ঘোড়াঘাটে ডেঙ্গু আতঙ্ক, নিয়ন্ত্রণে নেই কার্যকর ব্যবস্থা
নোয়ার বাবু, ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধিঃ
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে প্রথমবারের মত নিজ এলাকা থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক নারী সহ তিন জন রোগী। এতে আতংক ছড়িয়েছে পুরো এলাকায়। হাসপাতালটিতে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সেবা নিয়েছেন ৩২ জন রোগী। প্রায় প্রতিদিনই টানা জ্বর ও শরীর ব্যথা সহ ডেঙ্গুর বিভিন্ন লক্ষণ নিয়ে রোগীরা হাসপাতালে আসছে। অপর দিকে তীব্র গরমে ডায়রিয়া সহ গরমবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ। ৩১ শয্যার হাসপাতালে দেখা দিয়েছে আসন সংকট। ডেঙ্গু রোগীর জন্য আলাদা কোন ইউনিট না থাকলেও ৩১ আসনের মধ্যে থেকে ১০টি আসন ডেঙ্গু রোগীর জন্য নির্ধারণ করে রেখেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে মশক নিধন ও ডেঙ্গু সচেতনতায় উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের কার্যক্ররী কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি এই উপজেলায়। তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় নাগরিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও সচেতন মহল। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসের ১৬ তারিখ থেকে এখনও পর্যন্ত হাসপাতালটিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩২ জন রোগী। তাদের মধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে ২৭ জন এবং বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ৫ জন রোগী। আক্রান্ত ৩২ জনের মধ্যে ৫ জন রোগী নিজ বাড়িতে থেকেই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। বাকি ২৭ জন দেশের বিভিন্ন জেলাতে কর্মের সুবাদে থাকা অবস্থায় আক্রান্ত হয়েছেন। এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধির পর সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী ডেঙ্গু সচেতনতা ও মশক নিধনে কার্যক্রম চলমান থাকলেও এই উপজেলায় তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শুরুর দিকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হলেও, তা এখন অদৃশ্য। অপর দিকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ এবং পৌরসভার পক্ষ থেকে তেমন কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। মশন নিধনে ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংস এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে তারা দুই একদিন কার্যক্রম চালালেও, পরে তা আর দেখা যায়নি। তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংস করতে এবং মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে চারটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার এবং পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলদেরকে জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। ঘোড়াঘাট পৌর নাগরিক কমিটির সভাপতি আনিছুর রহমান বলেন, ‘ আমাদের উপজেলায় ডেঙ্গু যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা হতাশাজনক। সেই তুলনায় প্রশাসনের জনসচেতনতা কার্যক্রম একেবারে নগন্য। ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংসেও তেমন কোন কার্যক্রম এই উপজেলায় চোখে পড়ছে না। এভাবে চলতে থাকলে ডেঙ্গু ভয়াবহ রোগ ধারণ করবে।’ ঘোড়াঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তৌহিদুল আনোয়ার বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের অধিকাংশ জনই সেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে। তবে এখন প্রায় প্রতিদিন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। অনেকে ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে ডেঙ্গু পরিক্ষার জন্য আসছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকলেও, আমরা সবোর্চ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে হাসপাতালে আসনের তুলনায় অতিরিক্ত রোগী আসায় আমরা হিমশিম খাচ্ছি।’ ঘোড়াঘাট উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা সচেতনতা কার্যক্রম ও ডেঙ্গুর আবাসস্থল ধ্বংস অভিযান চালিয়েছি। পাশাপাশি সচেতনতামূলক আলোচনা সভার মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদেরকে নিজ নিজ এলাকায় সচেতনতা বাড়ানোর জন্য জোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’