সুন্দরগঞ্জে যেভাবে খুন হয় বিকাশ ব্যবসায়ী
গাইবান্ধাঃ জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় অনলাইনে জুয়া খেলাকে কেন্দ্র করে জুয়ারি নীল বাবু চন্দ্র দাসের (২৩) হাতে খুন হয়েছেন স্থানীয় বিকাশ ব্যবসায়ী আউয়াল ইসলাম শুভ (২৩)। এ ঘটনার খুনি নীল বাবু চন্দ্র দাসকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই আসামির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর পলাতক আসামির বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা ও রক্তের দাগ সম্বলিত লুঙ্গি জব্দ করা হয়। বুধবার (২০ মার্চ) দুপুরে গাইবান্ধা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার কামাল হোসেন। গ্রেফতার আসামি নীল বাবু চন্দ্র দাস সুন্দরগঞ্জ উপজেলার দারগার খামার, (মাঝিপাড়া) গ্রামের নিদেন চন্দ্র দাসের ছেলে। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) সকাল ১০ টার দিকে গাজীপুর জেলার বাসন খানার সাদুর বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যার শিকার আউয়াল ইসলাম শুভ গাইবান্ধা সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বর্মতত গ্রামের হাফিজার রহমানের ছেলে। গত বুধবার (১৩ মার্চ) রাতে খুন হয় এই শুভ। সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার কামাল হোসেন বলেন, আসামি নীল বাবু চন্দ্র দাসকে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আউয়াল ইসলাম শুভ একজন ভ্রাম্যমান বিকাশ ব্যবসায়ী। সে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে বিকাশে লেনদেনের পাশাপাশি অনলাইন জুয়ারিদের টাকা লেনদেন করেন। নীল বাবু চন্দ্র দাস একজন অনলাইন জুয়ারি এবং মাছ ব্যবসায়ী। গত বুধবার (১৩ মার্চ) বিকেলে সুন্দরগঞ্জ থানাধীন পূর্ব ছাপড়হাটি গ্রামের ব্যাপারী পাড়ার মোড়ে লিটনের চায়ের দোকানে তার পূর্ব পরিচিত ইসমাইল হোসেনসহ অন্যান্য লোকদের সাথে আড্ডা দেয়। সেখানে ইসমাইল হোসেন এবং বুলেট মিয়া তার মোবাইল ফোন নিয়ে প্রতি গেম ১০০ টাকা করে কয়েক গেম লুডু বাজি খেলে। একসময় তার মোবাইল চার্জ শেষ হয়ে বন্ধ হয়। এদিন ইফতারির পর অনুমান সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে আউয়াল ইসলাম শুভ একটি অটোগাড়ি যোগে বাড়িতে রওনা হয়। এরই মধ্যে আসামমি নীল বাবু চন্দ্র দাস, ইসমাইল হোসেন, ভোলা মিয়া ওই গাড়িতে উঠে এবং পুনরায় ব্যাপারী পাড়ার মোড়ে নেমে যায়। আর আউয়াল ইসলাম শুভ অটোযোগে মাঠেরহাটে চলে যায়। তারা বেশ কিছু লোকজন ব্যাপারী পাড়ার মোড়ে লিটনের চায়ের দোকানে টিভিতে ক্রিকেট দেখতে থাকে। এরপর রাত ৯ টা ৫০ মিনিট সময়ে আউয়াল মাঠেরহাটের দিক থেকে আসতে থাকলে ইসমাইল হোসেন তাকে রাস্তায় থামায়। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ইসমাইল এবং ধৃত আসামি নীল বাবু চন্দ্র দাস টাকা দেওয়ার মিথ্যা অভিনয় করে কৌশলে আউয়ালকে সেখান থেকে অনুমান ৫০০ মিটার উত্তরে রাত প্রায় ১০ টা ৫মিনিটে ভূট্টা ও ধানের জমির মাঝখানে মালস নদীর ধারে পৌঁছালে ইসমাইল তার কোমড়ের পেছনে দা বের করে আউয়ালের মাথার নিচে-ঘাড়ের উপর স্বজোরে আঘাত করলে আউয়াল সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায়। নিস্তেজ হয়ে গেলে ও মরে নাই ভেবে ইসমাইল তার কাছে থাকা ধারালো দা দিয়ে আউয়ালের গলায় উপর্যুপরি কোপ দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরে আসামিরা পাশের ড্রেনের পানিতে দা ও নিজের হাত পা ধুয়ে নিজ নিজ বাড়ীর দিকে চলে যায়। এই সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইবনে মিজান, ইব্রাহিম হোসেন, ধ্রুব জ্যোতিময় গোপ ও সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মাহবুব আলম প্রমুখ।