬৫, শফিক ৭, রিজওয়ান ৫৪*; হেনরি ৯.২-১-৫৯-১, শিপলি ১০-০-৫৮-১, নিশাম ৯-০-৬৪-০, সোধি ১০-০-৭৯-১, রবীন্দ্র ১০-০-৭৫-০)
ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: ফখর জামান